৩০ মার্চ ২০২৪, শনিবার, ১:০০

উত্তাপ বাড়ছে মাছ ও মাংসের দামে

রোজার অর্ধেক শেষ। ঈদ ঘনিয়ে আসছে। ঈদের সময় যতই কাছাকাছি চলে আসছে বাজারে মাছ ও মাংসের দামও যেন ততই বাড়ছে। এ ছাড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, আলু ও তেলের দামও উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে। অথচ নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও সুফল মিলছে না। ১৫ই মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মাছ, মাংসসহ ২৯টি পণ্যের খুচরা মূল্য বেঁধে দেয়। দাম বেঁধে দেয়ার দুই সপ্তাহ পরও এসব পণ্যের অধিকাংশই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তালিকা অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে গরু, খাসি ও ব্রয়লার মুরগির দামও। রমজানের শুরু থেকেই গরু, মুরগি, খাসিসহ সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েই চলেছে। প্রথমদিকে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি থাকলেও এখন ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি খাসির মাংস। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী, প্রতি কেজি গরুর মাংস খুচরায় ৬৬৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৮০ টাকায়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। গত কয়েকদিন ২১০ থেকে ২২০ টাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হলেও, এখন তা বেড়ে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। সেই সঙ্গে অন্য সব ধরনের মুরগির দামও বেড়েছে বাজারে।
বাজারে সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়, কক মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুচরায় ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ২৬২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাইনুল বলেন, সবকিছুর দাম এত বাড়তি যে, কিনে খাওয়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রমজান মাস আসলে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়া হয়, অথচ আমাদের দেশে কে কতো বেশি দাম নিতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা চলে। ব্যবসায়ী, অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি। তিনি বলেন, সব মাংসের দাম বেশি কোনো মতে ব্রয়লার মুরগি কিনে মাংসের চাহিদা পূরণ করে মানুষ। অথচ সেই মুরগির দামও বাড়তি। কিছুদিন আগেই ছিল প্রতি কেজি ১৮০ টাকা সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি দাঁড়িয়েছে ২৩০ টাকা। এভাবে যদি নিয়মিত দাম বাড়তে থাকে তাহলে সংসারের ব্যয়ভার কীভাবে বহন করবে। আরেক ক্রেতা রহমান বলেন, কিছুদিন আগে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নাটক করে ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, সেই মাংসই এখন সব জায়গাতেই ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ব্যবসায়ী এরশাদ বলেন, মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। তাই বাড়তি দাম দিয়ে আমাদেরও মুরগি কিনতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে যখন দাম বৃদ্ধি পায় তখন খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ে।

অন্যদিকে মগবাজারে একটি গরুর মাংস বিক্রেতা আজাহার বলেন, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। তারপরও লাভ হচ্ছে না। কারণ গরুর দাম, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতনসহ সব খরচ দিয়ে লাভ থাকেই না। ইতিমধ্যে ঢাকা শহরের অনেক গরুর মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়তি দামের কারণে মানুষ গরুর মাংস কেনা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। যে দোকানে আগে সারাদিনে একটি গরুর পুরো মাংস বিক্রি হতো, এখন সেই দোকানেই অর্ধেকও বিক্রি করতে পারে না। গতকাল রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা বৃহস্পতিবারও ছিল ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। টমেটো কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা অন্যান্য দিনে ৩০ টাকাতেই পাওয়া যায়। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, যা আগের দিন ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। শসা যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা, এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য আলু বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, তুলনামূলক সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ৪০।

এ ছাড়াও বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শালগম ৪০, লাউ ৫০-৮০ টাকা প্রতি পিস, শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের বাজারেও কিছুটা উত্তাপ দেখা গেছে। বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। বড় সাইজের আইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি, মলা মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিতল মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, শোল ছোট সাইজের প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, আর মাঝারি সাইজের ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরপুঁটি মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। তানজিল নামের এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ইদানীং বাজারে এলে মাছ কিনতে পারি না বাড়তি দামের কারণে।

বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছও এখন বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। দরদাম করে সবশেষে তেলাপিয়া মাছ কিনলাম তাও ২২০ টাকা কেজি দরে। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষরা কোনো মাছই এখন সেভাবে কিনতে পারছি না। এদিকে মাছ বিক্রেতা আতিক বলেন, এই সপ্তাহের তুলনামূলক মাছের দাম অনেকটাই বেশি। কারণ আমরা বলতে পারবো না, আড়তদাররাই ভালো বলতে পারবে। এই সপ্তাহ পুরোটাই মাছের দাম বেশি গেছে। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দাম বেঁধে দেয়ার সরকারি উদ্যোগটি ভালো ছিল। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন কতোটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই আমাদের সংশয় ছিল।

https://mzamin.com/news.php?news=103830