১৬ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ৪:০২

মান হারাচ্ছে দেশের প্রকৌশল শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের চাহিদা বিবেচনায় দেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রকৌশল কোর্স চালু রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকৌশল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে এসব কোর্স খুলে বসেছে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে মান কমছে দেশের প্রকৌশল শিক্ষার। এ অবস্থায় প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠিত বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন (বিএইটিই) দেশের প্রকৌশল শিক্ষার মান নিয়ে কাজ করে থাকে। বিএইটিইর তথ্য মতে, দেশে ৪০টি সরকারি, ১০২টি বেসরকারি ও একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রকৌশল ডিগ্রি দিয়ে থাকে। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬টি প্রকৌশলবিষয়ক কোর্সের অ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃতি) রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৌশল শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে উপযোগী ল্যাব, কোর্স পরিকল্পনা, সিলেবাস প্রণয়নসহ দক্ষ শিক্ষক থাকতে হবে।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব বিষয়ে তদারকি ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট মান নিশ্চিত ছাড়াই এসব কোর্স পরিচালনা করছে। কেউ আর্থিক সংকটে, আবার কেউ বাড়তি মুনাফার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিএইটিইর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের প্রকৌশল ডিগ্রি প্রদান করলেও প্রকৌশল কোর্স পরিচালনায় অ্যাক্রেডিটেশন পেয়েছে মাত্র ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়, শতকরা হিসাবে যা মাত্র ১৯.৬১ শতাংশ।

ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল কোর্স পরিচালনায় মানের ঘাটতি আছে, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। তারা যেন প্রকৌশল কোর্সগুলোর ন্যূনতম মানদণ্ড বজায় রাখতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। প্রকৌশল শিক্ষায় একটি ল্যাবে ন্যূনতম কী থাকতে হবে তা নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করার বিষয়ে আমরা ভাবছি।’

প্রকৌশলের শিক্ষার্থী বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে : ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট শিক্ষার্থীর ৪৩.৩২ শতাংশই প্রকৌশল অনুষদে অধ্যয়নরত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হার মাত্র ১৭.৯৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট তিন লাখ ১০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রকৌশলের শিক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৪ জন। একই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ৮৯ হাজার ৬৪৫ জন অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রকৌশলের শিক্ষার্থী ছিল ৫২ হাজার একজন।

আইইবির সাধারণ সম্পাদক এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যত্রতত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। তারা আবার যেনতেনভাবে শিক্ষার্থীদের প্রকৌশল কোর্সে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকৌশল শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এসব বিষয় ঠিক না রেখেই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আবার সান্ধ্য কোর্সের মাধ্যমে প্রকৌশল শিক্ষা দিচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় আমরা সবাইকে অ্যাক্রেডিটেশন দিতে পারছি না।’

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ আ ফ ম ইউসুফ হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়ার জন্য কঠিন কিছু শর্ত পালন করতে হয়। যারা শর্ত পূরণ করতে পারেনি, তারা অ্যাক্রেডিটেশনের আবেদনও করেনি। শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় বুঝেশুনে ভর্তি হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন সনদ ছাড়া কারো ডিগ্রি দেওয়া উচিত না। সনদ থাকলে মানসম্মত পাঠদান নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। দেশ-বিদেশের চাকরিদাতারা সহজেই গ্রহণ করে নেয়।’

কোর্স অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া ২০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)।

অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া আটটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে, বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, মাওলানা ভাসানী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি, খুলনা ইউনিভার্সিটি ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির একটি প্রকৌশল কোর্স অ্যাক্রেডিটেশন পেয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/06/16/1290354