২ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ১:৫১

২০১৬ ছিল মানবাধিকার লংঘনের বছর

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর তাদের সর্বশেষ ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে হতাশা-উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, তার থেকে বিদায়ী বছরে অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি ঘটেনি। ২০১৫ বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ওই প্রতিবেদনে যা লেখা হয়েছিল, ২০১৬ সালের পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে আরো কত নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করতে হয় তা দেখতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে দেশীয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমের নিয়মিত শিরোনামে বিবেকবান মানুষের মন আলোড়িত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরই মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ (এনএইচসিবি) এর চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ঢাকা মেডিকেলে পাশবিক নির্যাতনের শিকার এক শিশুকে দেখতে গিয়ে কোনরকম রাখ-ঢাক ছাড়াই বলেন, ‘২০১৬ সাল ছিল মানবাধিকার লংঘনের বছর’। এছাড়াও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠার আট বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্থাটি কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি বলে একাধিকবার স্বীকার করেন কমিশনের চেয়ারম্যান।
গুম, অপহরণ, নিখোঁজ, খুন, ধর্ষণ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশী হত্যার ঘটনা রোজ উঠে আসছে গণমাধ্যমে। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশী-বিদেশী সংগঠনগুলো এসব নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। তাদের বক্তব্য, বিবৃতি ও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই উদ্বেগ। অপরদিকে, বিদায়ী বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রাণহানির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সোয়া শতাধিক প্রাণহানির পরও অবশ্য ‘রকিব কমিশন’ দাবি করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সন্তোষজনক হয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে দেশীয় সংস্থার সাথে সুর মিলিয়ে প্রায় অভিন্ন অভিমত দিচ্ছে মানবাধিকার বিষয়ক একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার সমস্যা বর্তমানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে সঠিক পরিবেশের অভাব ও শ্রমিক অধিকারের দুর্বল অবস্থা। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, খুন, গুম ও অপহরণের ঘটনাও চলছে। নিয়ম না মেনে গ্রেফতার, নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, সভা-সমাবেশ ও বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও সরকারের হয়রানির ভয়ে একাধিক সাংবাদিকের সমালোচনার পথ পরিহার করে আত্মনিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নেয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতা, দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও বন্ধ হয়নি।
মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘অধিকার’ তাদের নভেম্বর-২০১৬ মাসের প্রতিবেদনে বলেছে, গুম রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার। এটি মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তাদের গেল বছরে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার সংবাদ মাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা প্রদান করে চলেছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় মদদে চলছে রাজনৈতিক সহিংসতা। দেশের স্থানীয় সরকার বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারিদলের পক্ষে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা ব্যাপক অনিয়মের সাথে জড়িত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, আইন শৃংখলাবাহিনী পরিচয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকদের পায়ে গুলী করার প্রবণতা, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করার অভিযোগের তালিকাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
‘অধিকার’র গত জানুয়ারি থেকে নবেম্বর মাস পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১১৮টি। এর মধ্যে ক্রসফায়ার ১৩৭, গুলীতে নিহত ১০, নির্যাতনে মৃত্যু ৮ ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ৩টি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা পায়ে গুলীবিদ্ধ হয়েছেন ১৬ জন। গুমের শিকার হয়েছেন ৮৪ জন। গাইবান্ধা জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গাওছুল আজম ডলার (৪৮)সহ কারাগারে মারা গেছেন ৫৪ জন। ভারতীয় বিএসএফ বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ছিল ৮২টি। এর মধ্যে বিএসএফএ’র গুলীতে ২৮ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৫ জন বাংলাদেশী এবং অপহৃত হন ১৯ জন। সরকার যতই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলুন না কেন, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিদায়ী বছরে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ আহত ৫১ জন আহত ও ১৬ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২০৯ জন ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৬৪৪ জন।
নারীর ওপর যৌতুক সহিংসতার ঘটনা ঘটে ১৮৭টি। এছাড়া আলোচ্য সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৯৭ নারী ও শিশু, যৌন হয়রানির শিকার ২৫৯, এসিড সহিংসতা ৪০, গণপিটুনীতে মৃত্যু ৪৭ , তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহত ৩, বিক্ষোভের সময় ও কারখানায় আগুনে পুড়ে আহত ২৭১ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার (সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ অনলাইনে লেখার কারণে) হয়েছেন ৩৪ জন। ‘অধিকার’ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্বৃত্তায়ন ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলছে, গত ১২ নবেম্বর যশোরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতার হাতে নৃশংসভাবে সহিংসতার শিকার হয়ে শুকুর আলী (২৫) নামে একজন দোকান কর্মচারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে মারা যান। গত ১৬ নবেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ বাদল ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল বারীর মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে সাইফুল মোল্লা (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত এবং ১০ জন আহত হন। নবেম্বর মাসে এই পর্যন্ত ৮ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ৮ জনের সবাইকে পরবর্তীতে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা পারভেজ হোসেনের বাবা শফিউদ্দিন গত ৯ নবেম্বর মারা যান। তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ছেলের গুম হওয়ার বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। ছেলের শোকেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের যুগ্ম সম্পাদক নিজামউদ্দিন মুন্নার বাবা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন গত ১৩ নবেম্বর মারা যান। নিজামউদ্দিন মুন্নাকে তাঁর বাবা মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিকে গত ২ নবেম্বর ভোরে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার বেগারীতলা এলাকায় দুই গ্রুপ দুবৃর্ত্তের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতা আনিসুর রহমান (৩৮) নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করে। কিন্তু আনিসুর রহমানের ভাই আজিজুর রহমান দাবি করেন, গত ৩০ অক্টোবর তাঁর ভাইকে পুলিশ আটক করে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। এই সময় পুলিশ তার ভাইকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এই টাকা দিতে না পারায় পুলিশ তার ভাইকে গুলী করে হত্যা করে। চট্টগ্রামে গ্রেফতারের পর মোহাম্মদ মুসা নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়ায় গত ১৫ নবেম্বর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান।
আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী ২০১৩ সালে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কিংবা ক্রসফায়ারে মারা গেছে ৪১ জন। ‘১৪ সালে ১০৪ জন। ‘১৫ সালে ১০৫ জন এবং ২০১৬ সালের নবেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ১০৮। এছাড়া সংখ্যালঘুদের উপর বড় ধরনের হামলা-নাশকতার ঘটনা ঘটেছে দুটি।
এইসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনের সাথে সহমত প্রকাশ করেন দেশের মানবাধিকার নেতারা। তারা বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যা, নিখোঁজ, গুমের ঘটনায় উদ্বিগ্ন।
নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতার ভয়ংকর প্রবণতা : আলোচিত সহিংসতা-এক : গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার অদূরে জঙ্গলে সোহাগী জাহান তনুর লাশ পাওয়া যায়। ২১ মার্চ তার বাবা ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত ও দুই দফা ময়না তদন্ত করা হয় তনুর লাশ। তনুর পোশাক থেকে সংগ্রহ করা আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় তিন ব্যক্তির শুক্রাণু পাওয়া যায়। তবে ৯ মাসেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বছরের প্রায় পুরো সময় আলোচনায় ছিল এ হত্যাকান্ড। এছাড়া হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সারাদেশে ঝড় ওঠে।
আলোচিত সহিংসতা- দুই : প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২৪ আগস্ট রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে (১৪) ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল খান নামের এক বখাটে যুবক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শয্যাশায়ী রিশা তার মা ও পুলিশকে বখাটে ওবায়দুলের কথা বলে গিয়েছিল । চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিরবিদায় নেয় রিশা। মৃত্যুর দিনই উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের কাকরাইল সড়ক অবরোধ করে উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের শিক্ষার্থীরা। পরদিন রিশা হত্যাকান্ডের বিচার দাবির আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় বখাটে ওবায়দুলকে। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।
আলোচিত সহিংসতা-তিন : গত ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজে বিএ (পাস) পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় হামলার শিকার হন খাদিজা। সিলেট থেকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে এনে প্রথমেই লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। কয়েকদিন পর লাইফ সাপোর্ট খুলে দুদফা অস্ত্রোপচারের পর ৫৩ দিন পর আশঙ্কামুক্ত হন খাদিজা। হাসিমুখে সাংবাদিকদের সামনে আসেন, দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। এ ঘটনায় তার হত্যাচেষ্টাকারী ছাত্রলীগ নেতা বদরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় বদরুল। দেশজুড়ে এই বর্বর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যাপক আন্দোলন ও আলোচনা হয়।
এ তিনটি ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলেও ২০১৬ সাল জুড়েই নারী সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। একই সাথে এ বছরে শিশুরাও নিরাপদ ছিল না। মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকদের মতে, বিদায়ী বছরটি ছিল নারী ও শিশু নিগ্রহের বছর। অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে দেশে অনেক ভালো ভালো আইন রয়েছে। আইন থাকলেও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিচার হচ্ছে খুব কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত জনপদ পর্যন্ত বেড়েছে নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা। তারা এও বলছেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নৈতিক দুর্বলতা, সাক্ষীর অভাব, অন্যায় শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা ও সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারী ও শিশুর সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এর সাথে সাথে সামাজিক অসচেতনা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবও এসব ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মনিটরিং প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর বাদ দিয়ে বিদায়ী বছরের এগারো মাসে (জানুয়ারি থেকে নবেম্বর) বিভিন্ন কারণে পারিবারিক সহিংসতায় ২৬৮ জন নারী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ২১১ জন। এদের মধ্যে স্বামী কর্তৃক নিহত হয়েছে ১৫৮ জন। প্রতিবেদন বলছে, অধিকাংশ নারী নির্যাতনের ঘটনা অপেক্ষাকৃত গ্রামে ঘটে থাকে। যেসব স্থানে শিক্ষার হার কম ও দারিদ্রতা তুলনামূলক বেশি। কিন্তু শহর বা শহরতলীতেও নারী নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত বছরের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৭৩ জন। একই সময়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১৫৪ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৬ জনকে। ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন মোট ১৫২ জন নারী। গেল বছরের প্রথম ১১ মাসে গৃহপরিচারিকা হত্যার শিকার হয়েছেন ২২ জন এবং গৃহপরিচারিকা আত্মহত্যার ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫ জন। এ সময়ে হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ৭১৬ জন নারী। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ২৭২ জনের এবং আত্মহত্যা করেছেন ৩০৪ নারী। এ সময়ের মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মোট ২৩ জন নারী। আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছেন ২৬ জন। উত্ত্যক্তের ঘটনার শিকার হয়েছেন ২৯০ জন। আর উত্যক্তের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন ১১ জন নারী।
এ সময়ে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ১১৫ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭২ জন। পিতৃত্বের দাবি ঘটনায় নির্যাতনের সংখ্যা মোট তিনজন। এসিড দগ্ধ হয়েছেন ৩৫ জন। এসিড দগ্ধের কারণে আগস্ট মাসে মৃত্যু হয়েছে একজনের। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ৬২ জন। অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। আর একই সময়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন ১২৪ জন নারী। এছাড়া নারী ও শিশু পাচার ঘটনার শিকার হয়েছেন ৩৩ জন। পতিতালয়ে বিক্রির ঘটনার শিকার হয়েছেন ১১ জন। এছাড়া যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন ১৬০ জন। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৭১ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৮৪ জন। এছাড়া গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৮ জন। প্রেম প্রত্যাখ্যান ঘটনায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪ জন। ফতোয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২২ জন। বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন ১৬৯ কিশোরী। অন্যদিকে, পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০ জন। এ সময়ের মধ্যে অন্যান্য কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরো ২২৮ জন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি দেশের ৫৫টি জেলা থেকে নির্যাতনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৫ সালে সারা বছর নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮টি, যা ২০১৬ সালের অক্টোবরেই ১৭% বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮৪০টি। এ সময়ে যৌতুক প্রদানে ব্যর্থ হয়ে স্বামীর হাতে বা স্বামীর স্বজনদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৯৩ জন নারী। নির্যাতনের পর নির্মমভাবে হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, নির্যাতনভোগীদের অধিকাংশই শিশু, বিশেষ করে ধর্ষণের শিকার শতকরা ৭২ জনই শিশু যাদের বয়স ১৮-এর নীচে। সম্প্রতি দিনাজপুরে বিয়াল্লিশ বছর বয়সী এক ব্যক্তি কর্তৃক পাঁচ বছরের শিশু পূজাকে ধর্ষণের ঘটনা সমগ্র জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে ৭১৪ জন নারী।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তার দেশের ৪৪টি ইউনিয়নে ব্র্যাক পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না। তবে দেশে নারী নির্যাতনের হার যে বেড়ে চলেছে তার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। নথিভুক্ত ও প্রকাশ হওয়া ঘটনাগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর ওপর এই নির্যাতন হয় পুরুষের দ্বারা। রিপোর্টে দেখা যায়, নারী নির্যাতনকারীর ৯৩ শতাংশই পুরুষ অর্থ্যাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয় জনের বেশিই পুরুষ। এদের মধ্যে ২২ শতাংশই স্থানীয় প্রভাবশালী।
২০১৬ সালের রিপোর্টে দেখা যায়, অপরাধ করেও ৩,৭৭৩ জন নির্যাতনকারী এখনো জনসম্মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে ২৬ শতাংশ ঘটনার কোনো মামলাই হয়নি। আর এসব কারণে নারীর ওপর নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে শুধু নয়, ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ২৯৬ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩ জন যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ৮৬৭ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের মতো বর্বরোচিত সহিংসতার শিকার হয়েছে। ৩৪ জন নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এছাড়া ৫৮ জন পাচার, ১২৮ জন নিখোঁজ, ১৪১ জন অপহরণ এবং ২২২ জন নারীকে উদ্ধারের তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের দেয়া তথ্য মতে, বছরের শুরু থেকে নবেম্বর মাস পর্যন্ত গত ১১ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৯৮ শিশু। মাসওয়ারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ৩৩, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৪, মার্চে ২৯, এপ্রিলে ৪২, মে মাসে ৪৪, জুনে ৩৯, জুলাইয়ে ৩৩, আগস্টে ৩৭, সেপ্টেম্বরে ৩৪, অক্টোবরে ৩২ ও নবেম্বরে ৩৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে ৩৭টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৮টি শিশু, ৩১টি প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশু ধর্ষিত হয়েছে আর ৫টি শিশু গৃহকর্মীর কর্মস্থলে ধর্ষিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ১৫টি শিশু। অর্থাৎ প্রতি দুই মাসে একজন শিশু ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে। শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে ৫৪ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি, মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে আরো ৭৮ শিশু। এর আগের বছর ২০১৫ সালে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৫২১টি। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৯৯টি। ২০১৩ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে ১৭০ এবং ৮৬টি শিশু ধর্ষিত হয়েছিল বলে শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রমতে, এ বছর নারী ও শিশু নির্যাতনের নানামাত্রিক ঘটনা ঘটে। তনু-রিশার বাইরে আরো বেশ কিছু খবর বোধসম্পন্ন মানুষকে নাড়া দেয়। যেমন- নিতু মন্ডলকে কুপিয়ে হত্যা, নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে মোবাইল ফোনে ভিডিও চিত্র ধারণ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে চাঁদা আদায়, বিয়ের কাবিনে প্রথম স্ত্রীর তথ্য গোপন করায় লালমনিরহাটে সমাজপতিদের নববিবাহিত স্বামী-স্ত্রীকে বিচারের নামে দোররা মারা, একই দিনে ফরিদপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুটি পৃথক ঘটনায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে যথাক্রমে ৬ বছরের শিশু এবং ২০ বছরের শারীরিক প্রতিবন্ধী এক তরুণী, রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী এবং দক্ষিণখান এলাকার ১৩ বছরের শিশু ধর্ষণ, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিশুকে ধর্ষণ ও পরে হত্যা, চলন্ত লঞ্চের কেবিনে অস্ত্রের মুখে নারী ধর্ষণ, চলন্ত বাসে এক নারী গণধর্ষণ, ১০ হাজার টাকা যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর পূর্ণিমার মুখে এসিড ঢেলে দেয়া, গ্রামের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া চার শিশুদের লাশ উদ্ধার, পরকীয়া করার সন্দেহে লঞ্চের কেবিনে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর হাতে স্ত্রীর চোখ তুলে ফেলা, নববধূকে যৌতুকের জন্য স্বামী ও শাশুড়ির হত্যা করা, দেড় লাখ টাকা যৌতুকের জন্য ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে এক চোখ উপড়ে ফেলার মতো ভয়াবহ বর্বর, ঘৃণ্য ও জঘন্য নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বছর পার করেছে এ দেশের নারী ও শিশুরা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খান বলেন, শিশুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। তাদেরও খুন করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে শিশু নির্যাতনকে রুখতে। আইনী বিচারের হাত থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে অনেক অপরাধী। মাত্র দু’একটি মামলায় আমরা প্রশাসনের অগ্রগতি দেখছি। কিন্তু অনেক অপরাধী শাস্তি পাচ্ছে না। আমরা চাই অপরাধীর সঠিক শাস্তির বিধান। এছাড়া প্রত্যেক এলাকাভিত্তিক সচেতনতাও দরকার এ ধরনের কার্মকান্ড এড়াতে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন : ‘২০১৬ সাল ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতনের বছর’ এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট গত শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানায়, ২০১৬ সালের শুরু থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৯৮ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। সঙ্গে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে এক হাজার ৯ জনকে। আর হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৮ জনকে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে ২৬টি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ২২জন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এ সময়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে ২০৯টি। ৩৬৬টি মন্দিরে পূজা বন্ধ করা ও ৩৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিদায়ী বছরে ১৫ হাজার ৫৪টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সারা দেশে ৩৫৭ জনকে জখম, আট জনকে কারাগারে আটক, ৯৯ জনকে চাঁদাবাজি-মারধর ও আটকে রেখে নির্যাতন, ১৬৫টি লুটপাটের ঘটনা ও বসতঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৩টি হামলা হয়েছে। এছাড়া সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটেছে ৮৬টি। এর মধ্যে ভূমি দখল ৬১টি, ঘরবাড়ি দখল পাঁচটি এবং দখলের তৎপরতার ঘটনা ঘটেছে ২০টি। উচ্ছেদে ঘটনা ঘটেছে ২১০টি, উচ্ছেদের তৎপরতার ঘটনা ঘটেছে ৩২৬টি, উচ্ছেদের হুমকি তিন হাজার ৪৩১টি, দেশ ত্যাগের হুমকি ৭১১টি। জাতীয় হিন্দু মহাজোট আরো জানায়, গেল বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হিন্দু পল্লী আক্রান্তসহ মন্দিরে হামলা ভাঙচুর, চুরি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১৪১টি। বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, চুরি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৩২৮টি। প্রতিমা ভাঙচুর ২০৯টি, প্রতিমা চুরি ২২টি, মন্দিরে পূজা বন্ধ করা হয়েছে ৩৬৬টি, অপহরণ ৩৮টি, অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭টি। গণধর্ষণ হয়েছে ৪টি। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত বা ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা এক হাজার ২৫১টি।
কর্মক্ষেত্রে নিহত ১২৪০ শ্রমিক : শ্রমজীবী মানুষদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন একটি এনজিও বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ওশি) তথ্য মতে, ২০১৬ সালে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে ১ হাজার ২৪০ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ৫৪৪ জন শ্রমিক। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের খবর ও মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য মোতাবেক সংগঠনটির দাবি, নিহত শ্রমিকদের মধ্যে পরিবহন খাতে ৪৮৬ জন, নির্মাণ খাতে ১৪৭, পোশাক শিল্পে ৮৮, কৃষিতে ৮৭ জন নিহত হন। কৃষিক্ষেত্রে বজ্রপাতেই ৫৫জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৬৯ জন দিনমজুর, ৪৭ জন কারখানায় দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ৩৩ গৃহকর্মী, ২৩ জন জাহাজভাঙ্গা শিল্পে, ৪৪ জন মৎস্যচাষী ও জেলে নিহত হয়েছেন। আর নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন।
উদ্বিগ্ন মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্টজনেরা : মানবাধিকার নেতা ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, তথ্য উপাত্ত ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে দেখা গেছে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত। এটা এক কথায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছু অগ্রগতি হলেও সার্বিকভাবে অগ্রগতি নেই।
নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলছেন, নাগরিক নিরাপত্তা এবং সুশাসনের পরিপন্থী সকল ক্ষেত্রেই আমরা সরকারের অবস্থান দেখতে চাই।
খুন, গুম, গুপ্তহত্যার সংস্কৃতি কারো জন্যই মঙ্গলকর নয়। অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতিতে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়। গণতন্ত্রের পথ হয় রুদ্ধ। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অশুভ শক্তিগুলো।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, মানবাধিকার উন্নয়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে না। ফলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে; যা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য অশুভ।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, বন্দুকযুদ্ধের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হত্যাকান্ড। এমন ঘটনা আমরা প্রায় প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে দেখছি।
http://www.dailysangram.com/post/265643-%E0%A7%A8%E0%A7%A6%E0%A7%A7%E0%A7%AC-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%82%E0%A6%98%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%9B%E0%A6%B0