২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৭:৫৪

নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না গতি, বাড়ছে দুর্ঘটনা

মহাসড়কে কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। রোববার একদিনেই এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় ইমাদ পরিবহণ দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুর পর মহাসড়কে দ্রুতগতির যান নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। হাইওয়ে পুলিশের দাবি, অতিরিক্ত গতির বাহনগুলোকে মামলা দিয়েও দমানো যাচ্ছে না।

সড়কে যানবাহনের গতি কমাতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে জানান তারা। তাদের দাবি, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রায় সব সড়কেই যানবাহন চলাচল তিন থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেলেও সেই অনুপাতে বাড়েনি জনবলসহ অন্যান্য সাপোর্ট। ফলে পুরোনো কাঠামোর জনবল দিয়েই বাড়তি সড়ক সামলাতে হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশকে।

হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিওনে থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প রয়েছে সাতটি, যার মাধ্যমে আটটি মহাসড়কের ৩৮১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রতিটি স্টেশনে দুটি করে মোট ১৬ স্পিড গ্যান রয়েছে এসব মহাসড়কের গতি নিয়ন্ত্রণে।
ফরিদপুরে অবস্থিত মাদারীপুর হাইওয়ের রিজিওনের পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই রিজিওনের অধীনে এন-৭, এন-৮, এন-৮০৪, এন-৮০৫, এন-৮০৬, আর-৭১০ ও আর-৮৬০ মহাসড়কের ৩৮১ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। যার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েও অন্তর্ভুক্ত।

রিজিওনের পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সহকারী পুলিশ সুপারের দপ্তরসহ আটটি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে আগে থেকেই মোট জনবল রয়েছে ২৬৫ জন। যার মধ্যে পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন ৬০ জন, আর ১৫ জন রয়েছেন প্রধান কার্যালয়ে প্রেষণে। পুলিশ স্টেশনগুলোর মধ্যে পাংশা হাইওয়ে থানায় সর্বনিু ২১ জন এবং ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় সর্বোচ্চ ৩৪ জন কর্মরত আছেন। বেশির ভাগ থানায়ই একজন ওসি, একজন সার্জেন্ট ও একজন এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। যার মধ্যে শুধু এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাই দুর্ঘটনাজনিত মামলার তদন্ত করতে পারেন।

জানা যায়, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর যোগাযোগের নতুন দ্বার খুলে যাওয়ায় এসব মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ গুণ। যদিও ব্যস্ততা বাড়লেও এসব পুলিশ স্টেশনে বাড়েনি জনবলের সংখ্যা। এমনকি আটটি স্টেশনে মাত্র দুটি করে স্পিডগ্যান থাকায় এবং জনবল বৃদ্ধি না করায় একাধিক চেকপোস্ট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, এসব স্টেশনের অধীনে সর্বনিু শিবচর হাইওয়ে থানার অধীনে ২৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে, যার উভয় প্রান্ত বিবেচনায় ৫৬ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অধীনে ৭৮ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। মাদারীপুর হাইওয়ের রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জানান, মহাসড়কে যান চলাচলে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা থাকলেও অনেক চালকই তা মানছেন না। তিনি জানান, ২০২২ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত এই রিজিওনের অধীনে চেকপোস্ট বসিয়ে ৮ হাজার ৯২টি মামলা রুজু করা হয়। যার মধ্যে ৩ হাজার ৪৯২টি মামলাই অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোসংক্রান্ত। এত মামলা রুজু করার পরও কেন বেপরোয়া গতি থামানো যাচ্ছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সচেতনতার অভাব, পাশাপাশি মালিক-কর্তৃপক্ষের দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্ট্যান্ডে পৌঁছানোর চাপই দায়ী। তাই দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, মাদারীপুর রিজিওনের অধীনে ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত ২২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু নিয়মিত মামলা হয়েছে ৩৭টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৩০৭ জন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/657155