পবিত্র রমজান মাস মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সিয়াম সাধনার মাস। রমজানকে সামনে রেখে প্রতি বছর অস্থির হয়ে উঠে গেছে ইফতার পণ্যের বাজার। তবে এবার দেখা গেছে ব্যতিক্রম। দেশে ইফতারসামগ্রীর বাজারে অনেকটাই স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বেশি দাম নেয়ার নেই কোনো অভিযোগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে থাকায় রমজানে বাড়েনি পণ্যের দাম। একই সাথে চাহিদার সাথে সরবরাহে মিল থাকায় বাজারে কোনো সঙ্কট দেখা যাচ্ছে না।
এ দিকে রমজান শুরু হলেও সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। রাজধানীর অনেক বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেও তেলের চড়া দাম ক্রেতাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে।
গতকাল ঢাকার মিরপুর, খিলগাঁও এবং সেগুনবাগিচা এলাকায় বাজার ঘুরে এবং এসব এলাকার স্থানীয় ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার ইফতারসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাজারে রয়েছে সয়াবিন তেলের সঙ্কট। খুচরা দোকানে পাওয়াটা তো পরের কথা সুপারিশগুলোতেও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন। এ দিকে কিছু খুচরা দোকানে সর্বোচ্চ এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তার জন্য ক্রেতাদেরকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম। এ দিকে বোতলজাত সয়াবিন তেল কম থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। রমজান এলেই শসা, লেবু এবং বেগুনের কদর বেড়ে যায়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় ইফতারে বহুল ব্যবহৃত এসব পণ্যের দাম এক বছরের মধ্যে খুব বেশি বাড়েনি। বরং কিছু পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে কমেছে।
গতকাল মিরপুর-৬ কাঁচাবাজারে দেখা যায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এক বছর আগে রমজানের শুরুতে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৯০-১০০ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৪৫ থকে ৫০ টাকা।
গতকাল প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ১১০ টাকা। গত বছর একই সময়ে প্রতি কেজি ছোলা একই দামে বিক্রি হয়েছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় এক বছরের ব্যবধানে ছোলাম দাম বাড়েনি। সেগুন বাগিচা বাজারে দেখা যায় প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। রমজান মাসের আগে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। রমজান মাস উপলক্ষে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি বেগুনে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এ দিকে গত বছর রমজানের শুরুতে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ছিল ৭০-১২০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেগুনের দামে খুব বেশি না কমলেও বৃদ্ধি পায়নি বলে জানা গেছে। এ দিকে মিরপুর-৬ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গত বছরে রমজানে প্রতি কেজি শসার দাম ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি শসায় দাম কমেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
গতকাল প্রতি কেজি পোলট্রি মুরগির দাম ছিল ২১০ থেকে ২১৫ টাকা। এ দিকে প্রতি কেজি সোনালি মুরগির দাম ছিল ৩২০ টাকা। এ দিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় গত বছর রমজানের শুরুতে প্রতি কেজি পোলট্রি মুরগির দাম ছিল ২১০ টাকা, সোনালি (পাকিস্তানি) প্রতি কেজি ৩২০ টাকা। অর্থাৎ রমজান উপলক্ষে বাড়েনি মুরগির দাম। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি রসুনের দাম ছিল ১০০ থেকে ২৩০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
এ দিকে দেশী ফলের মধ্যে প্রতি কেজি বড়ই এর দাম ছিল ৭০ থকে ৮০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁপের দাম ছিল ১০০ থকে ১১০ টাকা, হানিটু প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন এসব ফলের দাম গত বছরের মতোই রয়েছে। এবার রমজান উপলক্ষে দেশী ফলের দাম খুব একটা বাড়েনি বলে তারা জানান।
মিরপুর-৬ বাজারে ক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম রমজানের মধ্যেও অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। কিছু পণ্যের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি মনে হচ্ছে। তবে সেটার পরিমাণে একেবারেই কম। কিন্তু বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারে সবজি বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন রমজানকে সামনে কয়েকটি পণ্যের দাম সামান্য বেড়েছে। তবে অস্বাভাবিকভাবে কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। এ দিকে গত বছরের সাথে তুলনা করলে অনেক পণ্যের দাম কমেছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন অনেক সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ওইসব সবজির দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। বাজারের মুদি দোকানি আবদুস শহিদ বলেন বাজারে পণ্যের দাম গত সপ্তাহের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। শুধু তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নতুন সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতি বছর দেখা যায় রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তবে এবার একটি ভালো খবর যে রমজানে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এ জন্য ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে বলে তিনি মনে করেন।