১১ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:৪২

দক্ষিণাঞ্চলে বেহাল দশা

সংস্কারের অভাবে যান চলাচলের অনুপযোগী : দুর্ভোগে চালক, যাত্রী ও পথচারী
সংস্কারের অভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় উপক্রম। ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, মংলা, খুলনা, ভোমরা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙা, নড়াইল, মাগুরার সাথে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা কাটছে না। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। ভুক্তভোগিদের মতে, মহাসড়কগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় যান চলাচলের প্রায় অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর ২০ কি.মি অংশের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের কারণে যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। গতকালের বৃষ্টিতে মহাসড়কজুড়ে কাদায় একাকার হয়ে গেছে। খরায় ধূলায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো মহাসড়ক। এতে নাকাল হচ্ছেন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। গত কয়েক মাস যাবত মহাসড়কের এসব গর্ত ইট ও বালু দিয়ে কোনোমতে জোড়াতালি দেওয়া হলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কগুলো সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ১৪ টি প্রকল্প পাশ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই প্রকল্পগুলো শেষ হওয়ার কথা। তবে সওজের একজন দায়িত্বশীল প্রকৌশলী দাবি করেছেন, মার্চের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সওজ সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে জাতীয় মহাসড়ক ৩৮৬ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৬৩৩ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক ১ হাজার ৭৩৫ কিলোমিটার মিলে মোট ২ হাজার ৭৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এসব মহাসড়কে ২০ থেকে ২৫টি দুরপাল্লার রুটে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। নির্মাণের পর থেকে মহাসড়কগুলোর বেশীরভাগেরই সংস্কার না হওয়ায় চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এবারের বর্ষায় মহাসড়কগুলোর উপর থেকে বিটুমিন উঠে গিয়ে প্রথমে খানাখন্দ ও পরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে এবার বর্ষা মৌসুমে ৭৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে মহাসড়কের ক্ষতি হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সর্বশেষ ঈদুল আযহার আগে মহাসড়কগুলো যানবাহন চলাচলের উপযোগি করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সেই সংস্কার কাজ মানসম্মত না হওয়ায় বেশিদিন টিকেনি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মহাসড়কগুলো আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ীর বসন্তপুর থেকে মাগুরার ওয়াপদা রোড পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার বেহাল। সড়কের এ অংশের বেশির ভাগ স্থানের পিচ ও কার্পেটিং উঠে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এই মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অন্য একটি সূত্র মতে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বহুদিন ধরেই খারাপ। সওজ সূত্র জানায়, তিন মাস ধরে এ সড়কে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত কাজ চলছে। স¤প্রতি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের কিছু স্থান সংস্কার করা হয়েছে। এরপরেও অনেক অংশ এখনও বেহাল।

এদিকে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর ২০ কি.মি অংশের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের কারণে যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। গতকালের বৃষ্টিতে কাদায় একাকার হয়ে গেছে। এ ছাড়া খরায় ধূলায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো মহাসড়ক। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস যাবত মহাসড়কের খানাখন্দ ও গর্ত ইট ও বালু দিয়ে কোনোমতে মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগি করে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন পর পর ইট ও বালু দিয়ে মহাসড়কের গর্ত মেরামত করা হলেও সামান্য বৃষ্টিতে সেগুলো উঠে পুরনো রূপে ফিরে আসে পুরো মহাসড়ক। সড়কের ঢালাই উঠে গেছে গত ৭/৮মাস আগে। মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা, ইল্লা, বার্থী, কটকস্থল, নীলখোলা, টরকী, গৌরনদী, আশোকাঠী, হ্যালিপ্যাড, কাছেমাবাদ, বেজহার, মাহিলাড়া, বাটাজোর, উজিরপুর উপজেলার এলাকায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বেহাল সড়কের কারণে প্রতিনিয়তই বিকল হচ্ছে যানবাহন। যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়েও গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগে দ্বিগুণ। গৌরনদী হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে ভারী যানবাহন চলাচল করার সময় প্রায়ই সড়ক দেবে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী সোহাগ পরিবহনের এক বাস চালক বলেন, ভাঙাচোরা সড়কের কারণে নষ্ট হচ্ছে বাসের যন্ত্রাংশ। দ্রুত মেরামত না করা হলে সড়কে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে যাবে। ঢাকা-ফরিদপুরের রুটের দুরপাল্লার বাস চালক ফজর আলী বলেন, ফরিদপুর থেকে কামারখালী পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো মেরামত করা না হলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলবে। ঢাকা-খুলনা রুটের আরেক বাস চালক শাহাবুদ্দিন জানান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুর অংশে স¤প্রতি কিছু কাজ হয়েছে, কিন্তু সড়কে কাজ শেষ হতে না হতেই তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেছে। এটা সরকারি অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/107808