১১ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, ১২:০৫

সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে আরো বাড়বে ডিম মুরগির দাম

সরকারি তদারকি না থাকায় পোলট্রি শিল্পে করপোরেটদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে খেসারত দিচ্ছে জনগণ। ডিম মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতার কারণ ন্যায্যমূল্য না পেয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সরবরাহ সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন প্রান্তিক জেলার খামারি সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়- ছোট ছোট খামারি ও ডিলাররা পোলট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটালেও আজ তারা অসহায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৫০ লাখ প্রান্তিক উদ্যোক্তার অধিকাংশ খামারি ব্ল্যাঙ্ক চেকের মাধ্যমে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কোম্পানির দাদন ব্যবসার কাছে। প্রান্তিক খামারিদের ডিম মুরগি বাজারে আসলে দাম কমে যায় উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০.৮৭ টাকা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা হলেও বাধ্য হয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রয় করতে হয়। বাজার করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা এসএমএস দিয়ে বাজার বাড়াতে চাইলে বাড়ে, আবার কমাতে চাইলে কমে। অন্য দিকে করপোরেট গ্রুপের মুরগি বাজারে আসলে তারা দ্বিগুণ লাভ করেন। করপোরেটদের একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কম, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৯ থেকে ১৩০ টাকা। প্রান্তিক ও করপোরেটদের উৎপাদন খরচই বলে দেয় বাজারের পরিস্থিতি। সরকার চাইলে পোলট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ যাচাই করে দাম কমানো সম্ভব।

২০২১ সালে ১ কেজি ভুট্টার দাম ২৮ টাকা, ৫০ কেজির ১ বস্তা পোলট্রি ফিডের দাম ছিল ২৫০০ টাকা, ২০২২ সালের শুরুতে ভুট্টার দাম ছিল ২৮ টাকা, ৫০ কজির ১ বস্তা ফিডের দাম ছিল ২৭০০ টাকা, ২০২২ সালের ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের দোহাই দিয়ে লাগামহীন ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, গত ফেব্রুয়ারি ভুট্টার দাম হয় ৪১ টাকা কেজি পোলট্রি ফিডের ৫০ কেজি, বস্তার দাম পৌঁছায় ৩৭৪০ টাকায়। কিন্তু মার্চ থেকে ভুট্টার দাম কমে দাঁড়ায় ২৪ থেকে ২৬, পোলট্রি ফিড উৎপাদনে ৬০% ভুট্টা প্রয়োজন হয় সেই ভুট্টার দাম কমেছে কেজিতে ১৬ টাকা এবং অন্য উপাদান ৪০% আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড উৎপাদনের সব পণ্যের দাম কমেছে কিন্তু পোলট্রি ফিডের দাম পার কেজিতে ২৫ টাকা বাড়িয়ে কমিয়েছেন কেজিতে ৩ টাকা মাত্র। ফিড কোম্পানিগুলোর ফিড বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। ডিম ও মুরগির দাম কমিয়ে রাখতে ও খামারিদের উৎপাদিত পণ্যে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। অন্য দিকে প্রান্তিক খামারি কোম্পানিকে মুরগি দেয়ার শর্তে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের নামে চলে দাদন ব্যবসা ৫০ কেজির ১ বস্তা ফিডের দাম ২৬০০ টাকা ধরে হিসাব করে ও সব সময়ের জন্য ১টি মুরগির বাচ্চার দাম, ৩৫ টাকা ধরা হয়। কোম্পানির সাথে চুক্তিতে না গেলে ফিডের বস্তার দাম ৩৫৫০ টাকা ও বাচ্চার দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা দিয়েও অনেক সময় চুক্তির বাইরে বাচ্চা বিক্রয় করেন না। এক দিকে প্রান্তিক খামারি হারিয়ে যাচ্ছে অন্য দিকে করপোরেট গ্রুপগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এই বৈষম্য দূর করে বাজারে প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিম মুরগি উৎপাদনে ৮০% শেয়ারের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের সুরক্ষা দিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমিষের ঘাটতি দেখা দিবে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা না হলে ডিম মুরগি বেশি দামে কিনে খেতে হবে জিম্মি হয়ে পড়বে ভোক্তা ও বাজারব্যবস্থা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/768982