১৪ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ৫:৫৯

ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন অবস্থানে দুই মন্ত্রণালয়

ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন অবস্থানে দুই মন্ত্রণালয়। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন অনুমতি দেওয়া হলে বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। অপর দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, বাজার ব্যবস্থা বিন্যাস করতে পারলে আমদানির প্রয়োজন হবে না। তবে তিনি বলেছেন, একটি ডিমের মূল্য ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কারণ ডিমের প্রতিটির উৎপাদন খরচ ১০.৫০ টাকা। ফলে ১২ টাকায় বিক্রি হলে উৎপাদকরা লাভ করতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিম পরিস্থিতি নিয়ে রোববার পৃথকভাবে দুই মন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। বিকালে সচিবালয়ে ডিমের পরিস্থিতি নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বৈঠক বলা হয়, প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের আরও বেশি যুক্ত করতে হবে। এটি করতে হলে ডিমের সঠিক মূল্য দিতে হবে। না হলে প্রান্তিক পর্যায়ে লোকসানের কারণে খামারিরা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে আগামীতে আরও উৎপাদন কমে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ওই বৈঠকে ডিমের মূল্য বেঁধে দেওয়ার প্রসঙ্গ আসে। এতে খামারিরা রাজি হননি। এ সময় খামারিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে খুচরা বাজারে এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা করলেও খামারিরা লোকসান গুনছেন। এরপর মূল্য বেঁধে দেওয়া হলে তারা আরও লোকসানে পড়বেন। এতে খামারি পর্যায়ে কেউ নতুন করে উৎপাদনে আসবেন না। বৈঠকে আরও বলা হয়, বড় খামারিদের একটি ডিম উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে ১০.৩১ টাকা এবং ছোটদের খরচ হচ্ছে ১০.৮৫ টাকা।

বৈঠক শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ডিমের দাম কমাতে আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘ডিম আমদানির বিষয়টি অন্যভাবে বিবেচনা করা হবে। এটি স্বাধীনভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে। আমদানি করা না করা তাদের বিষয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশে যে উৎপাদন আছে, বাজার ব্যবস্থা বিন্যাস করতে পারলে আমদানির প্রয়োজন হবে না। তিনি আরও বলেন, দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা চলবে না। আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, এ দেশের মানুষের খাদ্যের একটি বড় জোগান ডিম। এক্ষেত্রে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকেও এ বিষয়ে ভাবতে হবে।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, ডিমের উৎপাদন খরচের হিসাবে একটি ডিম ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। উৎপাদনকারীদের বিভিন্নভাবে অনুরোধ করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি কেউ জনদুর্ভোগ ডেকে নিয়ে আনে সেক্ষেত্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইন আছে। তারা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন।’

এর আগে সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলে টিসিবি পণ্য বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন। বাজারে ডিমের দাম কত হবে তা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে দিলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাইলে ডিম আমদানি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমদানির সুযোগ নেই। আশা করি খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সবুজ সংকেত দিলেই ডিম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাজারে একটি ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরিব মানুষ এখন ডিম কিনে খেতে পারছে না। কারণ এটি তার বাজেটের বাইরে চলে গেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, একশ্রেণির ফড়িয়া বাজারকে অস্থির করে তুলছে। অবশ্য এরই মধ্যে ডিমের বাজারে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/706673