৭ ডিসেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০৯

বিআইডিএসের বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে বক্তারা

ব্যাংকিং খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে খেলাপি ঋণ

অর্থনীতিতে আরও ৯ চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম খেলাপি ঋণ। এই ঋণ ব্যাংকিং খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যেভাবে ব্যাংকিং খাত সম্প্রসারিত হয়েছে, তার অর্ধেকও সক্ষমতা বাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অর্থনীতির অন্য চ্যালেঞ্জগুলো হল- কর্মসংস্থান তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বৈষম্য দূর করা, পাইপলাইনে জমে থাকা বৈদেশিক সহায়তার কার্যকর ব্যবহার, রফতানি বহুমুখীকরণ, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো ইত্যাদি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সতর্ক হতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক গৌরবের। কিন্তু এ অর্জন ধরে রাখতে হলে অধিকতর জ্ঞাননির্ভর প্রতিষ্ঠান, জ্ঞাননির্ভর প্রশাসন এবং জ্ঞাননির্ভর ব্যবসা পরিচালনা করা প্রয়োজন। এমন নয় যে, দেশে জ্ঞানী নেই। কিন্তু জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে রেগুলেটরি কমিশন অনেক আছে। কিন্তু সেগুলোর ক্ষমতা প্রয়োগের দক্ষতা বাড়ানো উচিত। যেমন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কিভাবে বাড়ানো হবে, কতটুকু বাড়ানো এসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একটা ভূমিকা রয়েছে। এ রকম সব প্রতিষ্ঠানের রেগুলেটরি ক্ষমতা প্রয়োগের যুক্তি কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, কর আরোপ যদি বিনিয়োগ ও সঞ্চয় নিরুসাহিত করে তাহলে জাতীয় আয় বাড়বে না। এজন্য কর ক্রুটিমুক্ত করা দরকার। তাছাড়া প্রবাসী আয় কিভাবে বিনিয়োগে আনা যায় সেটি ভাবতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এম সাইদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। এক্ষেত্রে যতটা খেলাপি ঋণ আছে বলে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে বেশি রয়েছে। এসব কুকর্ম ব্যাংকিং খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাছাড়া রাজস্ব আদায় অন্যান্য দেশের তুলনায় কম, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রেমিট্যান্স আসছে। মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে গেলে নীতিনির্ধারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে, কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন করতে হবে, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকত্মসহ সার্বিক প্রকত্ম বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়ানো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ওষুধ, চামড়া, আইসিটি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ট্যুরিজম, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মোটরসাইকেল শিত্মসহ বিভিন্ন শিত্মপণ্য রফতানি বাড়াতে নজর দিতে হবে।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও বৈষম্য বেড়েছে। এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। তাছাড়া রফতানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রণে শতভাগ সরকারি খাতে হওয়া উচিত। খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাছাড়া ব্যাংকিং খাত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা অর্ধেকও বাড়েনি। এক্ষেত্রে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের অনলাইনে কেনাকাটা বা ই-কমার্স করের আওতায় আসা উচিত। অনলাইনে বিত্তবানরা কেনাকাটা করেন। এ দেশে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা প্রতিবছর বলে, তারা ই-কমার্সকে করের বাইরে রাখতে পেরেছে। আমি খুব লজ্জা পাই। তবে তিনি প্রতিষ্ঠানটির নাম উল্লেখ করেননি। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সমালোচনা করে তিনি বলেন, রফতানি খাতে তারা ভালো করছে। কিন্তু সংগঠনটির সভাপতিরা দুটি বিষয় খুব গর্ব করে বলেন। একটি ভবন সরাতে না দেয়া, অন্যটি পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ না আসতে দেয়া। কিন্তু আমি মনে করি পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এলে বিপণনে সুবিধা হতো।

সভাপতির বক্তব্যে কেএএস মুরশিদ বলেন, বিআইডিএসএর গবেষণাগুলো নীতিনির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আমরা সে লক্ষ্যেই গবেষণা পরিচালনা করেছি। তিনি বলেন, কৃষি খাতকে কাজে লাগিয়ে শিত্মায়নের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে এখনও মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরিরও সুযোগ আছে। যেটি কাজে লাগাতে হবে।

 

https://www.jugantor.com/first-page/2017/12/07/177464