বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে, যেটি হচ্ছে গণতন্ত্র। একইসাথে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেন আদালত।
রায়ে আদালত বলেন, গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়, যেটি সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হলো।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ও এর কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে পৃথক দু’টি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল। তবে রায়ে আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।
এদিকে হাইকোর্টের রায়ে ৭ক, ৭খ ও ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে। ৭ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ এবং ৭খ সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা ছিল। আর ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ বিষয়ে বলা আছে। ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বলছে, এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতাহানি না ঘটিয়ে সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনো আদালতকে তার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সব বা এর যেকোনো ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করতে পারবেন। এই অনুচ্ছেদটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, গণতন্ত্র হচ্ছে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। এ গণতন্ত্র বিকশিত হয় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার কোনো প্রতিফলন হয়নি। যার ফলে হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশে পরিণত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাংঘর্ষিক নয় : অ্যাটর্নি জেনারেল
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসায় কার অধীনে নির্বাচন হবে, সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই সরকার যদি ১৩ অ্যামেন্ডমেন্টের (ত্রয়োদশ সংশোধন) রায়ের পরে আমরা দেখি, অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার কি সেটা করতে পারবে? এর জবাবে তিনি বলেন, কেন পারবে না, অবশ্যই পারবে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জন্য নতুন সরকার গঠন করতে হবে নাকি অন্তর্বর্তী সরকারকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই (অন্তর্বর্তী) সরকার রিনেমড (নতুন নাম) হবে। যেমন, জেলা ও দায়রা জজের নাম শুনেছেন। একই ব্যক্তি যখন সিভিল মামলা করেন, তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ। একই ব্যক্তি যখন ক্রিমিনাল মামলা করেন, তখন তাকে বলা হয় দায়রা জজ।’ অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার প্রক্রিয়া কেমন হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবেন। আসাদুজ্জামান বলেন, আজকের রায়ে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। ওই টার (অন্তর্বর্তী সরকার) সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই।
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরাটা রিটকারী পক্ষ অবৈধ ঘোষণা চেয়েছিলেন। হাইকোর্ট পুরোটা অবৈধ বলেননি। তবে পুরোটা অবৈধ বলার মতো উপাদানের কথা উনারা বলে গেছেন। তিনি বলেন, অনুচ্ছেদ ৭ক ও ৭খ এ দুটো অবৈধ। এটা এমনভাবে ধরে নিতে হবে যে এটা আইনে ছিল না। সংবিধানে এটা ছিল না এভাবে হবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করাটা অবৈধ হয়েছে। এখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েছে। উনারা রেফারেন্স হিসেবে বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচন কিভাবে হয়েছে এবং কিভাবে দেশের গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়েছে। কিভাবে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। কিভাবে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিভাবে সংবিধানের মূলকাঠামোতে আঘাত করা হয়েছে।
গণভোটে জনগণের যে ক্ষমতা সেটাকে সংকুচিত করা হয়েছিল। সেই সংকুচিত করাকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন। অন্য বিষয়গুলোর বিষয়ে পার্লামেন্ট দেখবেন বলে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এটাও বলেননি ওটা বৈধ বা অবৈধ। তিনি বলেন, এরপর ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে পেনডিং আছে। সেখানে আপিল বিভাগ যে ফাইন্ডিং এসেছে তা দেখবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা কোর্ট যখন বলছেন অবৈধ। তার মানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বৈধ। আর ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ে সাতজন বিচারপতি বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে দু’টি নির্বাচন দরকার। তিনি আরো বলেন, সাতজন বিচারপতির মধ্যে পরবর্তীতে তিনজন পল্টি মেরে ছিলেন। জ্ঞানপাপী একজন বিচারপতি ছিলেন এ বি এম খায়রুল হক। তিনি মূল রায় ঘোষণার ১৭ মাস পরে লিখিত রায় দেন। সেখানে উনি রায় দিলেন, পরবর্তী দু’টি নির্বাচন হবে তবে পার্লামেন্ট ঠিক করবে কোন ফরম্যাটে হবে। বিচারপতি খায়রুল হকের সাথে নাম মেলালেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। উনারা বিচার বিভাগ ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। উনাদের কারণে বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র নির্বাসিত। উনাদের সাজা হওয়া উচিত।
রিটকারী আইনজীবীরা যা বললেন : জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়নি। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যেসব পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হয়েছিল তার কিছু অংশ আদালত রেখে দিয়েছেন। কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করেছেন আর কিছু জিনিস পরবর্তী সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তার মধ্যে যেসব জিনিস সংরক্ষণ করেছেন তার একটি হলো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। আরেকটি সংরক্ষণ করেছেন পরিবেশগত বায়োডায়ভার্সিটি। আরেকটি সংরক্ষণ করেছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের যে পলিসি। এছাড়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল তিনি এটা পুনর্বহাল করেছেন। তিনি বলেন, আদালত বলেছেন সংবিধানের ব্যাসিক ডকট্রিন নামে একটি ডকট্রিন আছে। যেগুলোকে পার্লামেন্ট চাইলেও কিছু বিষয়ের সংশোধন করতে পারবে না। পরিবর্তন করতে পারবেন। আদালত বলেছেন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এমন কিছু আনা হয়েছে যা সংবিধানের যে ফ্যাব্রিক সেটাকে নষ্ট করা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, তারা পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়েছিলেন। আদালত বেশ কয়েকটি ধারা বাতিল করলেও অন্যগুলো বাতিল করেননি। আদালত বলেছেন, বাকিগুলোর বৈধতাও তিনি দিচ্ছেন না। সেগুলো ভবিষ্যৎ সংসদের জন্য রেখে দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কাঠামোর একটি অংশ। যেহেতু নির্বাচন, গণতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কাঠামো, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছে, সেহেতু এটি সংবিধানের একটি মূল কাঠামো। এটা ঐতিহাসিক রায়। শরীফ ভূঁইয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে বড় বাধা দূর হলো। তবে সেটা এখনই ফিরে এসেছে বলা যাবে না; কারণ সেটা বাতিল করা হয়েছিল দুইভাবে। আদালতের রায় ও সংসদ কর্তৃক সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বদিউল আলম মজুমদার ও আরো চারজন এ বিষয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেছেন। জানুয়ারিতে শুনানি হবে। সেটা আবেদনকারীদের পক্ষে নিষ্পত্তি হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরবে।
যা বললেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা : রায় ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিবের পক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এ রায়ের ফলে ১৯৯৬ সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল দেশ এখন সেই অবস্থায় ফিরে এসেছে। কাজেই আদালত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা জনগণ গ্রহণ করেছেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর ব্যাপারে আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট ছিল। সেই জায়গা থেকে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন দলটির মহাসচিব। আমরা যে কথাটা বলে এসেছি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। আজকে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে তাই প্রমাণ হয়েছে। আওয়ামী লীগকে চিরস্থায়ী ক্ষমতায় রাখা এবং শেখ হাসিনাকে চিরস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী রাখার জন্য এই সংশোধনী আনা হয়।
যেসব বিষয় বাতিল করা হলো : এক. সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ সংক্রান্ত ৭ক অনুচ্ছেদে (১) বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায়-(ক) এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে-তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। (২) কোনো ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত- (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উসকানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে-তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে। (৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে। সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত ৭ ‘খ’তে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সব অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে। দুই. মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ সংক্রান্ত ৪৪ (২) এ বলা হয়েছে, এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনো আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সব বা উহার যে কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন। তিন. তত্ত্বাবধায়ক সংক্রান্ত ৫৮ক অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত এবং ক পরিচ্ছেদ এ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত। চার. সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা সংক্রান্ত গণভোটের বিধান বাতিল সংক্রান্ত ১৪২ এর অনুচ্ছেদ।
গতকাল রায়ের দিন রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদ উদ্দিন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। রিটকারী ড. বদিউল আলম মজুমদার, তার আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। বিএনপির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ।
যা বললেন ড. বদিউল আলম মজুমদার : রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রিটকারী ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমি খুব উৎফুল্ল, আনন্দিত এবং অত্যন্ত সন্তুষ্ট এই রায়ে। আমি মনে করি যে এটা একটা ঐতিহাসিক রায়। এটা একটা সেমিনাল জাজমেন্ট। তিনি আরো বলেন, আজকে তিনি শুধু তার জন্য নয়, পুরো দেশবাসীর জন্য আনন্দিত। এই রায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসার একটা গুরুত্বপূর্ণ দ্বার উন্মোচিত হলো। তবে এটা নির্ভর করবে ভবিষ্যতে কিভাবে আচরণ করা হয়। গণতন্ত্র ফিরে আসা, গণতান্ত্রিক উত্তরণ মানে একটা পরিবর্তন। সবাই যদি আচরণে পরিবর্তন আনে, রাজনীতিবিদরা যদি তাদের আচরণে পরিবর্তন আনেন, সবাই নিজেদের করণীয় করেন, তাহলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। আর তা না হলে ফিরবে না।
এর আগে পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও সংস্থা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।