২৭ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:০২

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে শেষ হলো সমাপনী পরীক্ষা

গতকাল শেষ হয়েছে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। এবার সমাপনীতে প্রায় সবক’টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার চেয়েও বড় শঙ্কার কথা, সমাপনীতে অংশ নেয়া শিশু পরীক্ষার্থীরা নকলের হাতে খড়ি নিয়েছে। নকলের অভিযোগে গতকাল বহিষ্কৃত হয়েছে সাতজন। গতকাল শেষ দিনে ছিল গণিত বিষয়ের পরীক্ষা। এ ছাড়া আগের প্রতিদিনই নকলের অভিযোগে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। এর সর্বমোট সংখ্যা অর্ধশতাধিক।

এ পরীক্ষার শেষ দিনে অনুপস্থিত ছিল এক লাখ ৪৯ হাজার ৬২০ পরীক্ষার্থী। তারা সবাই সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধিত হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে যে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছেÑ তাতে দেখা যায়, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনীতে পরীক্ষার্থী ছিল বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬ জন শিশু শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৮ লাখ চার হাজার ৫০৯ জন এবং ইবতেদায়িতে দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৬৬ জন পরীার্থী।

তবে গত ১৯ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলা সমাপনী পরীক্ষায় উপস্থিত ছিল প্রাথমিকে ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ জন। ইবতেদায়িতে উপস্থিত ছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬২১ জন। প্রাথমিকে অনুপস্থিত ছিল বা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি এক লাখ ৯ হাজার ৬২০ জন। ইবতেদায়িতে অনুপস্থিত ছিল ৪০ হাজার। দুই ধারায় অনুপস্থিত এক লাখ ৪৯ হাজার ৬২০ জন। এ সংখ্যাটিই ঝরে পড়েছে বলে মনে করছেন প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিক স্তরেই প্রায় ওই দেড় লাখ শিক্ষার্থীর ঝরে পড়াকে আশঙ্কাজনক ও হতাশার বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
পরীক্ষায় তারা কেন অংশগ্রহণ থেকে বিরত রইল তার কোনো ব্যাখ্যা বা জবাব নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা দেশের প্রাাথমিক শিক্ষার নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনাকারী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই)।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার দেশে বড় দু’টি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের (হাওর এলাকায় বন্যা এবং স্বাভাবিক বন্যা) কারণে শিক্ষার্থী কমেছে। এবারের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিা সমাপনীতে পরীক্ষার্থী কমেছে গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রাথমিকে এক লাখ ২৬ হাজার ৬৪ জন এবং ইবতেদায়িতে আট হাজার ১৪৯ শিক্ষার্থী। এ তথ্য দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেছেন, প্রাথমিকপর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার মূল কারণ দারিদ্র্য বলে মনে করা হয়। কিন্তু সরকারের এত উদ্যোগের পরও বিপুল শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি বা ঝরে পড়া, যাই বলি না কেন, তা হতাশাজনক।
বিগত বছরের চেয়ে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবারের পরীক্ষার্থীর পরিসংখ্যানটি অনেকাংশেই সঠিক। ভর্তি ও উপবৃত্তি এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদানের ফলে বহু ধরনের অসঙ্গতি বা বাণিজ্য দূর হয়েছে। পরীক্ষার্থী কম বা বেশি হওয়া মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছাধীন নয়। ফলে প্রকৃত সংখ্যাটি পেতে আমাদের সমস্যা হয়নি।

তবে ভালো ও আশাব্যঞ্জক তথ্য হচ্ছে, এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় দুই লাখ বেশি। প্রাথমিকে ছাত্রী বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক ও গণশিা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছেÑ এটা আশাব্যঞ্জক।
দেশে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কর্মরত এনজিওগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতার প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সমাপনী পরীক্ষা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এত দিন যতটা উৎসব ও আনন্দময় ছিল, দিন যতই যাচ্ছে, তা ক্রমেই ফিকে হচ্ছে। কারণ, সমাপনী পরীক্ষা এখন তাদের মধ্যে বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ সমাপনী ঘিরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার নোট গাইড এবং এক শ্রেণীর শিক্ষকের মধ্যে ভয়ানক বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। এগুলো সামাল দেয়া রাজধানীর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও উচ্চবিত্তের জন্য সম্ভব হলেও, নি¤œবিত্ত ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য এটি এখন বোঝা। এ কারণেই চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী পৌঁছানোর পর চূড়ান্ত পরীক্ষায় তারা অংশ নিতে পারছে না। ফলে ঝরে পড়ছে অনেকে। এ ছাড়াও এবার সমাপনীতে শিক্ষার্থী কমেছে বলে ধারণা হচ্ছে, দেশের দু’টি প্রাকৃতিক ও একটি মানবিক বিপর্যয়ের কারণে শিক্ষার্থী কমেছে।

রাশেদা কে চৌধুরী আরো বলেন, সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক সমাপনী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। এ ধরনের সমাপনী পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শিক্ষানীতিতেও এ ধরনের পরীক্ষার কোনো নির্দেশনা নেই।
তিনি আরো বলেন, সমাপনী নিয়ে এখনই যথেষ্ট ও কাক্সিত সংখ্যায় শিক্ষার্থী ভর্তি করানো গেলেও চূড়ান্ত পর্বে অনেকে যেতে পারছে না, দারিদ্র্যতার কারণে। এটিই সত্য। এ নিয়ে লুকোচুরির কিছু নেই।


http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/271846