২৭ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৯:৩৮

আশার খেয়া বাইতে দিন

দেখা অদেখা

আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ নির্বাচন নিয়ে গবেষণাকারী বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দীর্ঘ দিনব্যাপী যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ইতিবাচক গঠনমূলক এবং সার্বিক বিচারে সফল, বলতে হবে। এ সংলাপ সফল হওয়ায় সবাই আশাবাদী এবং আনন্দিত হয়েছে। সংলাপের এ ইতিবাচক ফল নির্বাচন নিয়ে স্বস্তির ভাব সৃষ্টি হয়েছে। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে যদি বলতে হয়, তবে সংলাপে যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছেÑ সেখানে প্রায় সব ক্ষেত্রেই সবাই ঐকমত্যে পৌঁছে। দু-একটি ইস্যু ভিন্ন হলেও সব ক্ষেত্রেই সবাই অভিন্ন মত প্রকাশ করেছে। এই ঐক্য ইসিকে তাদের নির্বাচনসংক্রান্ত কাজ করতে সহায়তা করবে। এতে গোটা দেশের মানুষ যে একটি প্রশ্নমুক্ত ভালো নির্বাচন চাচ্ছে, সে আকাক্সা পূরণ করা সম্ভব হবে। এ সংলাপ ও তার ফলাফলের পর এখন দ্রুত ইসির এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে। দু-একটি ক্ষেত্রে যদি ভিন্ন মত থাকে, আর তা যদি বেশির ভাগ দলের না হয়Ñ তবে তা এক পাশে সরিয়ে রেখেই চলা উচিত। দেশের মানুষ এটাই আশা করে। আর এই আশাই হতে পারে ইসির ভরসা।

সব যখন ঠিকভাবে চলতে শুরু করেছে, তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য সবার আশার পাত্রটি ফুটো করে দেয়ার মতো মনে হয়েছে, যা ইতোমধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সবাই যখন বলছে, ইসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং কারো মুখাপেক্ষী নয় কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সিইসিকে যেন মনে হচ্ছে, তিনি যেন নেতিয়ে পড়ছেন এবং সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে আছেন। গত ২৬ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সংলাপ-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। ওই সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, সরকার যেভাবে আইন করে দেবে, ইসি সে মোতাবেকই নির্বাচন করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি দল এবং অন্যান্য দল রাজনীতি করে বস্তুত ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য। এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য যদি সরকার তাদের অনুকূলে আইন প্রণয়ন করে তবে সেটা কি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে, নাকি তা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হবে? এমন ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন তো দেশবাসী আশা করে না। সিইসির উপরোল্লিখিত বক্তব্য কি এটাই বোঝায় না যে, তারা স্বাধীন নন। ইসির বক্তব্যের এ অর্থ কিন্তু সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’ কমিশন এসব বিষয়ে অবশ্যই রুজু ও দৃঢ় হতে হবে। ইসি যদি মনে করে সরকারপ্রণীত আইন অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্তরায়, তবে সরকারকে তারা বলবেন প্রণীত আইন অনুসরণ করে কোনো অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সেটা তাদের স্পষ্ট করে এবং দৃঢ়তার সাথে বলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংবিধান তাদের পাশে রয়েছে। এরপরও ইসি তো উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। সংবিধান, আদালতে নির্দেশনা এবং জনগণের অভিপ্রায়কে নিয়ে ইসিকে এগিয়ে যেতে হবে। একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ইসি চলছে। এখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন এখন দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কেননা, বর্তমানে যে আইন বিভাগ ও নির্বাহী রয়েছে, তারা প্রকৃত অর্থে একটি প্রহসনমূলক বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় রয়েছে। বস্তুত এখন এমন একটি সিভিল গভর্নমেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছেÑ যা কিনা জনসমর্থন নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসেননি। ফলে কেউই বর্তমান প্রশাসন নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, যা দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য অনুকূল নয়। শুধু বিরোধী দলই এ নিয়ে অসন্তুষ্ট তা নয়, সরকারও নৈতিক দিক থেকে খুব স্বস্তিতে নেই। যেহেতু রাষ্ট্রে তিনটি বিভাগের মধ্যে দু’টির গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই এটা শুদ্ধাচারের দৃষ্টিতে উত্তীর্ণ নয়। আসলে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয় নিয়ে এমন ত্রুটি খুবই গুরুতর। আগামীতে যদি একটি ভালো নির্বাচন হয় তাতেই শুধু এর প্রতিবিধান হতে পারে। ইতিহাসের খাতায় ২০১৪ সালে তথাকথিত নির্বাচন একটি গভীর ক্ষত হয়ে থাকবে। ক্ষমতাসীনেরা এ ব্যাপারে যা-ই বলুক না কেন, কোনো কিছুই শুদ্ধ হয়ে যাবে না। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যদি শুদ্ধাচারের অভাব ঘটে তবে সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়বে। তাতে রাষ্ট্রের ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যাবে। আর বর্তমান পরিস্থিতিও অনেকটা তাই। দেশে এখন হেন জায়গা নেই, যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি নেই। সমাজের প্রভাবশালীরা অনিয়ম-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পৌঁছে গেছে দুর্নীতি। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুট হচ্ছে জনগণের অর্থ। এখন নীতি-নৈতিকতার মারাত্মক অভাব ঘটছে সমাজে। নারী-শিশু নির্যাতনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সবই যেন বাঁধভাঙা স্রোতের মতো সমাজকে ভাসিয়ে নিতে চাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শিহরিত হয়ে উঠছেন।

প্রতিটি দলই ক্ষমতায় যেতে চায়, সে জন্যই দলগুলো রাজনীতি করে। তাই তারা ক্ষমতা পাওয়ার লক্ষ্যে নানা কলাকৌশল করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। কোনো পক্ষ যাতে কোনো অপকৌশল অবলম্বন করতে না পারে, তা দেখার দায়িত্ব ইসির। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হলে এসব নানা কৌশল দৃষ্টিগোচর হবে। প্রচারকাজ চালানোর ব্যাপারে ইসির নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচারকাজ চালানোর সময় প্রার্থীদের অনেকেই সেই বিধিবিধান লঙ্ঘন করে থাকেন। জাতীয় সংবাদমাধ্যম এবং ইসির নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে তা তারা জানতে পারেন। প্রচারকাজে এ অনিয়ম সম্পর্কে ইসিকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম করে কোনো প্রার্থী বিজয়ী হয়ে যান। তার প্রতিপক্ষ এ অনিয়মের বিরুদ্ধে ইসির কাছে নালিশ দায়ের করে থাকে। কিন্তু ইসি এর ফায়সালা দিতে দিতে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংসদের মেয়াদকালই শেষ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। এতে নালিশদাতা যেমন বঞ্চিত হন, তেমনি সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের ভোট মূল্যহীন হয়ে যায়। বিষয়টি ইসিকে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আরো একটি বিষয় জরুরি, আর সেটা হলোÑ হালনাগাদ এবং ত্রুটিহীন ভোটার তালিকা। এ তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ভোটার তালিকা প্রণয়ন যাদের দিয়ে হবে, সেসব ব্যক্তি যাতে কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী না হন সেটা দেখা উচিত। কেননা, তালিকা প্রণয়নের সময় প্রণয়নকারীরা যাতে কোনোভাবে অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে তালিকা প্রণয়ন করেন। তা না হলে সে তালিকা সঠিক হবে না।
আরো একটি বিষয় নিয়ে সিইসির দোদুল্যমানতা লক্ষ করা গেছে। শুধু তা-ই নয়, তার একই বক্তব্যে হতাশ হওয়ার মতোও বটে। তিনি (সিইসি) মন্তব্য করেছেন, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়নের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো ইসি নেয়নি। অথচ এর আগের দিন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে। এখন লক্ষ করা যাচ্ছে, সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে ইসিতেই মতপার্থক্য রয়েছে। মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের সাথে সংলাপে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ দল ও সংগঠনের মতের সামঞ্জস্য রয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করতে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সরকার পক্ষ ছাড়া সবার দাবি। এ দাবি পূরণ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। অথচ সিইসির এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা সবাইকে দারুণভাবে হতাশ করেছে। ইসির দায়িত্বই তো সুষ্ঠু পরিবেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এ জন্য তাদের যা করা উচিত সেটাই করবে। কিন্তু এসব বক্তব্যে এখন হোঁচট খেতে হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর বড় ধরনের মন্দ অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর পুনরাবৃত্তির যাতে না ঘটে, সে দিকেই ইসিকে নজর রাখতে হবে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কেউ সাঁতার কাটতে চাইলে তার মৃত্যু অবধারিত। সাঁতার কেটে অপর তীরে যাওয়ার জন্য অবশ্যই বন্ধনমুক্ত হতে হবে। ইসিকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হলে তার সব বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে অগ্রসর হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের দায়দায়িত্ব কোনো অংশেই কম নয়। ভালো নির্বাচনের জন্য ইসিকে যেমন দৃঢ়চিত্ত হওয়া উচিত, তেমনি সরকারকে এ ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। ভালো নির্বাচন যাতে সবসময়ই হতে পারে, তার আয়োজন করে দেয়া ক্ষমতাসীনদের অন্যতম দায়িত্ব। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এবং তাদের প্রতিপক্ষ যেন সমান অবস্থানে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তার একটি স্থায়ী ও পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা উচিত। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু সবসময় ক্ষমতা থেকে নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না। তাদেরও ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ হতে হবে। সে সময় নির্বাচন করতে গিয়ে তারা যেন এখনকার মতো বঞ্চনার শিকার না হন, সেটা ভেবে দেখা উচিত।

এ দিকে, সংলাপোত্তর দেশের রাজনীতি আগামী নির্বাচনকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সুশীলসমাজ নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাংবাদিক প্রতিনিধিরা নির্বাচন অনুষ্ঠানে অভিন্ন মত দিয়েছেন। এটা একটি বড় অর্জন, আর একই সাথে ইসির স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়ক বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। কেননা, সংলাপে বড় ধরনের মতপার্থক্য দেখা দিলে তা ইসির জন্য অস্বস্তিদায়ক হতে পারত। এখন আর সেই আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া সরকারি দল এবং সব বিরোধী দল একটি প্রশ্নমুক্ত ও ভালো নির্বাচনের জন্য অঙ্গীকার করেছে। তবে সম্মুখে যদি কোনো পক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায় সৃষ্টি করতে চায়, তবে তা দূর করতে ইসিকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা, সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে সংবিধান ইসিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশ এখন নির্বাচনমুখী। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, আগামী বছর ডিসেম্বর মাসে ফাইনাল খেলা। ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতার এ বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন আগামী বছর ডিসেম্বর মাসে হবে এ আভাসই তিনি দিয়েছেন। নির্বাচনী খেলার দর্শক হিসেবে দেশের জনগণ যাতে আনন্দে উপভোগ করতে পারে, সে খেলায় এক পক্ষ হিসেবে তাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সেটা তাদের স্মরণ রাখতে হবে। জনগণ দর্শক হিসেবে যাতে হাঙ্গামার সম্মুখীন না হয় ও খেলার শৈলীতে সবাই আনন্দ উপভোগ করতে পারে। সবাই যাতে সে খেলার নিয়মকানুন মেনে চলে, কেউ যেন ফাউল না করে। রেফারি হিসেবে ইসি যাতে ভালোভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন তা ক্ষমতাসীনদের দেখার ব্যাপার। আর সবাই যেন তাদের প্রতিপক্ষকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, খেলার সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে সেটাও বিবেচনায় থাকা দরকার।

আরো একটি বিষয় এখনই সুরাহা হওয়া দরকার, যা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক স্রোতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তাই এ নিয়ে জাতীয় সংলাপ হওয়া প্রয়োজন। যাতে ১৯৯১ সালের মতো সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন হতে পারে। ১৯৯১ সালে একটি বড় সাংবিধানিক জটিলতাকে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। সব পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তা সম্ভব হয়েছিল। এবার সে ঐকমত্য হওয়া কঠিন। এ জন্য সংলাপ করা জরুরি। বিশেষ করে কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে? বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচন চায় ‘নির্বাচন সহায়ক’ সরকারের অধীনে। আর ক্ষমতাসীনদের কথা নির্বাচন আমাদের অধীনে নয়, নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে। ইসি নির্বাচন করাবে এটা ঠিক কিন্তু কমিশন তো সরকার চালাবে না। সরকার তো থাকবে ক্ষমতাসীনদের হাতেই। তাদের হাতেই থাকবে গোটা প্রশাসন। বিএনপির তো ভয়, ক্ষমতাসীনেরা সরকারে বসেই দেশ চালাবে। তাই তারা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে, ফলাফলকে প্রভাবিত করবে। অতীত বলেÑ দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচন হয়নি। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যতবার নির্বাচন হয়েছে, সব দফায়ই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে ইসি কোনো উদ্যোগ নেবে না এটা তারা আগেই বলে দিয়েছে। অথচ এ ব্যবস্থা বহাল হলে তাদের ভালো হবে। কারণ রাজনৈতিক সরকার সবসময় তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের প্রচেষ্টা চালায়। আর এই চেষ্টা ইসির পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হবে। সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে। আওয়ামী লীগ বলছে, তারা সংবিধানের ভেতরে থাকতে চায় নির্বাচনী সরকারের প্রশ্নে। সে ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের কাছে সাহায্য চাইতে পারা যায়, যাতে সংবিধানে আওতায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী সরকারের একটি পরামর্শ তারা দেবেন। অথবা দেশের বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং আইনবিদদের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে এই সরকারের সবার গ্রহণযোগ্য একটি ফর্মুলা। এ জন্য অবশ্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে একমত হতে হবে। এই বিষয়টি বর্তমান মুহূর্তের জন্য জরুরি হওয়া কারোই কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না। এর সুরাহা হলে আর কোনো ভাবনা থাকবে না।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সবাইকে একটি সমঝোতায় উপনীত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। মনে রাখা দরকার, দেশের মালিক এ দেশবাসী। তাদের অভিপ্রায় অনুসারেই তা পরিচালিত হবে। তারা যাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। জনগণের তাদের পছন্দের লোকদের ক্ষমতায় পাঠানোর যে প্রক্রিয়া তা হলো, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। যেই এর অন্তরায় সৃষ্টি করতে চাইবে, এই বাধা সৃষ্টিকারীদের অবশ্যই রাষ্ট্রশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/271780