থানচি সড়কে ৩০ কিলোমিটারে পুড়াপাড়া এলাকায় টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের সঙ্গে ধসে পড়েছে পাকা সড়কও- সমকাল
১২ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ১২:৫৬

ধস-বন্যায় বিপর্যস্ত পাহাড়ে দুর্ভোগ

বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলো বাদে অধিকাংশ স্থান থেকে নেমে যেতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এতে ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিহ্ন। পানি নেমে গেলেও মানুষের দুর্ভোগ কমছে না বরং বেড়েছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের বিভিন্ন দুর্গম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কোথাও কোথাও সেনাবাহিনী, জেলা-উপজেলা প্রশাসন এবং বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

চট্টগ্রামে বৃষ্টি না হলেও রোদের দেখা নেই

নগরীর নিচু এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ পুরোপুরি কাটেনি। টানা পাঁচ দিন নিচু এলাকার বেশির ভাগ ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে পানি জমে ছিল। সে পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়ি ও দোকানপাটে এখন থিকথিক করছে কাদা। ভিজে যাওয়া মালপত্র শুকানোর চেষ্টা করছেন ভুক্তভোগী মানুষ। কিন্তু রোদ না ওঠায় মালপত্র শুকানো যাচ্ছে না।

এদিকে বৃষ্টি না হলেও গতকাল তেমন রোদ ছিল না চট্টগ্রামে। অনেক এলাকায় কয়েকদিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ইতোমধ্যে স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

রাঙামাটিতে এখনও প্লাবিত নিচু এলাকা
জুরাছড়ি উপজেলার চার ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও বরকল উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে এবং এতে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি। তবে নিচু এলাকাগুলো এখনও প্লাবিত। বন্যায় অন্তত দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি ও এক হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। দুর্গত মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসন ত্রাণ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র বলছে, বন্যার কারণে রাঙামাটির ১০ উপজেলায় ৩ হাজার ১৩৫ দশমিক ৫৫০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমির ফসল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর ও জুরাছড়িতে ২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির।

বান্দরবান ধসে নিশ্চিহ্ন অনেক সড়ক
পাহাড় ধসে রুমা ও থানচি উপজেলা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। এখনও জেলা শহরের সঙ্গে রুমা-থানচি উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রুমা ও থানচি সড়কে কবে নাগাদ যান চলাচল স্বাভাবিক হবে, তা জানা যায়নি।

গতকাল সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চিম্বুক সড়কের মিলনছড়ি এলাকার পাঁচ জায়গায় পাহাড় ধসে মাটি রাস্তার ওপর স্তূপ হয়ে আছে। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোরের ২০ ইসিবি এক্সক্যাভেটর দিয়ে রাস্তার মাটি সরানোর কাজ করছে। আট মাইল এলাকার কয়েকটি জায়গায়ও রাস্তার ওপর পাহাড়ের মাটি স্তূপ হয়ে আছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি মাটিতে পড়ে গেছে। থানচি সড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকার পুড়াবাংলা নামক জায়গায় রাস্তার ওপর বিশালাকার মাটির চাঁই এবং বড় বড় পাথর পড়ে আছে। কিছুদূর গেলেই দেখা যায়, পাহাড় ধসে রাস্তার বিশাল একটি অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার রাস্তাটি পাহাড় ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। থানচির পাহাড়ি পাকা রাস্তাটিও মাটি ধসে হারিয়ে গেছে ঝিরিতে। রুমা সড়কের দলিয়ানপাড়ার প্রায় দুই কিলোমিটার আগে তিন জায়গায় পাহাড় ধসে রাস্তা ভেঙে গেছে। রোয়াংছড়ি উপজেলা সড়কের অনেক জায়গায় পাহাড় ধসে মাটি রাস্তার ওপর পড়েছে। এতে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি, বন্যার পানি ও পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমির ফসল। কী পরিমাণ সড়ক ভেঙে গেছে, তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

লামায় ১ হাজার ৯২০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত
একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ১ হাজার ৯২০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বন্যার পানি ও পাহাড় ধসের কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে গৃহহীনদের। বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য তিন কিস্তিতে ৩৫ টন চাল ও ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

এদিকে লামায় পাহাড় ধসের কারণে ঘরের মাটির দেয়াল চাপা পড়ে রাজিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। এ ছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন উমাচিং মারমা নামে এক যুবক। বন্যা ও পাহাড় ধসে আহত ২৫ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

https://samakal.com/bangladesh/article/2308189222