২৪ ডিসেম্বর ২০১৭, রবিবার, ২:৩৪

আওয়ামী লীগ সভাপতির বাগানে ত্রাণের টিন ও সৌর বিদ্যুৎ

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেনের পেয়ারা বাগানে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারি ত্রাণের টিন ও সৌর বিদ্যুৎ (সোলার প্যানেল)।
ছবি সম্বলিত এমন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নাটোর জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই খবরে নড়েচড়ে বসেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সরকারি দলের উপজেলা সভাপতির বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগ এখন জেলার প্রধান খবর। সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে এসব অভিযোগ টিকবে না বলে উড়িয়ে দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আবুল হোসেন।

গত ১৫ ডিসেম্বর ফেসবুকে নজরুল খান নামের একটি আইডি থেকে দেয়া পোস্টে লেখা হয়, ‘গরীব সাধারণ মানুষের নামে বরাদ্দকৃত সরকারী ১০ বান্ডিল টিন মেরে খেয়েছে বাগাতিপাড়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন। জনগণের নামে ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি সোলার প্যানেল নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে আলোকিত করছেন। এই অন্যায়ের বিচার চাই। পোস্টে আরো উল্লেখ করা হয়, মৃত ১০ জন ব্যক্তির নাম স্বাক্ষর করে সরকারি ত্রাণের টিন কি নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে সাধারণ জনগণের হক মেরে খাওয়ার অপরাধের তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

এমন পোস্ট প্রকাশিত হবার পর সমালোচনার ঝড় শুরু হয় জেলা জুড়ে। উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ বিব্রত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উপজেলায় দলের শীর্ষপদে থেকে এমন অনিয়ম করা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
একটি সূত্র জানান, বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশ পাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে আবুল হোসেন ত্রাণের টিন এবং সোলার প্যানেল খুলে বাসায় নিয়ে গেছেন।

জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের নামে বরাদ্দ কৃত সরকারী সোলার প্যানেল নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে বাগান আলোকিত করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন। এছাড় দরিদ্র মানুষের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি ১০ বান্ডিল ত্রাণের টিন মেরে দিয়েছেন তিনি। যেখানে মৃত ১০ জন ব্যক্তির নামে স্বাক্ষর করিয়ে এ টিন আত্মসাত করা হয়েছে। সরকারি ত্রাণের টিন ও সোলার নিজের ব্যক্তিগত পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে সাধারণ জনগণের হক মেরে খাওয়ার অপরাধে তদন্ত ও বিচারের দাবিও জানিয়েছেন ওই ফেইসবুকে।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিটি উপজেলায় টিন ও নগদ সহায়তা বাবদ নগদ অর্থ আসে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত এ সহায়তার পরিমান এক বান্ডিল টিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা। এসব সহায়তার একটা বড় অংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সরকার দলীয় নেতাদের সুপারিশের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন ভুয়া নাম সুপারিশ করে টিন ও নগদ টাকা তুলে নিয়েছেন।


স্থানীয় বাসিন্দা ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সুকুমার ওরফে তিন কড়ি মুখার্জী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এঘটনায় এলাকায় দলের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। দলের
একজন শীর্ষপদের নেতা এমন দুর্নীতির সাথে জড়িত হওয়ায় এবং ফেসবুকে প্রচার হওয়ায় আমরা পথে চলাচল করতে পারছিনা। সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করছে। ঘটনাটি নিয়ে দলের নেতা কর্মীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ কারণে জেলা কমিটিসহ দলের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমন অভিযোগকে মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করে বলেছেন, এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ (বাগাতিপাড়া-লালপুর) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা করায় বর্তমান সাংসদ আবুল কালাম আজাদ ও তার সমর্থকরা এসব অপপ্রচার করছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে বলে শুনেছি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয় ফোরামে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেছেন, ত্রাণের ঢেউটিন ও সোলার প্যানেল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ব্যবহার করছেন বলে তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

 

http://www.bd-pratidin.com/country/2017/12/24/291569