১২ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ১২:২৫

স্বপ্নের গণতন্ত্র ও বাস্তবতা

ইবনে নূরুল হুদা

আমাদের দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে জনমতের প্রতিফলন ঘটছে না বলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে গুরুতর প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাধীনতার অন্যতম চেতনা স্বপ্নের গণতন্ত্র আজও আমাদের কাছে প্রায় অধরাই রয়ে গেছে। এমন বাস্তবতা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটেই সাধারণ মানুষ অনেকটাই নির্বাচন বিমুখ হতে শুরু করেছেন। ফলে নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার মেয়াদ নবায়নের মহড়া বিবেচনায় নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন দেশের সকল শ্রেণির মানুষ। ভোট দেয়া বা না দেয়ার ওপর নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে না এমন বদ্ধমূল ধারণার প্রেক্ষাপটে এবং দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারের অতিমাত্রায় শক্তি প্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণেই সেসব আন্দোলন সফল হয় নি বলে বিরোধী মহল থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়েছে।

রাজপথের আন্দোলনে বিরোধী দলগুলো যখন ব্যর্থতার বৃত্তেই রয়ে গেছে, তখন বাংলাদেশের বিচ্যুত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কক্ষপথে ফেরানো এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র, উন্নয়ন সহযোগী দেশ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ তাবৎ গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ বেশ নড়েচড়ে বসেছে। তারা সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। সরকার বিষয়টিকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে। এতে তারা অতীতে বেশ সফল হলেও হালে সে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের এই দাবি এখন আর হালে পানি পাচ্ছে না। বিশেষ করে বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো পশ্চিমা বিশ^ সক্রিয় হওয়ায় সরকার অনেকটা লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তারা বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জনপ্রতিনিধিত্ব সরকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো ওকালতি শুরু করেছেন। বিষয়টি সরকারের জন্য বেশ বিব্রতকর হলেও জনগণের পক্ষে স্বাগতই জানানো হচ্ছে। কারণ, তারা এখন যেকোন মূল্যে নিজেদের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পেতে চায়। আর সে পালেই হাওয়া দিচ্ছে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ^।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিষয়টি নিয়ে অতিমাত্রায় তৎপর বলেই মনে হচ্ছে। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিরা ঘনঘন বাংলাদেশ সফর করে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার প্রচেষ্টাসহ জোর তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। পর্যবেক্ষক মহল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ হিসাবেই দেখছেন। আন্তর্জাতিক বোদ্ধামহল থেকে মনে করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫০ বছরের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর করার অপেক্ষায় রয়েছে। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই তারা রীতিমত আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। গত ১১ জুলাই একথা বেশ জোরের সাথেই বলেছেন, গত তিন বছরে বাংলাদেশ সফরকারী মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সর্বোচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা উজরা জেয়া। এশিয়ায় একটি নতুন শীতল যুদ্ধের কথা উঠলে বাংলাদেশকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। তবে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশকে প্রয়োজন বলে মনে করছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সঙ্কট, চীন ও ভারত উভয়ের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল। বিষয়টি এখন জটিল সমীকরণে ঘুরপাক খাচ্ছে।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ ক্রমেই মাথা তুলে দাঁড়ানো শুরু করে। বিগত এক দশকে বাংলাদেশ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে ঈশর্^ণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বলে মনে করা হয়। সরকারের পক্ষেও এমনটিই দাবি করা হচ্ছে। দেশের মাথাপিছু আয় ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভেঙে পড়েছে। একশ্রেণির রাজনীতিকের অতিমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সার কারণেই দেশের গণতন্ত্রের কক্ষচ্যুতি ঘটেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আওয়ামী লীগ দ-মু-ের কর্তার মতই দেশ শাসন করে আসছে। যা বিরোধী মহলে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছে। ফলে বিরোধী তথা ভিন্নমত রীতিমত কোনঠাসা।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী নিজেকে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার হিসেবে উপস্থাপন করেন প্রতিনিয়ত। শেখ মুজিব নেতৃত্বাধীন সরকার সোভিয়েতপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ এবং ১৯৭৫ সালে তার শাসনের শেষে বাংলাদেশকে একটি স্বতন্ত্র একদলীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করে। আর তা দেশের কোন শ্রেণির মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। 

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকারের শাসনামলে দেশে মানবাধিকার এবং আইনের শাসন গুরতরভাবে ধাক্কা খেয়েছে। নির্বাচনে নিয়মিত কারচুপি করার অভিযোগ জোরালো ভিত্তি পেয়েছে এবং সন্ত্রাসের রাজত্ব বিরোধীদের অনেকটাই দুর্বল ও নিস্ক্রীয় করে দিয়েছে। বিরোধী নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা প্রতিনিয়ত নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের একটি তথ্যচিত্রে বাংলাদেশে অপহরণের একটি লোমহর্ষক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা আয়নাঘর (মিরর হাউস) নামে পরিচিত একটি জায়গায় সরকারবিরোধী কর্মীদের অবৈধভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য, কখনও কখনও বছরের পর বছর আটক করে রেখেছে। যা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মারাত্মক লঙ্ঘন।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে অবশ্য আয়নাঘরের বাসিন্দারা বেশি ভাগ্যবান বলেই মনে করা হয়। যদিও এটি পুলিশের একটি সন্ত্রাসবিরোধী আধা-সামরিক ইউনিট হিসাবে গঠিত হয়েছিল। র‌্যাবে থাকা দুইজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা জার্মান মিডিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দফতর থেকে অনুমোদন নিয়ে অভিজাত বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছেন। যা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে খাদের কিনারে দাঁড় করিয়েছে।

এনকাউন্টারে লোকদের হত্যা করার জন্য র‌্যাবের কুখ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিলো যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, এই বাহিনী মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। মার্কিন হস্তক্ষেপ টনিকের মতো কাজ করেছিল-ওয়াশিংটন দেখিয়ে দিয়েছিলো তারা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। রাতারাতি র‌্যাবের অপহরণ বন্ধ হয়ে যায়। বাইডেন প্রশাসন এখনো বাংলাদেশ সরকারকে চাপে রেখেছে। সর্বশেষ মার্কিন পদক্ষেপ হলো, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকেক্ষুন্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোন বাংলাদেশী ব্যক্তির ভিসার ওপর নিষেধাজ্ঞা’। গত জুলাই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন কর্তৃক ঘোষিত নীতিটি বাংলাদেশকে নাইজেরিয়া, উগান্ডা এবং সোমালিয়ার সাথে এক সারিতে রেখেছে। নাইজেরিয়া এবং উগান্ডায় এই নিষেধাজ্ঞাগুলি খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি, তবে আগামী বছরের ভোটের আগে সরাসরি সর্বজনীন ভোটাধিকারের অনুমতি দেয়ার জন্য সোমালিয়ার সরকারকে চাপ দেয়ার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।

বাংলাদেশেও এই মার্কিন প্রেসক্রিপশন কাজ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশীয় পাচারকারীরা তাদের অর্জিত সম্পদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডিয়ান রিয়েল এস্টেটে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন। আর এর পরিমাণ এতটাই যে, কানাডার টরন্টোতে একটি ছোট এলাকা ‘বেগম পাড়া’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এটি সেই এলাকা যেখানে বাংলাদেশের উচ্চবিত্তদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। কানাডা যদি ওয়াশিংটনের নেতৃত্ব অনুসরণ করে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে এটি বাংলাদেশের পাচারকারী রথীমহারথীদের পশ্চিমা দেশে তাদের অবাধ প্রবেশাধিকার কেড়ে নেবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি মেনে বাংলাদেশ সরকার প্রবাসে থাকা মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গবর্নমেন্ট বা এনইউজিকে সমর্থন করতে আগ্রহী নয়। এনইউজি আসলে ২০২১ সালে একটি চীনা-সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানে ভেঙে দেওয়া সংসদের কিছু সদস্যদের নিয়ে গঠিত। মিয়ানমারের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক স্বীকৃত, এনইউজি এবং এর সশস্ত্র শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স ইতিমধ্যেই দেশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু চীন চায় না অং সান সুচির নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্ত মিয়ানমার গড়ে উঠুক।

দীর্ঘদিন ধরে নয়াদিল্লী বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছিল। ভারত তার বিদ্রোহ-প্রবণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে শান্ত রাখার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সমস্ত ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতাদের ভারতে হস্তান্তর করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশের বুকে কোনো ভারত বিরোধী কার্যকলাপ সংঘটিত হবে না। পাশাপাশি একটি বিতর্কিত চুক্তিতে,আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ভারতীয় কোম্পানিকে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। বিনিময়ে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত, আওয়ামী স্বৈরাচারকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলতে দিয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে চীন এবং রাশিয়া প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের শাসনের প্রতি তাদের সমর্থন দেখিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও একই সুর শোনা গেছে। এতে উৎসাহিত হয়ে আরেকটি বিতর্কিত ও বিরোধীদলহীন নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি দৃঢ়ভাবে কাজ করে, ভিসা অনুমোদনের হুমকি এবং একটি স্বচ্ছ ভোটের জন্য তার চাপ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশীরা ১৫ বছরের মধ্যে তাদের প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচনের সাক্ষী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। গত মে মাসে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে লেখা একটি চিঠিতে, মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্য বাংলাদেশে কঠোর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার এবং বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী এবং সামরিক কর্মীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যা ক্ষমতাসীনদের জন্য রীতিমত চপেটাঘাত।

মূলত, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বাইডেন প্রশাসনের আরো সক্রিয় হওয়ার সময় এসেছে। এটি এশিয়ার অন্যান্য কলুষিত রাজনৈতিক নেতাদের সাধারণ জোট গঠনে নিরুৎসাহিত করবে। এর মাধ্যমে মহাদেশ জুড়ে গণতন্ত্রের বার্তা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হতে পারে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন, যেমনটি বব গুড এবং মার্কিন কংগ্রেসের অন্যান্য ১৩ সদস্য উত্থাপন করেছিলেন। তারা বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের তত্ত্বাবধান এবং পরিচালনার জন্য বিশ্বব্যাপী নিরপেক্ষ সরকারদের সাথে একত্রিত হয়ে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভোটারদের ভয়ভীতি, হয়রানি ও হামলা প্রতিরোধে শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রয়োজনের কথাও তারা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশ জাতিসত্ত্বা হিসাবে ছোট হতে পারে, কিন্তু এটি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বোদ্ধামহল মনে করছেন, দেশটিকে আর নিজের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না ওয়াশিংটনের। এমনটিই মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা। ফলে তারা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ সক্রিয়ই রয়েছেন। আর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী।

এমতাবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র এবং বিশে^র তাবৎ শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ যদি বাংলাদেশের কক্ষচ্যুত গণতন্ত্রকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনার জন্য ভূমিকা রাখে এবং তা সফল হয় তাহলে জনগণ এই প্রচেষ্টাকে রীতিমত স্বাগত ও সাধুবাদই জানাবে। কারণ, এতে তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন, কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বাস্তবতা পাবে। সে প্রত্যাশা দেশের স্বাধীনতাপ্রিয়, শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের!

 

 

 

https://www.dailysangram.com/post/532416