২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ৯:৩৫

রেলের ভাড়া বাড়ছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত

যাত্রীবাহী ট্রেনে রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার

যাত্রীবাহী ট্রেনের রেয়াত-সুবিধা (ছাড়) প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৪ মে থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এর ফলে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল ও কমিউটার-সব ধরনের ট্রেনের ভাড়া বাড়বে। তবে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন সিদ্ধান্তের পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শোভন শ্রেণীর ভাড়া বাড়বে ৬০ টাকা। এসি স্নিগ্ধা শ্রেণীর ভাড়া ১২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। আর এসি কামরায় ঘুমিয়ে যাওয়ার (বার্থ) ভাড়া বাড়বে ২১৬ টাকার মতো। তবে ঢাকা থেকে নরসিংদী, জয়দেবপুর, ফরিদপুরসহ কম দূরত্বের (১০০ কিলোমিটারের কম) কোনো ট্রেনেই ভাড়া বাড়বে না।

গতকাল রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীর সাথে ৪ মে থেকে রেলের ভাড়া বাড়ছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ভাড়া বাড়ছে না, বিভিন্ন দূরত্বে দেয়া রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছি।

গত সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেয়াত-সুবিধা প্রত্যাহার ও তা কার্যকর করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হয় না। কিন্তু এর বেশি ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে ছাড় রয়েছে। ১০০ কিলোমিটারের পরবর্তী ১০১ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়ার ওপর ২০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়। ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করলে ছাড় পাওয়া যায় ২৫ শতাংশ। আর ৪০১ কিলোমিটারের ওপরে ৩০ শতাংশ ছাড়। এই ছাড় প্রত্যাহারের কারণে সম হারে ভাড়া বাড়বে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে রেলে প্রতি কিলোমিটারে ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা। এর সাথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণীর বিভিন্ন হারে ভাড়া যোগ হয়। সাথে যোগ হয় ভ্যাট। এভাবেই মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এবার ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে আরো বাড়তি ভাড়া যোগ হবে।

রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকার বিভিন্ন খাত থেকে আয় বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রেলের লোকসানও বছরে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে। এ পরিস্থিতিতে ভাড়া না বাড়িয়ে রেয়াত বাতিল করে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। এতে সংস্থাটি বছরে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে বলে প্রাক্কলন করেছে।
রেয়াত বা ছাড় প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাঠানো হয়। ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া যায় বলে প্রকাশিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরপর রেলপথ মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করতে রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। ১ এপ্রিল থেকেই ছাড় প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম কিছুদিন পর কার্যকরের নির্দেশনা দিলে বিষয়টি আটকে যায়।

রেলের কর্মকর্তারা জানান, সারা বিশ্বেই সব ধরনের পরিবহনে বেশি দূরত্বের ভ্রমণে উৎসাহী করতে ছাড় দেয়া হয়। রেলে ১৯৯২ সাল থেকেই নির্দিষ্ট রেয়াত দেয়া হচ্ছে। সে সময় বেশি দূরত্বের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু পথে ভাড়া ছাড় দেয়া হতো। ২০১২ সালে রেলের ভাড়া গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক রেয়াত বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালে আরেক দফা সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো হয়। তবে বেশি দূরত্বে ভ্রমণের রেয়াত বহাল থাকে। তবে গত বছরের শেষের দিকে চালু হওয়া একমাত্র ঢাকা-কক্সবাজার পথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে কোনো ছাড় রাখা হয়নি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/830142