২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৪৪

গরমে চরম ভোগান্তিতে শ্রমজীবী মানুষ হিটস্ট্রোকে সারাদেশে আরো ৫ জনের মৃত্যু

তীব্র তাপদাহে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে হিট এলার্টের মেয়াদ আরও তিনদিন বাড়ানো হয়েছে। শরীর সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে নিদের্শনা। গতকাল বিকালের খবর অনুযায়ী তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের চার জেলাসহ ছয় স্থানে। এগুলো হলোÑ চুয়াডাঙ্গা, যশোর, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, ঈশ্বরদী ও কুমারখালী। এ ছাড়া আট বিভাগের ১০ স্থানে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ, অর্থাৎ সেখানের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে। এই এলাকাগুলো হলো- ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বগুড়া, বাদলগাছী, তাড়াশ, সৈয়দপুর, খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা। এছাড়া দেশের বাকী অংশের মানুষও কোনভাবেই শান্তিতে নেই। তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।

জানা গেছে ঢাকা মেডিকেল নার্সিং কলেজের পেছনের রাস্তায় আব্দুল আওয়াল নামে এক রিকশা চালকের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ওই রিকশা চালক অচেতন হয়ে গেলে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরীক্ষ-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকার বাইরে থেকেও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। এরমধ্যে দিনাজপুরে দুইজন, পাবনার একজন এবং পাবনার বাগমারায় একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকায় রিকশা চালান শফিকুল ইসলাম (৫০)। প্রতি বছরই গ্রীষ্মের সময়টাতে রিকশা চালাতে কষ্ট হয় তার। তবে এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে রিকশা চালানো আরও বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই কাঠফাটা রোদের মধ্যেই প্যাডেল ঘুরিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে তাকে। শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকায় খুব গরম বেড়েছে। তবে এবারের মতো গরম আর পড়েনি। রাস্তায় বের হলেই শরীরটা রোদে পুড়ে যায়। কিন্তু আমাদের তো আর ঘরে বসে থাকার উপায় নাই। গরম পড়লেও রিকশা নিয়ে বাইরে বের হতে হয়।

এই সময়টায় রিকশাচালকরা কিছু টাকা বেশি পেলেও লাভ তেমন হয় না। কারণ একবার বা দুইবার যাত্রী বহন করলেই আধাঘণ্টার বেশি বিশ্রাম নিতে হয়। আবার চাইলে বেশি দূরের যাত্রী বা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যায় না। গরমের কারণে রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যাও কম। শরীর ভালো রাখতে খেতে হয় বিভিন্ন ধরনের পানীয়। ফলে আয়ের তুলনায় ব্যয়টাই বেশি হয়ে যাচ্ছে রিকশাচালকদের। রিকশাচালক শফিকুল বলেন, আগে ৮ ঘণ্টা রিকশা চালাতে পারলে এখন চালাতে হয় ৪ ঘণ্টা। বাকি ৪ ঘণ্টা বিশ্রাম করতে হয়। নইলে শরীরে শক্তি পাই না। ভাড়া কিছুটা বাড়ছে। গরমের কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ১০ টাকা হয়তো বেশি নেওয়া যায় যাত্রীদের কাছ থেকে। কিন্তু সেটা থাকে না। বরং দুই-তিনবার যাত্রী বহন করলে একটু ঠান্ডা শরবত খেতে হয়। এতে চলে যায় ২০-৩০ টাকার বেশি।

শফিকুলের মতোই গরমে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন রাজধানীর শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের মানুষেরা। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে বইছে তাপপ্রবাহ। এতে হাঁসফাঁস দশা সবার। বিশেষ করে শ্রমজীবীদের এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে ঘরের বাইরে কাজ করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কে গাছের পরিমাণ কমায় পরিবহনের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা ঠিকমতো বিশ্রামের জায়গাটুকুও পাচ্ছে না।
রাজধানীর পান্থপথ এলাকার প্রধান সড়কের পাশে একটি নিমগাছের নিচে বিশ্রাম করছিলেন কয়েকজন রিকশাচালক। তাদের একজন মোমিন, মাত্রই মতিঝিলে যাত্রী নামিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ধানমন্ডি থেকে মতিঝিল যেতে পথে তিনবার দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতে হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় তো বিশ্রাম নেওয়ার মতো গাছ পর্যন্ত নেই। শরবত খেতে হয়েছে দুই বার। আমাদের মতো গরিবদের কষ্ট সয়ে গেছে। গরম হোক বা শীত, আমাদের বসে থাকার অবসর নেই।

পুরান ঢাকার লালবাগ থেকে নডুলসের প্যাকেট নিয়ে মিরপুরে একটি দোকানে যাচ্ছিলেন ভ্যানচালক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, পুরান ঢাকা থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত আসতে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। পথে ১০-১২ বার দাঁড়াতে হয়েছে বিশ্রামের জন্য। এমন গরম না থাকলে হয়তো দুইবার দাঁড়ালেই এখানে চলে আসতে পারতাম। এই গরমে মাল টানতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু এই কাজ ছাড়া আর তো কিছু করার নেই। এই কাজ না করলে খাবো কী? আগে দিনে দুই তিন জায়গায় পণ্য আনা-নেওয়া করতাম। কিন্তু এখন একবার নিয়ে আর পারি না। শরীর সায় দেয় না। আবার রাস্তায় গাছও নেই যে, একটু শান্তিতে বিশ্রাম নেব। চায়ের দোকানই ভরসা। খামারবাড়ি পার হলে হয়তো একটু গাছের ছায়ায় যেতে পারব।

গরমের কারণে যাত্রী কমেছে রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেল চালকদেরও। সাইফুল ইসলাম নামে এক রাইডার বলেন, গরমের কারণে দিনের বেলা যাত্রীরা মোটরসাইকেলে উঠতে চায় না। কারণ যানজটে পড়লে রোদে খুবই খারাপ লাগে। রাতে হয়তো কিছুটা যাত্রী পাওয়া যায়। ফলে আগে যেখানে কয়েক ঘণ্টা রাইড শেয়ার করলেই এক হাজার টাকা আয় হতো, সেখানে এখন সারা দিনেও এক হাজার টাকা আয় হয় না।

একই অবস্থা সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালকদেরও। হেলাল উদ্দিন নামের এক চালক বলেন, সিএনজিতে অনেক তাপ লাগে। যার কারণে মানুষ উঠে হাঁসফাঁস করে। আর তাছাড়া রাস্তায় মানুষও কম। আগে যে সময়ে ১০ বার যাত্রী পরিবহন করতাম, সেখানে এখন ৬-৭ বার করতে হয়। একই অবস্থা বাসচালক, লেগুনা চালকসহ সব শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের সব মানুষের। তাপদাহ এসব মানুষের কষ্টের জীবনকে করে তুলেছে আরও কষ্টদায়ক।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে দেশের চার জেলায় উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এসব এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। তবে সিলেটবাসীর উপভোগ করেছেন স্বস্তির বৃষ্টি। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় একমাত্র সিলেটেই বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ২০ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গরমে স্বাভাবিকভাবেই স্যালাইনের চাহিদা বাড়ে। তবে এবারের অত্যধিক গরমে সে চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। কথা হয় শ্যামলী রোডে অবস্থিত বরিশাল ফার্মেসির কর্মচারী শাওন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গরম বাড়ার পর থেকে স্যালাইনের চাহিদা বাড়ছে, বিক্রিও বাড়ছে। স্যালাইন ছাড়াও গ্লুকোজ, নাপা, প্যারাসিটামল ইত্যাদি পণ্যেরও বিক্রি বেড়েছে। বেশি গরমে অনেকের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, অনেকের ডায়রিয়া হয়, তাই চাহিদাটাও বৃদ্ধি পায়।

টাউন হল মার্কেটের বিসমিল্লাহ ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী নাজমুল চৌধুরী বলেন, স্যালাইনের বিক্রি আগের চাইতে বেড়ে গেছে। অন্য সময় দিনে হয়তো ২ থেকে ৪ প্যাকেট স্যালাইন বিক্রি করতাম, এখন ১০ থেকে ২০ প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। অনেকে আবার বক্সসহও কিনছেন।
অধিকাংশ ফার্মেসিতে এসএমসির ওরস্যালাইন ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির স্যালাইন তেমন একটা দেখা যায়নি। এসএমসি স্যালাইনের চাহিদা বেশি হওয়ায় ফার্মেসিগুলো অন্য কোম্পানির স্যালাইন রাখছে না। প্রতি প্যাকেট এসএমসি ওরস্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকায় এবং একই কোম্পানির টেস্টি স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। এদিকে চিকিৎসকরা এই গরমে স্যালাইনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি, লেবুর শরবত, তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার ও পানীয় না খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট :
দিনাজপুর অফিস: সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। আর এই তাপপ্রবাহে দিনাজপুর ফুলবাড়ীতে হিটস্ট্রোক হয়ে দু’জন মারা গেছেন। তারা হলেন- পৌর এলাকার চকসাবাজপুর গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোতাহার আলী (৫৮) এবং অপরজন যশোর কোতয়ালী থানা এলাকার রাজারহাট গ্রামের ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন (৫২)। ২১ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান। নিহত মোতাহার আলীর ছেলে সানজিদ আহম্মেদ সুইট বলেন, হঠাৎ করে শনিবার আমার বাবা জ্বরে আক্রান্ত হন। বাসাতে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট নেয়ার সময় বিকেলে বাবা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ট্রাক মালিক সোহরাব হোসেন বলেন, যশোর থেকে পাথরের ডাস্টের ভাড়া আনতে বড়পুকুরিয়া এলাকায় যান ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন। ২০ এপ্রিল শনিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শুনেছি স্ট্রোক করে ড্রাইভার বিল্লালের মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়রা ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। এখানে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোতাহার আলীরও মৃত্যু একই কারণে হয়েছে।’
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, দিনাজপুর জেলাতে গত কয়েক দিন থেকে ৩৩ থেকে ৩৬ ডিগ্রির মধ্যেই তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ২১ এপ্রিল রোববার বেলা ৩টায় দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা ছিল ৪৪ শতাংশ। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ভূট্টার ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে আলাউদ্দিন আলী আলাল (৪৩) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে তীব্র তাপদাহের মধ্যে পাবনায় হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো দুইজনে। রোববার (২১ এপ্রিল) দুুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। মৃত আলাউদ্দিন আলী আলাল উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়য়নের নেউতিগাছা এলাকার মো. ইউসুফ আলীর ছেলে।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকালে দিকে চাটমোহরে ভুট্টার ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে আলাউদ্দিন আলী আলাল অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে উদ্ধার করে আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এবিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে সকালে ভর্তি হয়েছিল, পরে দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়, পাবনা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন উনি কি জন্য মারা গেছেন।
আলাউদ্দিন আলী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে প্রতিদিনই মানুষ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক রোগী হাসপাতালে আসছে। চাটমোহরের আলাউদ্দিন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এসেছিলেন বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা।’

এর আগে শনিবার দুপুরে পাবনা শহরে হিট স্ট্রোক করে সুকুমার দাস (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এদিন পাবনা শহরের রূপকথা রোডে একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় হিট স্ট্রোক করেন তিনি। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সুকুমার দাস শহরের শালগাড়িয়ার জাকিরের মোড়ের বাসিন্দা।

মেহেরপুর জেলায় ৪১/৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে এত করে জনজীবন অতিষ্ঠ। তীব্র তাপপ্রবাহ কারণে মেহেরপুর জেলায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবিকার সন্ধানে বাহিরে যেতে পারছে না। মেহেরপুর বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ এটা আরো কয়দিন চলবে। মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনমূলক মাইকিং করেছে কোন জরুরি কাজ ছাড়া জনগণ কে বাহিরে না আসার পরামর্শ দিয়েছে ।

চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। বৈশাখের প্রথম দিন থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে তা এখন তীব্র তাপপ্রবাহের রূপ নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামনিুর রহমান জানান, গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৯ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায়ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস,বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৬ শতাংশ এবং বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। নি¤œ ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। বাইরে রোদের তীব্র তাপ ও অসহ্য গরমে মানুষ এক প্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। অতি প্রয়োজন কেউ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তবে নি¤œ আয়ের দিনমজুর ও শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে কাজের তাগিদে বাইরে বের হচ্ছে।

তীব্র দাবদাহে সারাদেশের মতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নওগাঁর জনজীবন। হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর ও সর্দিজনিত রোগী। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চারগুণ রোগী ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। সোমবার দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সকালে মোট রোগী ভর্তি ছিল ৩০২ জন। এরমধ্যে শিশু রোগী ৫৮ জন। দুপুর পর্যন্ত আরও ১৪ জন যোগ হয়ে মোট শিশু রোগী দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। এদের অধিকাংশই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের ১৫ শয্যার বিপরীতে এত রোগীর চাপ সামাল দিতে বারান্দায় শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

দায়িত্বরত নার্সরা বলছেন, তীব্র গরমে গত কয়েকদিনে রোগীর চাপ বেড়েছে। সেবা দিতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। তারপরও তারা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি এলাকার জুঁই আক্তার তার ১০ মাস বয়সী ছেলে আয়ানকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রচ- গরমে আমার ছেলের ডায়রিয়া হয়েছে। তিনদিন হলো হাসপাতালে ভর্তি। এখন কিছুটা সুস্থ হলেও হাসপাতালে আরও দুই-তিনদিন থাকতে হবে। তবে ওষুধ ও স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। শহরের কোমাইগাড়ি এলাকার আয়নাল হক তার দেড় বছরের মেয়েকে দুদিন হলো হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে মেয়েটা অসুস্থ। হাসপাতালে আনার পর জানতে পারলাম নিউমোনিয়া হয়েছে।

আয়নাল আরও বলেন, এ গরমে বাচ্চাদের নিয়ে সবাইকে খুব মুশকিলে পড়তে হয়েছে। রোগীর চাপে হাসপাতালে সহজে বেড পাওয়া যাচ্ছে না। তাপমাত্রা না কমা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, হঠাৎ তাপমাত্রা বাড়ায় মানবদেহেও এর প্রভাব পড়ছে। প্রচ- গরমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি ও জ্বর হচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে রোদের মধ্যে ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় ভালো। তবে প্রয়োজনে বের হতে হলে ছাতা মাথায় দেওয়া বা টুপি ব্যবহার করতে হবে। ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের পাশাপাশি বাইরের খাবার না খাওয়া; বিশুদ্ধ পানি পান করা এবং বেশি করে তরল খাবারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিশুদের শরীর ঘেমে গেলে তা মুছে দিতে হবে। বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল ৩টায় জেলায় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

https://www.dailysangram.info/post/554284