২৭ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:০১

অনেক প্রশ্নের জবাব মিলছে না

রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সমঝোতায় অনেক প্রশ্নের জবাব মিলছে না। গত শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর কাছে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর জবাব দেননি। উল্টো বিরক্তবোধ করেন। তার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল ১৯৯২ সালের আদলে সমঝোতা চুক্তির দুর্বলতা নিয়ে। প্রশ্ন রয়েছে এর কার্যকারিতা নিয়েও। চুক্তির আগে একাধিকবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছিলেন ১৯৯২ সালের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান সময় এক নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৯২ সালের চুক্তির আদালেই চুক্তি করা হলো। এই সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা থাকবে কি-না, গণহত্যার পুনরাবৃত্তির হবে কি-না। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের সত্যিকার অর্থে নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। নয়তো এটা একেবারেই ব্যর্থ একটি সমঝোতা হবে। আর সমঝোতা মোতাবেক খুব বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব না।

৯২ সালের সমঝোতার দুর্বল দিক হলো সময়সীমা নির্দিষ্ট করা ছিল না। এ কারণে ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ পর্যন্তু অর্থাৎ ১৩ বছরে ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফিরে গেছে। শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সমঝোতার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে মিয়ানমার ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুসরণ করতে চায়। সেভাবেই জিনিসটি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তিন দিনব্যাপী রাষ্ট্রদূত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সক্রিয় থাকতে হবে। রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের প্রয়োজন আছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। এরপরও প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে আমরা এই সমস্যাটা সমাধান করতে চাই।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৯২ সালের সমঝোতা চুক্তি মানা হলে মাত্র ১৪ হাজার রোহিঙ্গা দেশে ফিরে যেতে পারবে। অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অবস্থান। তারা বলছেন, এই চুক্তির করার কথা বলে মিয়ানমার চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে। তারা মূলত এই সমঝোতার চুক্তির কাথা বলে মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া বর্বর গণহত্যা থেকে বিশ্বের নজর অন্যদিকে নিতে চাইছে।

৯২ সালের দুর্বলতা নিয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে শহীদুল হক বলেন, চুক্তির বড় সমস্যা হলো- এর কোনও নির্দিষ্ট সময় নাই। অর্থাৎ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নিলেও অভিযোগের কোনও সুযোগ ছিল না। ১৯৯২ সালের সমঝোতাকে মেনে নেওয়া হলে যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেমন পুরো নিয়ন্ত্রণ মিয়ানমারের হাতে থাকবে, তেমনই সময়সীমা নির্দিষ্ট না থাকায় তারা এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমরা খুব হতাশ হয়েছি। ওই সমঝোতার মূল বিষয়গুলো আমরা জানি না, জনসম্মুখেও আনা হয়নি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা থাকবে কি-না, গণহত্যার পুনরাবৃত্তির হবে কিনা, এ বিষয়গুলো এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই জানি না। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের সত্যিকার অর্থে নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নয়তো এটা একেবারেই ব্যর্থ একটি সমঝোতা হবে।

মূলত মিয়ানমার সরকার তাদের ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া শুরু করে ২০১৪ সালে। আইন অনুযায়ী তাদের অস্থায়ীভাবে বসবাসের কার্ড দেওয়া হয়। তাতে বাঙ্গালী শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে সেই কার্ড বাতিল করে। ফলে রোহিঙ্গারা ভোটের অধিকার হারায়। সেই নির্বাচনে অংসান সুচি নির্বাচিত হলে আবার যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যূ শুরু করে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরতের বিষয়ে গত ২৩ নবেম্বর (বৃহস্পতিবার) মিয়ানমারে স্টেট কাউন্সিলরের অফিসে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া অ্যারেঞ্জমেন্ট বা সম্মতিপত্রে দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলা হয়েছে। সাত পাতার এই কূটনৈতিক নোটের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের ফেরত নেওয়ার কথা বলেছে মিয়ানমার। এতে রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্তে বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করেছে মিয়ানমার। বলা হয়েছে, কূটনৈতিক এই দলিল স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে এবং মাঠপর্যায়ে প্রত্যাবাসনের শর্তগুলো চূড়ান্তু করা হবে। স্বাক্ষরিত অ্যারেঞ্জমেন্টে বলা হয়েছে, শুধু স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী প্রত্যাবাসনকারীরা এই সমঝোতার আওতাধীন। প্রত্যাবাসনকারীদের নাগরিকত্ব পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবে। ১৯৯২ পরবর্তী প্রত্যাবাসন চুক্তি এক্ষেত্রে যাচাই প্রক্রিয়ার আদর্শ হিসেবে ধরা হবে। প্রত্যাবাসনকারীদের প্রাথমিকভাবে সীমিত সময়ের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে রাখা হবে। দুই দেশই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহায়তা নিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ এখনই ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে কাজ করবে। মিয়ানমার প্রয়োজন অনুসারে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করবে। সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কাছে থাকা রোহিঙ্গাদের সব ধরনের তথ্য মিয়ানমারকে দেওয়া হবে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ বন্ধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উভয় দেশই কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ওপর মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয় এমন কোনো কাজ করবে না। সেই সঙ্গে উভয় দেশ সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, অস্ত্র ও মাদক পাচারের মতো অপরাধ কর্মকা-কে নিরুৎসাহিত করবে।

রোহিঙ্গাদের যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে :
স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্রে রোহিঙ্গাদের যেসব শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে অবশ্যই মিয়ানমারের অধিবাসী হতে হবে, স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে আগ্রহী হতে হবে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অথবা এতিমদের বাংলাদেশের কোর্ট কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে, সীমান্তের এপারে জন্ম নেওয়াদের পিতা-মাতা উভয়কেই মিয়ানমারের অধিবাসী হতে হবে। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম নেওয়া (রাখাইনে ধর্ষণের কারণে) শিশুদের বাংলাদেশের আদালতের মাধ্যমে সার্টিফায়িড করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের বর্তমান বা মেয়াদ উত্তীর্ণ নাগরিকত্ব কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, অস্থায়ী পরিচয়পত্র (হোয়াইট কার্ড) অথবা মিয়ানমার সরকারের দেওয়া যে কোনো ধরনের কার্ড দেখাতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে মিয়ানমারের বাসস্থানের ঠিকানা, বাড়ি বা ব্যবসা কেন্দ্রের মালিকানার কাগজ, বিদ্যালয়ের উপস্থিতিপত্র বা সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোনো কিছু প্রদর্শন করতে হবে। ইউএনএইচসিআরের দেওয়া শরণার্থী কার্ড থাকা রোহিঙ্গাদেরও একই ধরনের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ১৯৯২ সালের পর অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব কার্ড, নিবন্ধন কার্ড, ইত্যাদি দেয়া হয়নি; অনেকের কাছ থেকে এসব কেড়ে নেয়া হয়েছে, অনেকে আনতে পারেনি, তাদের কি হবে; সে সম্পর্কে চুক্তিতে কিছুই বলা হয়নি। এছাড়া কতজনকে ফেরত নেওয়া হবে এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকবে না।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ১৯৯২ সালের আদলে চুক্তি নিয়ে। বাংলাদেশের আহ্বানে ১৯৯২ সালে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলেও পরে আর সেই প্রক্রিয়া এগোয়নি। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালের আগে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনার কথা নতুন সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে বলে জানানো হয় সাংবাদিক সম্মেলনে। এবার গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো দমন-পীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আলোচনায় সম্মত হয় মিয়ানমার। বাংলাদেশ এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করে নতুন চুক্তির কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালের চুক্তির অনুসরণেই সম্মতিপত্র হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের ফেরানোয় সাফল্য নিয়ে সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলের।

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দলে দলে প্রথমবার পালিয়ে আসে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। তখন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর অধীনে ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ফিরে গিয়েছিল। ১৯৯২ সালে আবার দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা তখনও ক্ষমতায় বিএনপি। ওই সময় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আরেকটি সমঝোতা হয়। এর অধীনে ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফিরে যায় মিয়ানমারে। ২০১২ সালে রাখাইনে জাতিগত দাঙ্গা এবং ২০১৬’র অক্টোবর ও গত আগস্টে মিয়ানমারের পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনার জের ধরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে ২০১৪ সালে আমরা দুই দেশের যাচাইকৃত দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে বললে তারা (মিয়ানমার সরকার) সম্মত হয়। কিন্তু গত তিন বছরেও এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে শহীদুল হক বলেন, ১৯৭৮ সালের চুক্তিতে বলা ছিল ছয় মাসের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া হবে। পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ফিরে গিয়েছিল। ১৯৯২ সালে আবারও দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। ওই সময় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আরেকটি সমঝোতা হয়। তবে এতে সময়সীমা নির্দিষ্ট করা ছিল না। এ কারণে ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ পর্যন্তু অর্থাৎ ১৩ বছরে ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফিরে গেছে।

সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে বলেন, এখনকার চুক্তিতে সময় নির্দিষ্ট করা না থাকলেও ১৯৯২ সালের গতিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে কতদিন লাগবে তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়।
১৯৯২ চুক্তিতে যা আছে :
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যাচাই প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের যেসব বাসিন্দার উপস্থিতির বিষয়টি শরণার্থী নিবন্ধন কার্ড দ্বারা বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দিতে পারবে, তাদেরই ফেরত নেবে মিয়ানমার। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া তালিকা যাচাই শেষে যাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব কার্ড ও এ সম্পর্কিত মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নথি এবং যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে ঠিকানা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবে, তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, একজন রোহিঙ্গা ওই সময় তার ঠিকানা বলতে পারলে সে যাচাই-বাছাইয়ের যোগ্য বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা এর কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না। অর্থাৎ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নিলেও অভিযোগের কোনও সুযোগ ছিল না। মিয়ানমারে বাংলাদেশের প্রাক্তন ডিফেন্স অ্যাটাশে আরও বলেন, ১৯৯২ সালের সমঝোতাকে মেনে নেওয়া হলে যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেমন পুরো নিয়ন্ত্রণ মিয়ানমারের হাতে থাকবে, তেমনই সময়সীমা নির্দিষ্ট না থাকায় তারা এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হবে।

১৯৯২ সালের পর ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে তারা ১৩ বছর সময় নিয়েছে। চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মিয়ানমারের সদিচ্ছা। তারা দু’বার সমঝোতা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এবারও রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক নজরদারি ও চাপ বজায় না থাকলে তারা আবার পালিয়ে আসবে।
১৯৭৮ সালের চুক্তিতে যা ছিল :
ঢাকায় তিন দিনের বৈঠকের পরে ১৯৭৮ সালের ৯ জুলাই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। এতে সই করেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব তবারক হোসেন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার উ টিন অহ্ন। চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে আইনগতভাবে বসবাসকারী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। পরের কোনও সমঝোতায় রোহিঙ্গাদের আইনগত কোনও মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ১৯৭৮ সালের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের বিভক্ত করা হয় তিন ভাগে। প্রথম ভাগে ছিল জাতীয় নিবন্ধন কার্ডধারী রোহিঙ্গা ও তাদের পরিবারের সদস্য। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। পরের ভাগে ছিল এমন রোহিঙ্গারা যাদের জাতীয় নিবন্ধন কার্ড ছিল না। কিন্তু কোনও না কোনও কাগজ দেখিয়ে তারা প্রমাণ করতে পারতো যে তারা রাখাইনে বসবাস করতো। সরকারি খাতে জমা দেওয়া অর্থের রশিদ কিংবা সন্তানদের স্কুলে পড়ানোর কোনও সনদের মতো ডকুমেন্টস এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তৃতীয় ভাগে রাখা হয়েছিল এমন রোহিঙ্গাদের যাদের কোনও ধরনের কাগজ বা ডকুমেন্টস ছিল না। কিন্তু তারা তাদের ঠিকানা বা অন্যকিছুর প্রমাণ দিতে সক্ষম।
১৯৭৮ সালের চুক্তিতে বলা ছিল, ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু ও ছয় মাসের মধ্যে গোটা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

http://www.dailysangram.com/post/309228