১১ জুন ২০২৩, রবিবার, ৬:৫৩

সমাবেশ নয় যেন জনসমুদ্র

জামায়াতে ইসমামীর সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মৎস্য ভবনের মোড় থেকে শাহবাগ মোড়, রমনা পার্কের পশ্চিমাংশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বাংশের বিশাল এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ভোটের অধিকারের দাবিতে জামায়াতের সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ। দীর্ঘ প্রায় এক দশকের বেশি সময় পর রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি পায় জামায়াতে ইসলামী। রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে ভেতরে ও বাহিরে সামনের রাজপথে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা ‘লিল্লাহি তাকবীর, আল্লাহ আকবার,’ ‘বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ,’ ‘এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, আমীরে জামায়াতের মুক্তি চাই, আলেম-উলামাদের মুক্তি চাই, মাওলানা সাঈদীর মুক্তি চাই ইত্যাদি নানান স্লোগান দিতে থাকেন।

এছাড়াও জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতেও স্লোগান দেয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার রাতে সমাবেশের অনুমতি পায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যদিও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করতে চেয়েছিল জামায়াত। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুমতি দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার বেলা দুইটায় রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় মিলনায়তনের দায়িত্ব বুঝে নেয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ। বেলা ১১টা থেকে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থলে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে এতো বেশি হয় যে মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশ শুরুর আগেই রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন পূর্ণ হয়ে সমানের চত্বর ও রাস্তায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জামায়াতের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশকে তাদের রাজনৈতিক বিজয় হিসাবে দেখছেন। তারা বলেন, এই সমাবেশ করতে পেরে আমরা উজ্জীবিত, আমাদের মধ্যে ঈদ উৎসবের মতো আনন্দ বিরাজ করছে। অনেকদিন প্রকাশ্যে সমাবেশ না হওয়ায় রাজনৈতিক সহকর্মীদের দেখা সাক্ষাৎ হয়নি কিন্তু আজকের সমাবেশ সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন একটাই দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি। অবিলম্বে সব দলীয় কর্যালয় খুলে দিতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতা ও আলেমদের মুক্তি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এ সমাবেশ করছে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের অনুমতি নিয়ে তারা সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করেছিল ঢাকার মতিঝিলে ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে দলটিকে কোনো বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ বা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। সে হিসাবে ১০ বছরের বেশি সময় পর ঢাকায় কর্মসূচি পালনের অনুমতি পেল জামায়াত। তবে ঘরোয়া এই কর্মসূচির জন্য দলটিকে মিলনায়তনের বাইরে জড়ো না হওয়াসহ বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে ৫ জুন সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে যান জামায়াত ইসলামীর সমর্থিত আইনজীবীরা। ডিএমপিতে প্রবেশ করার আগে তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২ ঘণ্টা পর তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ৫ জুন কর্মদিবস থাকার কারণে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি বলে জানায় পুলিশ। তাই এবার ছুটির দিন শনিবার দেখে তারা অনুমতির আবেদন করে। পরে এখানে করার অনুমতি মেলে।

এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই রমনা এলাকায় আসতে থাকে নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় জমে যায়। প্রস্তুত হয়েছে মাইক। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ করতে চান তারা। এজন্য প্রশাসনের বেঁধে দেয়া নিয়ম মেনে সমাবেশ করবেন তারা। ওদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোড়ে মোড়ে বাড়ানো হয়েছে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশের উপস্থিতি।

জামায়াত নেতাকর্মীরা বলেন, রাজধানীর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয়, পুরানা পল্টনে মহানগর কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলো অঘোষিতভাবে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার বন্ধ করে রেখেছে। অবিলম্বে আমাদের সব দলীয় অফিস খুলে দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল সমাবেশ করার রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. আব্দুলাহ মোহাম্মদ তাহের। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল।

ভোটের অধিকারের দাবিতে সাধারণ মানুষ সমাবেশে: ২০ বছর আগে, ২০০৩ সালে ভোটার হয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত ভোট দিতে পারিনি। অনেক আগে থেকেই মনে প্রচ- আবেগ ছিল জাতীয় নির্বাচনে আমার ভোটটা আমি দেব। কিন্তু ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি ভোট দিতে পারিনি। এবার তাই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজপথে নেমেছি। গতকাল শনিবার জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে এসে নিজের এমন অভিব্যক্তির কথা জানালেন ডেমরার তোফায়েল। সাথেও এও বললেন, ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নন তিনি। তবে ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতেই তোফায়েল সমাবেশে এসেছেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, একথা সবাই জানে যে নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া এদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

তাই আমার দাবি- আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে। রমনার ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনের ভেতরে যখন জামায়াতের সমাবেশ চলছিল, তখন তোফায়েল একটি প্লেকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাতে লেখা ছিল- ‘এই মুহূর্তে দরকার। কেয়ারটেকার সরকার। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন নীরবে। এ সময় তিনি আরো জানালেন, রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে চান।

https://dailysangram.info/post/527117