২৯ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ৮:৩৫

মুরগির চেয়ে পাঙ্গাশের দাম বেশি, মসলা চড়া

হাফসেঞ্চুরির নিচে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য নেই বাজারে। জীবনযাত্রায় স্বস্তিও নেই। কাঁচা শাক-সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে সহনীয় না। অন্য দিকে, চাষের পাঙ্গাশ মাছের দাম ব্রয়লার মুরগির দামের চেয়েও বেশি। ছোট মাছের ধারে কাছে যাওয়ার ক্ষমতা নেই মধ্যবিত্তের। আদা, রসুনসহ বিভিন্ন মসলার দামও অনেক বেশি। কোনো কোনোটি নাগাসিরও বাহিরে। শুক্রবার শহরের কয়েকটি কাঁচাবাজারের বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সার্বিকচিত্র। পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারী বলেন, ভাই মাছ তো আমাদের মতো মানুষের পরিবারের জন্য দুষ্প্রাপ্য খাবার। মাসেও একটি মাছ খাবারের তালিকায় আনতে পারি না। যে বেতন পাই তা দিয়ে কোনোভাবেই সংসার চলে না।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইটে দেয়া বাজার দর বলছে, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ইলিশপ্রতি কেজি সাড়ে ৬শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা। গরুর গোশতপ্রতি কেজি সাড়ে ৭শ’ থেকে ৭৮০ টাকা। খাসির গোশত প্রতি কেজি এক হাজার থেকে ১১শ’ টাকায় গতকাল বিক্রি হয়েছে। বাজারে সব সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহেই সবজির দাম ছিল নিম্নমুখী। এ সপ্তাহে এসে তা আরো কমেছে। সবজির দাম কমলেও বেড়েছে সবচেয়ে বেশি চাহিদার ব্রয়লার ও কক বা সোনালি মুরগির দাম। প্রতি কেজিতে মুরগির দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা। কাঁচা মরিচ এখনো প্রতি কেজি ২শ’ টাকা থেকে তার বেশিও বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, বাজারবেদে গতকাল কেজিপ্রতি লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, উচ্ছে ১শ’ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, টমেটো ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২শ’ থেকে ২২০ টাকা, ধনেপাতা ১শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাউ ৫০-৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০ টাকা পিস। কাঁচাকলা ৩৫ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের সাথে তুলনা করলে সব সবজির দামই কমেছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া দেশী পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশী আদা ২৫০ টাকা। চায়না রসুন ২শ’ টাকা, আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্য দিকে, রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি, কাতল মাছ ৪৫০ টাকা, দেশী ছোট চিংড়ি ৯শ’ থেকে ১১শ’ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫শ’ টাকা, টেংরা মাছ সাড়ে ৫শ’ টাকা, চাষের কই মাছ ২৮০ টাকা, চাষের পাবদা মাছ ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, তেলাপিয়ার কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৯০, কক বা সোনালি মুরগি ৩২০, দেশী মুরগি ৫৫০, গরুর গোশত ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কয়েক দিনে রসুনের দামও বেশ বেড়েছে। কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ২৫০ টাকায়। আর আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশী রসুনের সরবরাহ কম ও বিদেশ থেকে রসুনের আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হলেও পাইকারি পর্যায়ে দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। আর চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ৬ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রসুন উৎপাদিত হয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন। সেখান থেকে পচে যাওয়া রসুনের হিসাব বাদ দিয়ে প্রকৃত উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার টন। রসুনের চাহিদার ১৩ থেকে ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। আর এ বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫-৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ লাখ টন। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ লাখ টন।

মিরপুরের পীরেরবাগের মুদিদোকানি শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তি। বলার কেউ নাই। আদার দাম আমদানি করাটা অনেক বেশি। যা আনলে মানুষ ৭শ’ টাকায় কিনতে চায় না। দেশী আদা ২শ’ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে। দেশী পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকার মধ্যে। অন্যান্য প্রতিটি জিনিসের দামও ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মচারী বলেন, সাড়ে ৫শ’ টাকা দিয়ে একটি রুই মাছ কিনলাম। কাটার পর দেখি প্রতিটি টুকরার দাম পড়ছে ৪০ টাকা। যেই তেলাপিয়া মাছ কারো পছন্দ ছিল না, আজ সেটিও ২৫০ টাকা কেজি। বড় মাপের ২ কেজি ওজনের একটি তেলাপিয়া মাছ কিনলে ৫শ’ টাকা। ৫ সদস্যের সংসারে একদিনেই শেষ। আমাদের মতো অস্থায়ী কর্মচারীদের জন্য জীবন চালানো দুষ্কর। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা তো স্বপ্নের বিষয়।


https://www.dailynayadiganta.com/first-page/765858/