১১ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:৪৫

‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের পরিবারে বিপর্যয়

আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করা সামিহা জামানের শৈশব-কৈশোর কেটেছে দেশের বাইরে। বাবা মারুফ জামান ছিলেন কুয়েত ও কাতারের রাষ্ট্রদূত।

বাবার সঙ্গে বিদেশে থেকেছেন তিনি। তাই দেশের হালহকিকত কম জানেন। বড় বোন শবনম জামান বেলজিয়ামে পিএইচডি করছেন। আদরের সামিহাই ছিলেন বাবার অবসরজীবনের সঙ্গী। বোনকে দেখতে বেলজিয়াম গিয়েছিলেন সামিহা। কয়েক দিন পরই বাবার কাছে ফিরে আসেন। বাবা মারুফ জামান তাঁকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুজনের আর দেখা হলো না! গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন মারুফ জামান। বাবার কথা তুলতেই বিমর্ষ হয়ে যান সামিহা। কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি কী করব, কী বলব জানি না। কেউ আমাকে কিছু বলছে না। ’
গত ১০ অক্টোবর মতিঝিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হন একটি নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক উৎপল দাস। তাঁর সন্ধান দাবিতে সাংবাদিকরা কর্মসূচি পালন করছেন। উৎপলের পরিবার হন্যে হয়ে ঘুরছে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে। বাবা চিত্তরঞ্জন দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ ও র্যাব আশার কথা বললেও কোনো ফল পাচ্ছি না। একটা দিন যায় যেন একটা বছর। আমাদের চোখে ঘুম নেই। ’
সম্প্রতি একটি হত্যাকাণ্ডের পর তাতে জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযদ্ধে’। গত ১৪ নভেম্বর বনানীতে নিজ কার্যালয়ে খুন হন জনশক্তি ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সী। ৫ ডিসেম্বর হেলাল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত বলে দুজনের নাম প্রকাশ করে। দুদিন পর বাড্ডায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ওই দুজন। তারা হলো আল-আমিন ও সাদ্দাম হোসেন। তাদের পরিবার জোর গলায় দাবি করছে, নিহতরা হত্যায় জড়িত না। তাদের আগেই আটক করে বন্দুকযুদ্ধের করা বলা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছর ১০ মাসে সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান ও সাংবাদিক উৎপলের মতো নিখোঁজ হয়েছে ৫৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৯৫ জনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের ১০ মাসেই নিখোঁজ হয়েছে ৫০ জন, যাদের ৩৮ জনের খোঁজ মেলেনি। লাশ পাওয়া গেছে দুজনের। সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনায় আবার নিখোঁজ বা গুম উৎকণ্ঠা বেড়েছে। অন্যদিকে গত ১০ মাসে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৩৯ জন। চার বছরে এভাবে নিহত হয়েছে ৬৫৪ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলো আছে মানবিক বিপর্যয়ে। কোথাও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্বজনরা চরম অর্থকষ্টে আছে। স্বজনদের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেকে। অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা কুরে কুরে খাচ্ছে স্বজনদের। অন্যদিকে বিচার না পাওয়ার চাপা কষ্ঠ বয়ে বেড়াচ্ছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা।

এমন পরিস্থিতিতে ৬৯তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে আজ ১০ ডিসেম্বর। দেশের মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, একের পর এক মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধারের ঘটনাই দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় খারাপ দিক। ঘটছে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এসব ঘটনার সুরাহা না হওয়া চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় মানবাধিকার ও অপরাধের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনা তদন্তের সুপারিশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত এক বছরে দেশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের কিছু ঘটনার বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। তবে সাম্প্রতিক কিছু নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে সেসব বিষয় রাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, রাষ্ট্র জনগণের উদ্বেগ ও আতঙ্ক দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ’
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। বিশ্বকে উত্তপ্ত করে দিয়েছেন। সব মুসিলম দেশে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ’

এই আইনজীবী বলেন, দেশে খুন, গুম, অপহরণের ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব ক্ষেত্রে কোনো কোনোটির বিষয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে কিছুদিন পর বেরিয়ে আসছে। কারো মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে। কারো আবার দিনের পর দিন খোঁজ নেই।
জানা গেছে, ১৯৪৮ সাল থেকে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো—‘সমতা, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা। ’ বিশ্বের অপরাপর দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন নানা কর্মসূচি দিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সকাল সাড়ে ৮টায় খামারবাড়িসংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মোড় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হবে। এরপর সকাল ১০টায় সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হবে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। কাজী রিয়াজুল হক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, এ বছরের ১০ মাসে (৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) নিখোঁজ হয়েছে ৫০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তিনজনকে। ফেরত এসেছে সাতজন। বাকি ৩৮ জন এখনো নিখোঁজ। ২০১৬ সালে ৯৭ জন নিখোঁজ হওয়ার পর ১১ জনের লাশ পাওয়া যায়। ২৬ জনকে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আর তিনজন ফিরে এলেও নিখোঁজ রহস্য উন্মোচিত হয়নি। বাকি ৫৭ জন এখনো নিখোঁজ। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০১৫ সালে নিখোঁজ হন ৫৫ জন, যাঁদের মধ্যে আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ফিরে আসেন পাঁচজন। এখনো নিখোঁজ আছেন ৩৫ জন। ২০১৪ সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন ১০২ জন, যাঁদের ৮৮ জনই নিখোঁজ আছেন। ২০১৩ সালে নিখোঁজ হওয়া ৫৮ জনের মধ্যে ৫৩ জনেরই খোঁজ মেলেনি। ২০১২ সালে নিখোঁজ ৫৬ জনের মধ্যে ৩৪ জন; ২০১১ সালের ৫৯ জনের ৩৯ জন এবং ২০১০ সালে ৪৬ জনের মধ্যে ৩৩ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ২১ জন নিখোঁজ হন, যাঁদের ১৮ জনের খোঁজ মেলেনি। এই হিসাবে ১০ বছর ১০ মাসে ৫৪৪ জন নিখোঁজ হন, যাঁদের মধ্যে ৩৯৫ জনই গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবি, ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তাদের দলের ২০২ নেতাকর্মী গুম হয়েছেন।
আসকের হিসাব মতে, এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছে ১৩৯ জন। গত বছর এভাবে মারা গেছে ১৯৫ জন, ২০১৫ সালে ১৯২ জন এবং ২০১৪ সালে ১২৮ জন। তিন বছর ১০ মাসে মোট মারা গেছে ৫১৫ জন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে ৫২ জন গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন। এ সময়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৮৭ জন। হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৮৫৫টি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩০৬টি।
গত চার মাসে রাজধানী থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ১৩ জন। এঁদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কেউ কেউ ফিরে আসেন। তবে এখনো হদিস নেই আটজনের। তাঁদের একজন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার। গত ৭ নভেম্বর থেকে তাঁর খোঁজ নেই। গত ২৭ আগস্ট ধানমণ্ডি থেকে নিখোঁজ হন কানাডার মন্ট্রিয়লের ম্যাগসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ। ছেলের চিন্তায় তাঁর মা-বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাবা জামাল উদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, সন্তানকে ফিরে পেতে আশায় বুক বেঁধে আছেন তাঁরা। গত ২৬ আগস্ট পল্টন থেকে নিখোঁজ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানকে এখনো পাওয়া যায়নি।

সাংবাদিক উৎপল দাস নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, উৎপলের খোঁজ না মেলায় তাঁর মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
গত শুক্রবার বাড্ডায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সাদ্দামের বাবা হাসমত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বর সাদ্দামকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। এরপর মেরে ফেলে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না তাও জানলাম না আমরা। ’
ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায়ই ঘটছে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার মতো ঘটনা। গত এক বছরে জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত দেড় শতাধিক ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নাটোর পৌর যুবলীগের তিন নেতাকর্মীর লাশ একসঙ্গে উদ্ধার করা হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে। নাটোরের ঘটনার দুই দিন আগে তাঁরা নিখোঁজ হয়েছিলেন।
২০১০ সালের ২৪ মার্চ মানিক মিয়া এভিনিউয়ের টিঅ্যান্ডটি মাঠসংলগ্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজনকে এখনো পাওয়া যায়নি।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসার আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানী থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের। ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাসহ নেতাকর্মীরা কথা বললেও দরিদ্র আনসার আলীর পরিবারটি আছে আড়ালে। তার আত্মীয় সোহরাব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আনসারের সংসার চলছে এখন মানুষের সাহায্য-সহায়তায়।
পাঁচ বছর আগের কিছু ঘটনা বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে রাজধানী থেকে নিখোঁজ হয়েছিল ১৯ জন। তাদের কেউই পরে আর ফেরেনি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে তাদের স্বজনরা। এখনো প্রিয়জনের পথ চেয়ে বসে আছে তারা। নিখোঁজ মাজহারুল ইসলাম ওরফে রাসেলের বাবা আমিনুল হক বলেন, ‘আমার ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষে বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করে। এমন একটা ছেলেকে কেন আর পাওয়া যাবে না? রাষ্ট্র, প্রশাসন আমার এ প্রশ্নের জবাব দিল না! আমাদের প্রতিটা দিন কত কষ্টে যাচ্ছে, কেউ খোঁজ নেয় না। ’
বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকে ২০১০ সালের ২৫ জুন ফার্মগেট থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সাত বছরেও তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি। তাঁর স্ত্রী হাসিনা চৌধুরী বলেন, ‘সিআইডি পুলিশ অপহরণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তাকে (আলম) তুলে নেওয়া হয়নি। তাহলে কোথায়? আমরা কার কাছে বিচার চাইব?’ একইভাবে ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন মফিজ উদ্দিন। তাঁর বন্ধু খলিলুর রহমান বলেন, পানামা কম্পানিতে কাজ করতেন মফিজ। তিন ছেলে নিয়ে তাঁর স্ত্রী অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/12/10/575683