ঈদুল ফিতরকে ঘিরে মধ্য রমজান থেকেই পোশাকের বাজারে ব্যস্ত সময় পার করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এবারের ঈদবাজারে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর শপিং মলগুলোয় কমেছে বড় ক্রেতা বা উচ্চবিত্তদের আনাগোনা।
ঈদুল ফিতরকে ঘিরে মধ্য রমজান থেকেই পোশাকের বাজারে ব্যস্ত সময় পার করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এবারের ঈদবাজারে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর শপিং মলগুলোয় কমেছে বড় ক্রেতা বা উচ্চবিত্তদের আনাগোনা। তবে ছোটখাটো ও তুলনামূলক কম দামের পণ্যের দোকানগুলোয় যথারীতি ভিড় বাড়ছে। ব্র্যান্ড শপগুলোর বিক্রেতারা দাবি করছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তাদের কেনাকাটা কমেছে প্রায় ২০-৩০ শতাংশ। বড় ক্রেতা আসছে না বললেই চলে।
রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন শপিং মল ঘুরে দেখা যায়, বড় ব্র্যান্ডের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের আনাগোনা কম। কেবল পাঞ্জাবি ও জুতার দোকানে কিছুটা ভিড়। বাকি দোকানগুলোয় অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। তবে গাউছিয়া, বঙ্গবাজার, চাঁদনীচকের ফুটপাতের দোকানগুলোয় লক্ষ করা গেছে উপচেপড়া ভিড়।
স্থানীয় বাজারে পোশাক শিল্পের প্রায় সবক’টি ব্র্যান্ডেরই শোরুম রয়েছে রাজধানী যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে। শপিংমল দুটি ঘুরে দেখা গেছে, রিচম্যান, ইনফিনিটি, এমব্রেলা, জেন্টল পার্ক, টুয়েলভ, ইয়েলো ও ইল্লিয়িনসহ প্রায় দোকানগুলোয় এখন পাঞ্জাবি কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। একই দোকানের প্যান্ট-শার্ট ও অন্যান্য পোশাক ছুঁয়েও দেখছেন কেউ।
বসুন্ধরা সিটির রিচম্যান শোরুমের ক্যাশিয়ার মো. সেলিম জানান, এবার ঈদে বড় ধরনের ক্রেতার দেখা মিলছে না। অন্যান্য বছর অনেকেই একসঙ্গে ৬০-৭০ হাজার টাকার শপিং করতেন। এবার সে রকম গ্রাহক নেই জানিয়ে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত এক কাস্টমার গতবার এ শোরুম থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার শপিং করেছেন। এবার তিনি কেবল দুটি টি-শার্ট কিনেছেন। আমরা ছোটখাটো ক্রেতা পাচ্ছি। কিন্তু বড় অংকের কেনাকাটা করেন এমন ক্রেতার দেখা পাইনি এবার।’
একই শপিং মলের জিওর্ডানো নামের আরেকটি দোকানের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হাফেজ আকাশ। তাদের দোকানে শার্ট, টি-শার্ট ও প্যান্ট পাওয়া যায়। গতকাল বিকালে ওই দোকানে গিয়ে কোনো ক্রেতাই পাওয়া যায়নি। যদিও পাশেই পাঞ্জাবির আরেকটি দোকানে ছিল ভিড়। বণিক বার্তাকে জাহাঙ্গীর হাফেজ বলেন, ‘বেচাকেনা একদম নেই বললেই চলে। এবারে দোকানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়াই কষ্ট হয়ে যাবে।’
দেশের উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্তদের পছন্দের কেনাকাটার আরেকটি স্থান যমুনা ফিউচার পার্ক। নামকরা প্রায় সব ব্র্যান্ডেরই দোকান রয়েছে ওই বিপণিবিতানে। গত কয়েক বছরে পাঞ্জাবির জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে ইল্লিয়িন। যদিও তাদের দোকানে শার্ট, প্যান্টসহ অন্যান্য পণ্যও রয়েছে। ইল্লিয়িনের এক বিক্রেতা সহকারী বলেন, ‘শুধু পাঞ্জাবিই কিছুটা বিক্রি হয়েছে এ বছর। বাকি পণ্যগুলো খুব একটা বিক্রি হচ্ছে না। আবার গত বছর একসঙ্গে অনেকগুলো জামাকাপড় কেনা ব্যক্তিদের দেখা গিয়েছিল। এবার যা বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবেই।’
বসুন্ধরা সিটির আরেকটি দোকান মাইশা ওয়ার্ল্ড। মেয়ে ও শিশুদের জামাকাপড় বিক্রি হয় এ দোকানে। দোকানের ব্যবস্থাপক মো. উজ্জ্বল বলেন, ‘২০ রোজার আগ পর্যন্ত কিছুটা বেচাবিক্রি হয়েছিল। এর পর থেকে একদম কমে গেছে বিক্রি। এবার সার্বিকভাবে কেনাকাটা কমেছে ২০-৩০ শতাংশ।’
রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী। গত বছরগুলোয় এখানে গড়ে উঠেছে বেশকিছু অভিজাত বিদেশী ব্র্যান্ডের দোকান। ঈদের সময়গুলোয় মধ্যরাত পেরিয়ে দেড়টা-দুইটা পর্যন্ত বেচাবিক্রি হতো এখানকার দোকানগুলোয়। তবে এ বছর ১০টা বাজতেই দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, ক্রেতা না থাকায় বেশ আগেই দোকান বন্ধ করতে হচ্ছে তাদের। এমনই একটি দোকান ভাসাবি। অভিজাত এ দোকানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ বছর বেচাকেনা খুবই কম। জনসমাগমও সেভাবে হচ্ছে না।’ বিক্রি কমার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা হিসাব করিনি। তবে গত বছরের তুলনায় অনেক কম এবারের কেনাকাটা।’
অভিজাত এসব ব্র্যান্ড দোকানের কর্মকর্তাদের কাছে বেচাকেনা কমে যাওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিল বণিক বার্তা। নির্দিষ্টভাবে কোনো মন্তব্য না করলেও তারা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে উচ্চবিত্তদের কেনাকাটা কমে গেছে। শপিং মলগুলোয় কারা বেশি দামের পণ্য ক্রয় করছেন, তাদের ওপরও নজরদারি করা হচ্ছে। ফলে ভাটা পড়েছে তাদের কেনাকাটায়।
এদিকে দেশের বাজারে উচ্চ ও উচ্চবিত্তদের কেনাকাটা কমলেও গাউছিয়া, বঙ্গবাজার, চাঁদনীচক ও ফুটপাতের দোকানগুলোয় দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। এসব বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে আশানুরূপ বিকিকিনি না হলেও খুব একটা হতাশ নন তারা। রাসেল মিয়া নামে গাউছিয়া মার্কেটের এক বিক্রেতা বলেন, ‘দু-একদিন ধরে বেচাকেনা কিছুটা কমে গেছে। তবে এর আগে বেশ ভালো বেচাকেনা হয়েছে। খুব বেশি না হলেও গত বছরের চেয়ে কম হয়নি।’
গতকাল গাউছিয়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা এক ক্রেতা ফারজানা আক্তার বলছেন, ‘এবারের বাজেট একটু কম। বাচ্চাদের জন্য সাধ্যের মধ্যে সবকিছু কেনার চেষ্টা করছি।’
গুলিস্তানের ফুটপাতে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করেন কাসেমুল ইসলাম। ঈদ উপলক্ষে দোকানে পাঞ্জাবিও তুলেছেন তিনি। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই ভালো পরিমাণে বিক্রি করেছি। দোকানে যে কাপড়গুলো এখনো অবিক্রীত রয়েছে, আশা করি ঈদের আগেই সেগুলো বিক্রি হয়ে যাবে।’