১ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ৩:৩৭

দ্যা ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ছে

তাপমাত্রা বাড়লে অস্থিরতাও বাড়ে। ১৯৬৭ সালের গ্রীষ্ম ভালোবাসার গ্রীষ্ম নামে পরিচিত। সে সময় হিপ্পিরা আমেরিকার ওয়েস্টকোস্টে যুদ্ধের প্রতিবাদ ও শান্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু আটলান্টা থেকে বোস্টন পর্যন্ত ১৫০টির বেশি বর্ণবিষয়ক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ের আরেকটি নাম দেয়া হয় দ্য লং, দ্য হট সামার।

বিশ্ব উষ্ণ হচ্ছে। গরম ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে সংযোগের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে এই গ্রীষ্মে। প্রত্যেকটা উত্থানেরই নিজস্ব কারণ থাকে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় সব জায়গাতেই বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। তাপমাত্রা-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় কমানো- এই তিনটি বিষয়ই অস্থিরতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা এরই মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে দেশে নজিরবিহীন বিক্ষোভ-সহিংসতা দেখা গেছে। এই গ্রীষ্মে এসব সমস্যা আরো বড় আকার ধারণ করতে পারে।

এদিকে কৃষ্ণসাগরের শস্যচুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। এই চুক্তির আওতায় এত দিন বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রফতানি করে আসছে কিয়েভ। কিন্তু রাশিয়ার পদক্ষেপে তা এখন বন্ধ। সম্প্রতি চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এতে চালের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কেনিয়া, ভারত, ইসরাইল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সামাজিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে।

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রথমবারের মতো ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। ওই মাসের গড় তাপমাত্রা আগের যেকোনো দিনের তুলনায় রেকর্ড। এই ধরনের উচ্চ তাপমাত্রায় বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীলতা বাড়ার আশঙ্কা ১৫ শতাংশ বেশি।

জুনের শুরু থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রেকর্ড করা স্তরের ওপরে ধারাবাহিকভাবে চার থেকে ছয়টি স্ট্যান্ডার্ড বিচ্যুতিতে উষ্ণ হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জুন ও জুলাই মাসের রেকর্ড করা তাপমাত্রায় বিশ্বের ৫০ শতাংশ এলাকায় সামাজিক সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ভেরিস্ক ম্যাপলেক্রফ্ট নামের একটি ঝুঁকি-বুদ্ধিমত্তা সংস্থা এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সামাজিক অস্থিরতা ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দেশভেদে এসব সহিংসতার ধরন ভিন্ন হতে পারে।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে তৃতীয় প্রান্তিকে অস্থিতিশীলতার মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
সংস্থার প্রধান বিশ্লেষক জিমেনা ব্লাঙ্কো বলেছেন, এর জন্য যেমন তাপমাত্রা দায়ী, তেমনি জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ও। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার।

যদিও গত বছরের তুলনায় এখনো শস্যের মূল্য কম রয়েছে। তার মানে এই নয় যে মূল্য বৃদ্ধি থেমে রয়েছে। জুনে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১৭ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১৪ শতাংশ। তাছাড়া কানাডা ও জাপানে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশ করে। তবে অনেক উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে অবস্থা আরো খারাপ। নাইজেরিয়ায় বর্তমান মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশের কাছাকাছি। ইথিওপিয়ায় ৩০ শতাংশ ও মিসরে ৬৫ শতাংশ, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

ধনী বিশ্বের বাইরের দেশগুলোর অবস্থা আরো বেশি উদ্বেগজনক। আইএমএফ গবেষকদের মতে, এরই মধ্যে অস্থিরতার কারণে তা উদীয়মান বাজারে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উন্নত অর্থনীতির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/766432