৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:৪৭

খুলনায় লোডশেডিং ও তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

একদিকে চৈত্র মাসের তীব্র তাপদাহ, অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। এ যেন ঠিক মরার উপর খাড়ার ঘা। গত ৪ দিন যাবৎ খুলনা শহরে তীব্র লোডশেডিং-এ নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমের হাসফাস অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খুলনাবাসী। সামান্য গরমেই যেখানে বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিহার্য, সেখানে রেকর্ডিও তাপমাত্রায় ঘন ঘন হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বিদ্যুতের ব্যাপক লোডশেডিং জনজীবনকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। রোযাদাররা পড়ছেন চরম বিপাকে। ঘরে-বাইরে নেই শান্তি। সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

ওজোপাডিকোর সূত্র মতে, ২ এপ্রিল খুলনা সাউথ ডিভিশনে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪০ কিলোওয়াট। কিন্তু সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ছিল মাত্র ২০ কিলোওয়াট। ৩ এপ্রিল এই ডিভিশনে বিদ্যুতের একই চাহিদা থাকলেও সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ছিল ৩০ কিলোওয়াট। প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় এই বিভ্রাট হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুত্রটি। এছাড়া আগামী ৪ থেকে ৫ দিন এমন লোডশেডিং থাকতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।

এদিকে কেউ কেউ আইপিএস বা জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুতের অভাব মেটালেও দ্রর্বমুল্যের বাজারে গরিব-খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে মোমবাতি জোগাড় করাই কষ্টসাধ্য। বিদ্যুৎ সংকটে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালে রোগীদের সেবায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

খুলনার একটি বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, সারাক্ষণ বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে রোগীদের ঠিকমতো সেবা দিতে পারছি না। এছাড়া রোযাদার না রাতে ঘুমাতে পারছেন, না দিনে। সেহরি, ইফতার এবং তারাবীতেও নেই শান্তি। শহরের বিভিন্ন স্থানের ঈদ মার্কেটগুলোতে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে । পানির টাংকিতে পানি না থাকায় পারছেন না গোসল করতে। ঈদ মার্কেটে গিয়ে পারছেন না সুখে শান্তিতে ঈদ মার্কেটিং করতে।

খুলনা রেলওয়ে মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা রফিকুল ইসলাম জানান, “গতরাতে সর্বমোট বিদ্যুৎ ১ ঘন্টা করে থাকছে। আমাদের ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটেছে। সকালবেলা একটু ঘুমাবো তাও শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। সকাল থেকে আবারও লোডশেডিং শুরু, এ সুযোগে আসলাম ঈদের কেনাকাটা করতে এখানেও শান্তিতে দোকানে কেনাকাটা করা যাচ্ছে না”।
খুলনা মহানগরীর মির্জাপুর রোডের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, “মাস শেষে আমরা ঠিকই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি, কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই এ ভোগান্তি আর কতদিন”।

সরদার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান জানান, “মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে সেহরি ও ইফতার ঠিকমতো করতে পারিনা। তারাবি কিংবা তাহাজ্জুদে একটু প্রশান্তি নিব তাও সম্ভব হয় না। শুধু মাহে রমযান আসলেই কেন এমনটা হয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রশ্ন।

স্থানীয় অটোচালক মকবুল হোসেন জানান, “আমাদের রিজিক অন্বেষণ এর একমাত্র পথ এ ইজিবাইক। রাতে চার্জ না হওয়ার কারণে দিনের বেলা অটো নিয়ে বের হতে পারি না। ফলে দৈনন্দিন বাজার করা বন্ধ। ইফতারও করতে পারিনা, ঈদের কেনাকাটাও করা হয়নি”। তবে এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা মাহামুদুল হক জানান, জেনারেশন গ্যাপের কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণেই ঘন ঘন লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে । তবে, পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী ঈদের পূর্বমুহূর্তে কমে যাবে লোডশেডিং। এছাড়া জানা যায় অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকেই এয়ার কন্ডিশন ও, বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়ে রাখছে সর্বত্র। ফলে আরো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

ঈদ ঘনিয়ে আসায় ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমল, বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অসহ্য ভ্যাপসা গরমে কষ্ট হলেও ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।

পিকচার প্যালেচের মোড়ের ফুটপাতের দোকানি বাবু বলেন, জীবনে এত গরম কখনো অনুভব করিনি। তারপরও রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেচাকেনা করছি। ষাটোর্ধ্ব ইজিবাইক চালক মিন্টু বলেন, প্রয়োজন ছাড়া কেউ এত গরমে ঘর থেকে নামছেন না।
এদিকে দুপুর হতেই তেতে ওঠেছে সূর্য। তীব্র গরমে শরীর থেকে দরদর করে ঝরছে ঘাম, গলা শুকিয়ে প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। প্রচন্ড তাপের আঁচে গা পুড়ে যায় যায় অবস্থা। তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খুলনার জনজীবন। শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অসহনীয় গরমের তীব্রতা। এমন অবস্থায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রিকশাচালকসহ দিনমজুর মানুষ। তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে অনেকখানি বেশি। রোযা রেখে তীব্র গরম সহ্য করে চালিয়ে নিতে হচ্ছে জীবিকা নির্বাহের কাজ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। জলীয় বাস্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। খুলনায় আজকে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

https://www.dailysangram.info/post/553284