১ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ৪:৫৩

বিদেশি পর্যবেক্ষক ভাড়াটে!

যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ইস্যুত বাংলাদেশের ওপর নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। রিকার্ডো কেলেরির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল গত ৯ জুলাই ঢাকায় এসে ২৩ জুলাই ঢাকা ত্যাগ করেন। নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণে এ সময়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় ১০০টি বৈঠক করেন। এমন এক সময় হঠাৎ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এনজিও’র সংগঠন ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান, কয়েকজন বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক ঢাকায় আসছেন। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার দেখার দায়িত্ব এনজিওকে কে দিয়েছে?

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের আমন্ত্রণে ২৮ জুলাই থেকে ঢাকা সফর করছেন বিদেশী প্রতিনিধি দল। এই দলে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের চেয়ারম্যান টেরি এস ইসলে, চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এনডি লিন, আয়ারল্যান্ডের সাংবাদিক নিক পউল, জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউসুকি সুগু। এই প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন, কয়েকজন মন্ত্রী এবং কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এদের গ্রহণযোগ্যতা কোন পর্যায়ে? নিজ নিজ দেশে এই পর্যবেক্ষকদের অবস্থান কোন পর্যায়ে?

বিদেশী এই প্রতিনিধি দলের প্রধান ৩০ জুলাই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানে নেই। ফলে সংবিধান অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে। গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের টেরি এস ইসলে বলেন, এই নির্বাচন কমিশন অতীতের মতোই সরকারি যেকোনো পদক্ষেপ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলকেও চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পায় না ইসি। প্রশ্ন হচ্ছে টেরি এস ইসলে এমন নিশ্চয়তা কোথায় পেলেন? বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তিনি কি ধারণা রয়েছে? নাকি ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক’ এই সার্টিফিকেট পুঁজি করে এনজিও’র ভাড়াটে পর্যবেক্ষক হিসেবে এসেছেন? চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ কর্মী এনডি লিন বাংলাদেশের নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি কি নিজের দেশ চীনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কোনোদিন করেছেন? কোন যোগ্যতায় তিনি হঠাৎ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হয়ে গেলেন? আয়ারল্যান্ডের সাংবাদিক নিক পউল, জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউসুকি সুগু’র নিজ দেশে অবস্থান কি? তারা কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব? এ ছাড়াও এনজিওদের সংগঠন ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম কি বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে? তারা কাকে খুশি করতে বা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নাম দিয়ে লোক ভাড়া করে এনে এমন সার্টিফিকেট দিচ্ছেন? আর ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী পরিচয় কি? তিনি কাকে খুশি করার এজেন্ডা নিয়েছেন? অতীতে তার ভুমিকা কেমন ছিল?
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিলমরা হয়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আন্তর্জাতিক মহল ওই দুই নির্বাচন নিয়ে ওয়াকেবহাল। এমনকি যারা নির্বাচিত হন সেই রাশেখ খান মেননসহ অনেকেই বলেছেন জনগণ ভোট দিতে পারেনি। অথচ এই আবেদ আলীরা ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে’ সার্টিফিকেট দিয়েছেন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ইসির গুনগান করে তথাকথিত বিদেশী পর্যবেক্ষক দলের নেতা টেরি এস ইসলে বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গাইবান্ধায় একটি ঘটনায় নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সরকার জোরালোভাবে যার বিরোধিতা করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে এবং তারা বিজয়ী হয়েছে। তারা সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলকে ভয় পায় না। সরকারি দলের বিরোধিতার পরেও বেশ কয়েকটি ঘটনায় তারা বিজয়ী হয়েছে। আমি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা তিন দেশ থেকে প্রতিনিধি এসেছি। এই তিন দেশই বাংলাদেশের বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী। কাজেই বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাতে আমাদেরও স্বার্থ রয়েছে। বিদেশী পর্যবেক্ষক নামধারী এই টেরি এস ইসলে কাকে হুমকি দিচ্ছেন?

এর আগের দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠকের পর এই টেরি এস ইসলে বলেছিলেন, ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) আমন্ত্রণে নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করছি। বিএনপির সঙ্গেও আমরা বৈঠকে বসতে চেয়েছিলাম। তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়নি।’
আয়ারল্যান্ডের সাংবাদিক নিক পল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি নেই। তাই সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন।’ প্রশ্ন হচ্ছে নিক পল বাংলাদেশ সম্পর্কে কি জানেন?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই তথাকথিত বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিয়ে নেটিজেনরা নানান মন্তব্য করছেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/591396