২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৮:০৫

রোজায় দুর্ভোগের শঙ্কা

চট্টগ্রামে গ্যাস জ্বালানির অভাবে বন্ধ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। চলছে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া। গ্যাসেরও সঙ্কট, শিল্প কারখানার পাশাপাশি আবাসিক গ্রাহকরাও পাচ্ছেন না নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ। পানির উৎপাদন বাড়লেও সরবরাহ ব্যবস্থায় গলদ থাকায় সঙ্কট থেকেই গেছে। তার উপর যোগ হয়েছে লবণ পানির আগ্রাসন। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস হালদা নদীতে জোয়ারে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আসছে পবিত্র মাহে রমজান। এ অবস্থায় গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানি সঙ্কটে রোজাদারদের দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও তিনটি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীতে পৌনে এক কোটি মানুষের বসবসা। কিন্তু নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই পাচ্ছে না নগরবাসী। বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সঙ্কট যেন পিছু ছাড়ছে না। এসব খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও তার সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এর সুফল নেই। বিশ্ববাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর খরচ কমাতে গ্যাস ও জ্বালানি নির্ভর বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। জ্বালানি সাশ্রয়ে সন্ধ্যায় পিকআওয়ারে কিছু সময়ের জন্য চালু রেখে বাকি সময় বন্ধ থাকছে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবার কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ মহাপ্রকল্পের উৎপাদনও হচ্ছে নামমাত্র। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১১টি ইউনিট বন্ধ।

উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাতে-দিনে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আবার সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। চট্টগ্রামে স্বাভাবিক সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ মেগাওয়াট। পবিত্র রমজানে বিশেষ করে ইফতার, তারাবিহ ও সেহেরীর সময় চাহিদা প্রতিবছর বেড়ে যায়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় এবার বিদ্যুৎ সঙ্কট প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম জানান, স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা পালনে যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। গত কয়েকদিনে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে, তাতে সরবরাহও বাড়ানো যাচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসের চাহিদা মাথায় রেখে ফার্নেস অয়েলচালিত কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পিকআওয়ারে বিশেষ করে তারাবিহ ও সেহেরীর সময় চালু রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া সঞ্চালন ব্যবস্থায় যাতে কোনরকম ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামে গ্যাসেরও সঙ্কট রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের পর এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। গ্যাসের চাহিদা ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে সঙ্কটের কারণে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ মিলছে না। শিল্প কারখানার পাশাপাশি সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং গৃহস্থালিতেও গ্যাস সঙ্কট চলছে। সঙ্কটের কারণে জোড়াতালি দিয়ে চলছে গ্যাস সরবরাহ। সার কারখানা বন্ধ রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা হচ্ছে। আবার কখনো সার ও বিদ্যুৎকেন্দ্র একসাথে বন্ধ রেখে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কট রমজানে আবাসিক গ্রাহকেরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এমনিতেই নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে গ্যাসের চাপ কম। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গৃহিনীদের। রমজান মাসে পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবেন তা নিয়ে চিন্তিত নগরবাসী। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। এ কারণে এখন আর তেমন সঙ্কট নেই। আশা করা যায়, রমজানে অতিরিক্ত চাহিদা সামাল দেয়া যাবে। ফলে সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং আবাসিক খাতে সঙ্কট হবে না।

গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎপাদন বেড়েছে। দিনে ৪৭ কোটি লিটার চাহিদার সমান উৎপাদন হলেও সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে নগরীর অনেক এলাকায় পানির সরবরাহ মিলছে না। এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎসে হালদা নদীতে জোয়ারের পানি ঢুকে যাচ্ছে। এতে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে লবণ পানির আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসী চরম বিপাকে পড়েছে। সহনীয় মাত্রার বেশি লবণ থাকায় এ পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে এ পানি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে নগরীর বিশাল এলাকার মানুষ। জোয়ারের পানি এড়াতে গিয়ে দুটি পানি শোধনাগার দিনে ছয় ঘণ্টা করে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এতে উৎপাদনও কমে গেছে জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, প্রাকৃতিক কারণেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া কমিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তাই উজানের পানি কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি হালদায় প্রবেশ করছে। এতে মোহরা পানি শোধানাগার প্রকল্পে লবণাক্ত পানি পরিশোধন করতে হচ্ছে। পানি পরিশোধনের পরও কিছু লবণাক্ততা থেকে যাচ্ছে ওয়াসার পানিতে। বেশ কয়েকদিন ধরে এ সঙ্কট চলছে। এরপরও পবিত্র রমজানে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওয়াসা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ##

https://dailyinqilab.com/national/article/563843