গতকাল বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ইয়ালদিরিম টাইগার গেটে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী
২০ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:০৯

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিবিড়ভাবে কাজ করবে ঢাকা-আঙ্কারা

# বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর
যে কোনো সহযোগিতায় বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদিরিম। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান বিনালি ইয়ালদিরিম। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও তুরস্ক নিবিড়ভাবে কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন। এর আগে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন ইয়ালদিরিম। টাইগার গেটে তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। পরে চামেলী হলে দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।

এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে করবী হলে দুটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ঢাকায় সফররত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী।
এরপর বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। রাতে তার সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন ইয়ালদিরিম।
দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম দু’দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পারস্পরিক স্বার্থে একযোগে কাজ করা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন। দুই নেতা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোসহ দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং পরস্পরকে সমর্থন করার অঙ্গিকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সফররত তুর্কী প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মামুদ আলী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রমুখ।
তুরস্কের পক্ষে ছিলেন-উপ-প্রধানমন্ত্রী ও তুর্কি-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের কো-চেয়ার বেকির বোজাগ ও বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজতুর্ক প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের প্রতি তুরস্কের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগানকে ধন্যবাদ। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলোচনায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটসহ দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে এবং পরস্পরকে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, পর্যটন, যোগাযোগসহ প্রধান প্রধান খাতে নিজেদের সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

দু’দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও তুরস্ক একমত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আশা করি, আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে তুরস্ক।
শেখ হাসিনার পর বিবৃতি দেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ইয়ালদিরিমও। তিনি জানান, রোহিঙ্গা সংকটসহ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের সহযোগিতা থাকবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর: অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকা ও আঙ্কারা দু’টি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

দু’টি সমঝোতা স্মারকের একটি হচ্ছে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা প্রদান এবং অপরটি হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন এসএমই ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও কেওএসজিইবি’র (তুরস্কের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়ন সংস্থা) প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. গভাহির উজকার্ট।
অন্যদিকে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সহযোগিতা বিষয়ক স্মারকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের মহাপরিচালক সরদার আবুল কালাম ও তুরস্কের স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট সেবাহিট্টিন কোরকনাজ স্বাক্ষর করেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী: সকালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তিনি এ সময় পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং তার সফরের স্মারক হিসেবে একটি চারাগাছ রোপণ করেন। ফিরে আসার পথে তিনি শের-ই-বাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিট উদ্বোধন করেন।

এরপর তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি এ সময় জাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন এবং পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
তিন দিনের সফরে গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান বিনালি ইয়ালদিরিম। একটি বিশেষ বিমানযোগে তিনি ঢাকায় পৌঁছলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাকে হযরত শাহজালাল (রঃ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখার পাশাপাশি এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এ সফরে এসেছেন।
কক্সবাজার যাবেন আজ : আজ বুধবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। সকালে রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারের কুতুপালং যাবেন তিনি। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তিনি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। বেলা ২টার দিকে নিজস্ব বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেই দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে তার।

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তুরস্ক ১ লাখ ২৫ হাজার আবাসনের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চার রয়েছে তুরস্ক। এর আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের স্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগলু গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

http://www.dailysangram.com/post/311777