১২ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ১২:৩৭

অবিরাম বর্ষণে বন্যা

রুমা-থানচি সড়ক ৪ দিন ধরে বিচ্ছিন্ন

বান্দরবানে অবিরাম বর্ষণে পাহাড় ধসে রুমা ও থানচি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিধস্ত সড়কটির কোথাও কোথাও চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে উপজেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। যোগাযোগ বিচ্ছিন থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। সাঙ্গু নদীর ভাঙনে ভবনসহ সাত বাড়ি বিলীন হয়েছে।

ঘটনাস্থলসহ আশপাশের বাড়িঘরে ফাটল দেখা দেওয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দেড়শ পরিবারকে। রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে পানিতে ভেসে গিয়ে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নেমে যাচ্ছে। তবে তাতে কমেনি দুর্ভোগ। টানা বর্ষণে ঘরবন্দি হয়ে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বান্দরবান : রুমা ও থানচি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে রাস্তা। থানচি সড়কের বলিপাড়ার আগে ১২ কিলোমিটার এলাকায়, বিদ্যামনি পাড়া, ভিনতে পাড়া, শীলাঝিড়ি, প্রাতুই পাড়া, পোড়া বাংলোসহ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুমা সড়কের ওয়াইজংশনের কয়েক কিলোমিটার দূরে, মুরুং পাড়ার মুখেসহ সড়কটির কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভেঙে গেছে রাস্তাও। সড়ক বিধস্ত হওয়ায় সোমবার থেকে রুমা ও থানচি উপজেলার সঙ্গে ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কের কোথাও বিশ ফিট, আবার কোথাও চল্লিশ ফিট পর্যন্ত সড়ক ধসে পড়েছে কয়েকশ ফুট পাহাড়ের নিচে। স্থানীয় বাসিন্দা মংসিন হ্লা বলেন, থানচি সড়কের বেশকটি স্থানে বৃষ্টিতে সড়ক ধসে পড়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ৪ দিন ধরে। প্রয়োজনীয় কাজ থাকার পরও বান্দরবান যেতে পারছেন না লোকজন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলাবাসী। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের মাধ্যমে চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় বাসিন্দার থোয়াই হ্লা মং বলেন, রুমা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়েছে পাহাড়। হেঁটে যাওয়ারও ব্যবস্থা নেই কোথাও কোথাও। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় থানচিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে সাঙ্গু নদীর ভাঙনে মধ্যমপাড়ায় দ্বিতল ভবনসহ সাতটি বসতবাড়ি পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ফাটল দেখা দেওয়ায় স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সরিয়ে নেওয়া হলো দেড়শ পরিবারকে।

বৃহস্পতিবাররাতে এ ঘটনা ঘটে। প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবান পৌরসভার চার নাম্বার ওয়ার্ডের মধ্যমপাড়ায় মারমা বাজারের আহম্মদ সওদাগরের গলির মাথায় অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফুলে ফেঁপে ওঠা সাঙ্গু নদীর পানি কমতে শুরু করায় তীরের অনেকস্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়।

রাঙামাটি : রাঙামাটিতে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতির উন্নতি দেখা দিলেও শুক্রবার ফের টানা বর্ষণ হয়েছে। এতে জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে চলেছে। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এদিকে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে বাঘাইছড়িতে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার আগে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ দুই শিশুসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ভাইবোনছড়া এলাকায় এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার নাম মিল্কি চাকমা (মেনকা)। সে পানিতে ডুবে স্রোতে ভেসে গিয়ে দুদিন আগে নিখোঁজ হয়। এছাড়া পৃথক ঘটনায় এদিন বিকালে একই উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের ক্ষিরারচর এলাকায় পানিতে ডুবে স্রোতে ভেসে গিয়ে জুনি চাকমা (৭) নামে এক শিশু নিখোঁজ হয়। পরে সন্ধ্যায় তার লাশ পাওয়া যায়। জুনি চাকমা ওই এলাকার চিগোন্যা চাকমার মেয়ে।

খাগড়াছড়ি : বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মাইনী নদী কমে যাওয়ায় নিচু এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। পানি কমার সঙ্গে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগাম আউশ ও আমনের বীজতলা। বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে অন্তত ৮শ হেক্টর জমি, নষ্ট হয়ে গেছে সবজি ক্ষেত। ডুবে গেছে কবাখালি ও বোয়ালখালি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পুকুর। বন্যায় মেরুং বাজার ডুবে যাওয়ায় দেড় শতাদিক দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েগেছে। ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছায় খুশি আশ্রয়কেন্দ্রের বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষেরা। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে ব্যবসায়ী, পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : লোহাগাড়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করলে ও কমেনি দুর্ভোগ। এলাকার নদী, খাল ও ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে খাল পাড়ের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। ডুবে গেছে মাছের খামার। ২০০ এর অধিক কাঁচাঘর পানিতে তলিয়ে গেছে, বহু বসতঘর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। টানা বর্ষণে ঘরবন্দি হয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। দেখা দিয়েছে খাবার সংকটও। উপজেলার ডলু, টংকাবতী, হাঙ্গর, হাতিয়া, কুলপাগলি, বোয়ালিয়া খালসহ বিভিন্ন ছড়ার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক স্থানে খালের পানি গড়িয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষিজমি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/705942