৩১ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১১:৩৪

বাসে আগুন দিলো কারা?

শনিবার দুপুর দেড়টা। মাতুয়াইল মেডিকেল এলাকায় সেন্টু ফিলিং স্টেশনের সামনে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনের একটি বাস রাখা ছিল। সেখান থেকে বাসটি বের হয়ে মহাসড়কে ওঠার সময় এটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাসে আগুন দেয়ার কয়েক মিনিট আগেই সেখান থেকে মিছিল নিয়ে যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল পুলিশও। তখনই একটি মোটরসাইকেলে করে আসা ৩ ব্যক্তি বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলের বর্ণনা এভাবেই জানাচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী প্রাইভেটকার চালক নয়ন। তিনি বলেন, তখন ফিলিং স্টেশন এলাকায় বিএনপি’র বিক্ষোভ দেখা যায়নি। অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত তিশা পরিবহন বাসটির চালক মো. ছানাউল্লাহ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, ৩ ব্যক্তি মোটরসাইকেলে করে বাসের কাছে আসে। তখন আমাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলে।

আমাকে বলা হয় তুই বাস থেকে না নামলে তোকেসহ বাস জ্বালিয়ে দেবো। এ সময় তাদের হাতে পেট্রোল ছিল। আমি নামার পরে তারা আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, বাসে আগুন দেয়ার সময় পুলিশ বাসের দুই দিকেই অবস্থান করছিল।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে গুলিস্তানমুখী স্বদেশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। বাসটির চালক ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যাত্রী নিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন। মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে পুলিশ গাড়ি আটকে তাকে ঘুরিয়ে দেয়। তিনি মেডিকেল মোড়ে ইউটার্ন নিয়ে যাত্রী নামানোর জন্য দাঁড়াতেই কয়েকজন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি এসে বাসের পেছনের দিকে পেট্রোলজাতীয় কিছু ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা চালক ইমরানকে মারধর করে বাসের চাবিও ছিনিয়ে নেয়। মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে তুরাগ পরিবহনের একটি মিনিবাসে ১টার দিকে আগুন দেয়া হয়। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা নিভিয়ে ফেলা হয়। মাতুয়াইলে ঘটনাস্থলে থাকা র‌্যাব-১০ এর পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন গলি থেকে বের হয়ে বাসে কিছু ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ করেছে। যারাই এ ধরনের নাশকতামূলক কাজে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে এদিন বিকাল ৩টার দিকে সাভারের আশুলিয়ায় বিকাশ পরিবহনের একটি চলন্ত বাস আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়। এতে বাসটি পুড়ে যায়। একই সময়ে আরও কয়েকটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া বাসের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের গাড়ি নবীনগর থেকে ঢাকার আজিমপুরে যায়। বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মির্জানগর ইউলুপ থেকে বাস ঘুরিয়ে নবীনগরে যাচ্ছিলাম। এ সময় বাসে আমি ও হেলপার ছিলাম, যাত্রী ছিল না। হঠাৎ পেছন থেকে ৫০-৬০ জন মিছিল নিয়ে এসে সড়কের ওপর থাকা একাধিক বাসে ভাঙচুর চালায়। তাদের অনেকের হাতে চাপাতি ও লাঠিসহ দেশি অস্ত্র ছিল। চার-পাঁচটি বাস ভাঙচুরের পর আমাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

শনিবার রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকেও উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় মালেকাবানু স্কুলের সামনে ঈগল পরিবহনের একটি ফাঁকা বাসে আগুন লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে ৯৯৯-এ কল পেয়ে ফায়ার সা‌র্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গি‌য়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাসটির হেলপার মো. বিপ্লব বলেন, রাত ৮টার সময় বাসের যাত্রী নামিয়ে দিয়ে এখানে বাসটি দাঁড় করে রাখা হয়। এর কিছুক্ষণ পর দেখি হঠাৎ ৩ জন ব্যক্তি এসে বাসের এক পাশ দিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় দৌড়ে গিয়ে বাসচালককে বিষয়টি জানাই। ততক্ষণে পুরো বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই বাসটির চালকের সহকারী জানিয়েছেন, ৩ জন ব্যক্তি বাসে উঠে কিছু তরল ঢেলে আগুন দিয়ে নেমে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ওদিকে বাসে আগুন দেয়া নিয়ে শনিবার থেকেই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেয়া শুরু হয়েছে। সরকারি দলের লোকজন বলছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো আবার বাসে আগুন দেয়া শুরু করেছে। তবে বিএনপি এমন অভিযোগ নাকচ করে বলছে, এসব পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বিএনপিকে দায় দেয়ার জন্য। এর আগেও অনেক বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। তবে কারা কীভাবে আগুন দিয়েছিল সেই তথ্য খুব একটা সামনে আসেনি।

https://mzamin.com/news.php?news=67192