পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হত্যাকা-ের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকী ও তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনজীবী তাসমিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পেয়েছি। এর সঙ্গে তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলার জন্য এবং তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংস করতে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি।
তিনি বলেন, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছি এরমধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা রয়েছেন। আমাদের অভিযোগ খুবই সুস্পষ্ট। দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলে আওয়ামি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ ও অফিসারদেরকে খুন করা হয়েছে। তাদের লাশে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। এসব কিছুই মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তাই কমিশন গঠনের মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তারা বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ধ্বংসের নীলনকশা প্রণয়ন করে।
সেই লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রথম শিকারে পরিণত হয় বাংলাদেশ রাইফেলসে তৎকালীন কর্মরত পেশাদার, সৎ-দক্ষ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর অফিসারদের একটি অংশ। শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের নিজের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে প্রথম ও প্রধানতম অন্তরায়-বিপত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে সেনা অফিসারদের এবং তাদের পরিবারের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকির নেতৃত্বে, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অন্যান্য আসামীরা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার পরিকল্পনাধীন স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সহজ ও চিরস্থায়ী করতে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত পিলখানা সদর দপ্তরে তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র সেনাবাহিনীর অফিসার এবং তাদের পরিবারকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে পদ্ধতিগত উপায়ে নারকীয় হত্যাকা- চালিয়ে, ভিক্টিম সেনাবাহিনীর অফিসারদের এবং তাদের পরিবার-পরিজনকে আটকাবস্থায় জিম্মি করে, কিছু মৃত সেনাবাহিনীর অফিসারদের লাশ পুড়িয়ে দিয়ে, লুটপাট চালিয়ে এবং শারীরিক-মানসিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে। তখনকার নৃশংস ওই ঘটনায় ৫৭ সেনা অফিসারসহ সর্বমোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।
তাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা এ গণহত্যাকে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীসহ সব দেশপ্রেমিক জনগণকে কড়া বার্তা দেওয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। এই মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার মাধ্যমে সমগ্র সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতাদর্শ বাস্তবায়ন, লুটপাট, রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকা-ের কোনো প্রতিবাদ করার সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে।
তারা আরও বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার দোসর কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার সব শহীদ, আহত-পঙ্গু ও গুমকৃত ব্যক্তিদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি ও অনুরোধ জানাচ্ছি।