২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৭:৫১

সুপেয় পানি পেতে এখনো হাঁটতে হয় দীর্ঘপথ

দেশের উপকূলীয় উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী আশ্রয় প্রকল্পে বাস করেন গৃহিণী রেখা রানী। একটি কলস ও একটি বোতল নিয়ে সোমবার আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কলবাড়ীতে এসেছেন। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দেওয়ার একটাই কারণ-সুপেয় পানি সংগ্রহ করা। টাকা দিয়ে পানি কিনে তা বয়ে নিয়ে যান ফিরতি পথ ধরে। এভাবে আসা-যাওয়ায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আনা ওই পানি পান করে জীবনধারণ করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।

শুধু রেখা রানী নন, উপকূলের এমন অসংখ্য মানুষ প্রতিদিনই সুপেয় পানির জন্য যুদ্ধ করছেন। তাদের কেউ পুকুর, বৃষ্টি বা বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট থেকে সংগ্রহ করা পানি পান করছেন। যারা এসব উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদেরকে লবণাক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। এতে নানা ধরনের রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। সাতক্ষীরা সদর ও শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।

সুপেয় পানি নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে রেখা রানী যুগান্তরকে বলেন, আমরা পুকুরের পানি পান করতাম। ঘূর্ণিঝড় আইলার সময়ে শ্যামনগরের পুকুরগুলোয় সমুদ্রের পানি ঢুকে যায়। এছাড়া খাল-বিল আটকে দিয়ে চিংড়ি, কাঁকড়ার চাষও বেড়েছে। এসব কারণে পুকুরের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। ওই পানি আর পান করা যায় না। তিনি বলেন, কাছাকাছি একটি টিউবওয়েল আছে, যেটার পানি পান করতাম। ওই পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। তাই সেই পানিও পান করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন এভাবে মাইলের পর মাইল হেঁটে পানি নিয়ে যাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু সাতক্ষীরা নয়, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষের একটি অংশ সুপেয় পানির জন্য এভাবেই প্রতিদিন যুদ্ধ করছেন। অপরদিকে দেশের প্রায় সব এলাকায়ই নদী, খাল, পুকুর ও বিলের পানি দূষণ হচ্ছে। দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ উদ্যাপন করা হবে ‘বিশ্ব পানি দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য-‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা’। দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
এছাড়া বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে নিরাপদ পানি পাওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখনই পানি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেন তারা। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, খুলনা, বাগেরহাটসহ কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি আমি নিজে গিয়ে খাবার পানির সংকট দেখেছি।

সেখানে পুকুর ভরে ফেলে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। খাল, বিল, হাওড় পানির সংরক্ষণাগার হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সহজেই সমুদ্রের লবণাক্ততা লোকালয়ে চলে আসছে। এছাড়া ফারাক্কা বাঁধ ও তিস্তা থেকে পানি প্রত্যাহার করায় দেশে পানিপ্রবাহ কমছে। দেশের ভেতরে পানির ব্যবহার বেড়েছে। সব মিলিয়ে পানি ব্যবস্থাপনা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর ও শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ পানি সংগ্রহের জন্য প্রতিদিনই যুদ্ধ করেন। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় তাদের সুপেয় পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। জানতে চাইলে সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, জেলার ২৫ লাখ জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ মানুষের সুপেয় পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারিভাবে জেলায় ১১৫টি পিএসএফ ফিল্টার বসানো রয়েছে। ভূ-উপরিস্থ পানি নিয়ে তা শোধনের মাধ্যমে পরিবারগুলোয় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অথচ ভূ-উপরিস্থ এসব পানিও এখন অনেক কমে গেছে। ফলে কোনো কোনো জায়গায় পিএসএফ যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। তিনি জানান, বেসরকারি পর্যায়ে সাতক্ষীরার কয়েকটি এনজিও বিভিন্ন স্থানে এসব পিএসএফ বসিয়েছে। সেখানেও দেখা দিয়েছে একই সংকট।

শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত গাবুরা ইউনিয়ন। সরেজমিন দেখা যায়, ওই ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন শত শত ড্রাম নিয়ে মানুষ ট্রলারে নদী পাড়ি দিয়ে পানি নিতে আসেন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদে। এ ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছে বেসরকারি খাত চালিত ‘প্রবাহ’ নামক পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট। সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে ফিরে যান তারা। পানি নিতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রবাহ প্ল্যান্টের পানিতে লবণাক্ততা নেই। তাই এই পানি ‘মাম’ নামে পরিচিত। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন গাবুরার অনেকেই ট্রলারে চড়ে পানি নিতে আসে। কিন্তু ঝড়-বন্যা হলে তখন পানি নিতে পারি না। তবে বৃষ্টি হলে সেই পানি সংরক্ষণ করে তা খাই।

গাবুরা ইউনিয়নের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লাইলা খাতুন (৬০) বলেন, বয়সের কারণে পানি টেনে এনে পান করতে পারি না। পানি কিনে খাই। প্রতিটি জার ২০-২৫ টাকা দরে কিনতে হয়। তিনি বলেন, টাকা খরচ করে পানি পান করতে বড় কষ্ট লাগে। তাই যত কম পানি পান করা যায়, সেই চেষ্টা করি। সুপেয় পানির দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সাওগাত গাজী জানান, ওই ইউনিয়নে দৃষ্টিনন্দন নামের একটি সরকারি পুকুর রয়েছে। ওই পুকুর তাদের পানির উৎস। ওই পানি আনতে দুই থেকে তিন ঘণ্টার পথ হাঁটতে হয় বলে জানান তিনি। অনেকেই এই কষ্ট করতে না পেরে বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি পান করেন। তারা নানা ধরনের রোগেও আক্রান্ত হন।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন সুপেয় পানির সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও নিরাপদ পানি সরবরাহে এগিয়ে এসেছে। আমরা তাদের স্বাগত জানিয়েছি। এছাড়া সরকারিভাবে পানি সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে খাল খনন ও বৃষ্টি পানি সংরক্ষণের উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।

শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ও মুন্সিগঞ্জের ‘প্রবাহ’ পানি প্ল্যান্টে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই পানি নেওয়ার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি। তাদের কেউ কেউ দুই-তিন কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমত আরা কবরী জানান, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ডিপটিউবওয়েলের পানিও লবণাক্ত। প্রবাহ থেকে সংগ্রহ করা পানিতে সেই সমস্যা নেই। এই প্ল্যান্ট থেকে দূর-দূরান্ত এলাকায় ভ্যানে পানি নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। ‘প্রবাহ’ পানি প্ল্যান্ট স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ম্যাক্রো মার্কেটিং করপোরেশনের সিইও অপরূপ আইচ জানান, সাতক্ষীরাসহ দেশের ২২ জেলায় ১১৭টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্ল্যান্ট নিয়মিত পরিষ্কার ও পানির মান পরীক্ষা করা হয়।
আজ বিশ্ব পানি দিবস

‘কয়রায় দুই কলসি পানি সংগ্রহ করতেই আধাবেলা যায়’ : কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি রিয়াছাদ আলী জানান, চার পাশে সুবিশাল জলরাশি। কিন্তু সুপেয় পানি নেই। লবণাক্ততা সুপেয় পানির সব উৎসস্থল গ্রাস করেছে। গভীর নলকূপের পানিতেও লবণ ও আয়রন। অনেক পুকুরের পানি লবণাক্ত ও ঘোলা। এক কলসি খাওয়ার উপযোগী পানি সংগ্রহ করতে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। দুই কলসি পানি সংগ্রহ করতেই দিনের আধাবেলা লেগে যায়। খুলনার নদীবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা কয়রায় সুপেয় পানি নিয়ে রীতিমতো এমন হাহাকার চলছে। আজ বিশ্ব পানি দিবসে সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি নিশ্চিতের দাবি কয়রাবাসীর।

রোববার সরেজমিন কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরে দেখা গেছে-খাওয়ার পানি নিতে ব্যস্ত নারীরা। কেউবা ব্যস্ত কলসিতে পানি ভরতে। অনেকে পানি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কাঁখে কলসি নিয়ে দলবদ্ধভাবে আসছেন অনেকে। পড়ন্ত বিকালে পানি নিতে হেঁটে দূরের গ্রাম থেকে এসেছেন তারা। এখানকার পুকুরের পানিতেও লবণ। শুষ্ক মৌসুমে সেগুলো শুকিয়ে যায়। অনেক স্থানে গভীর নলকূপ থাকলেও পানিতে আয়রন ও লবণযুক্ত। এর ফলে পানির জন্য উপজেলাজুড়ে রীতিমতো হাহাকার চলছে। এক কলসি খাওয়ার উপযোগী পানি সংগ্রহ করতে শিশু, নারী-পুরুষদের মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে হয়। পুকুরের ঘোলা ও লবণযুক্ত পানি পান করতেও অনেকে বাধ্য হচ্ছে।

মহেশ্বরীপুর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুর থেকে পানি নিতে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব জরিনা খাতুন। বয়সের ভারে অনেক পথ হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দূর করতে ঘাটে কলসি রেখে তিনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমাদের। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে এখানে দুইবার আসতে হয়। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দুই কলস করে পানি নেই। দুইবার পানি নিতে দিনের আধাবেলা লেগে যায়। আমাদের আশপাশে আর কোথাও মিষ্টি পানি না থাকায় এ পানি দিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজ করতে হয়। বয়স হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো হাঁটতেও পারি না। সাতহালিয়া গ্রামের নাসির মোড়ল বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর। এ জীবন পার করলাম পুকুরের পানি খেয়ে। কারণ আমাদের এখানে টিউবওয়েলের পানি ভালো হয় না। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের মাধ্যমে একবার টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তিন হাজার ফুট গিয়েও মিষ্টি পানি পাইনি। কালিকাপুর গ্রামের চন্দনা সানা বলেন, জলের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে। বর্ষাকালে একটু ভালো থাকি। এরপর বাকি সময় ধরে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। পুকুরের জল খেয়ে কোনো না কোনো পেটের রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। ৬নং কয়রা গ্রামের আদিবাসী সদস্য বাসন্তী মুন্ডা বলেন, অনেক দূর থেকে পুকুরের পানি এনে আমাদের খেতে হয়। এ রকম সমস্যা অধিকাংশ জায়গায়।

কয়রা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, কয়রায় সুপেয় পানির খুবই অভাব। কিছু কিছু এলাকায় টিউবওয়েলের পানিতে আয়রন বেশি। ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। ৫নং কয়রা, ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রা, পাথরখালী, মঠবাড়ি, তেঁতুলতলার চর, সাতহানি, চৌকুনী, গাতিরঘেরিসহ অধিকাংশ এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট রয়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, সুন্দরবনের পাদদেশে কয়রা অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলের অর্ধেক মানুষ পুকুরের পানি পান করে থাকেন। লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় খাবার পানির সংকট থাকে। তবে সরকারিভাবে ট্যাংক সরবরাহ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমিনুর রহমান বলেন, কয়রার মানুষের খাবার পানি সংকট নিরসনে সরকারি পুকুরগুলো সংস্কারের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পলিমার ট্যাংকি বিতরণসহ পানি সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/657150