২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৮:১০

মদুনাঘাট শোধনাগারের পানির উৎসও অতিমাত্রায় লবণ

চট্টগ্রাম নগরীতে মোহরা পানি পরিশোধন প্রকল্পের পর এবার মদুনাঘাট পরিশোধন প্রকল্পের পানির উৎসও অতিমাত্রায় লবণ শনাক্ত হয়েছে। তাই পানি সংগ্রহ কমিয়ে দেওয়ায় নগরীর অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। রমজান মাসে এই সংকট আরো তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে মদুনাঘাটের পানিতে প্রতি লিটারে অতিরিক্ত লবণের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে আজ (মঙ্গলবার) জোয়ারের সময় প্রতি লিটার পানিতে ১৮০০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। আগের দিন এটা ছিল ১১০০ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে হালদা নদীর মোহরা পয়েন্টে মঙ্গলবার প্রতি লিটারে লবণ পাওয়া গেছে ২৯০০ মিলিগ্রাম। আগের দিন এটা ছিল ১৭০০ থেকে ১৮০০ মিলিগ্রাম। অথচ সহনীয় মাত্রা ৬০০ মিলিগ্রাম।’

অত্যধিক লবণের কারণে বাধ্য হয়ে মোহরা ও মদুনাঘাট—দুটি প্রকল্প থেকেই পানি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। অতিরিক্ত লবণের জন্য জোয়ারের সময় মোহরা ও মদুনাঘাট প্রকল্পের পানি সংগ্রহ করা হয় না। এ কারণে ৯ কোটি লিটার উৎপাদনক্ষমতার মোহরা প্রকল্পে প্রতিদিন পানি পরিশোধন করা হয় ছয় কোটি লিটার এবং একই ক্ষমতার মদুনাঘাট প্রকল্পে সাড়ে সাত কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা হচ্ছে বলে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নলকূপ কিংবা অন্য প্লান্টের পানি মিশিয়ে লবণের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তার পরও সরবরাহ করা প্রতি লিটার পানিতে ৩০০-৩৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ থাকছে। এর আগে মদুনাঘাট পয়েন্টে লবণ সহনীয় মাত্রায় থাকা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী থেকে মোহরা পয়েন্টের দূরত্ব আধাকিলোমিটার আর মদুনাঘাট পয়েন্টের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। দূরত্বের কারণে নদীর জোয়ারের পানিতে এত দিন মদুনাঘাট পয়েন্টের পানি সেভাবে লবণাক্ত হয়নি। কিন্তু এবার সেই পানিও লবণাক্ত হয়ে গেছে।’

লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কমে গেছে। ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে গেছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি এসে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। পানির পরিমাণ কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত পানি নদীর অনেক ভেতরে প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট থেকে ওয়াসা পরিশোধনের জন্য পানি সংগ্রহ করে সেখানে দ্রুত নোনা পানি চলে আসে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় এখন একটির বেশি টারবাইন চালু করা যাচ্ছে না। তাই উজান থেকে পানি কম আসছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে, নভেম্বরের পর থেকে পানি সংরক্ষণের জন্য কাপ্তাই হ্রদে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি টারবাইনের মধ্যে এক বা দুটি চালু রাখা হয়। কিন্তু এবার জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চারটি টারবাইনই চালু ছিল। ফলে হ্রদের পানি দ্রুত কমে গেছে, এখন একটি টারবাইনও ঠিকভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবদুল জাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা চারটি টারবাইন চালু রেখেছিলাম। বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে আমাদের ওপর তা চালুর নির্দেশনা ছিল। এতেই দ্রুত হ্রদের পানি কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে এ সময় এক বা দুটি টারবাইন চালু রেখে বাকি পানি এপ্রিল পর্যন্ত চালানোর জন্য মজুদ করে রাখা হয়।’

উৎপাদন কমায় নগরীর অনেক এলাকায়, বিশেষ করে উত্তর কাট্টলী, পতেঙ্গা, জাকির হোসেন রোড ও কালুরঘাট শিল্প এলাকায় পানিসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দিনের একটা বড় সময় এসব এলাকায় পানি থাকে না, আবার যখন থাকে, তা বেশি লবণের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। লুসাই পাহাড় থেকে প্রচুর বৃষ্টির পানি না নামলে লবণাক্ততা কমবে না। আমরা এমনিতেই জোয়ারের সময়ের পানি সংগ্রহ করি না। কারণ সে সময় হালদার পানিতে লিটারে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার মিলিগ্রাম লবণ থাকে। এখন ভাটার পানিতেও কয়েক গুণ বেশি লবণের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যথাসম্ভব অন্যান্য পানি শোধনাগারের পানি ব্লেন্ডিং করে লবণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে এনে সরবরাহ করার চেষ্টা করছি।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/03/22/1263529