২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ৪:৫২

পর্যবেক্ষকদের মতে বাংলাদেশে গত সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত হয়নি। ওই নির্বাচনে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরানো, বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্ট এবং ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের খবরে পর্যবেক্ষকেরা এ ধারণা পোষণ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে।

যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের অভিযোগকে যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে তাহলে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। গত নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, এটি প্রমাণিত
মাহবুব উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

প্রতিবেদনে বাংলাদেশবিষয়ক অংশের শিরোনাম, ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস: বাংলাদেশ’। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারের পরিস্থিতি, ধরপাকড়, আটক বা গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ও কারাবন্দীদের সঙ্গে আচরণ, বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকারকর্মী–নাগরিক সমাজ ও সরকার সমালোচকদের প্রতি হুমকি–হয়রানি–নির্যাতন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ‘শরণার্থীদের’ সুরক্ষা, মৌলিক সেবাপ্রাপ্তির সুবিধা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতা, দুর্নীতি, সরকারি কাজকর্মে স্বচ্ছতার ঘাটতি, বৈষম্য ও সামাজিক নির্যাতন, মানব পাচার, শ্রমিকদের অধিকারসহ নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির কথা রয়েছে; যেখানে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তাঁর দল পাঁচ বছর মেয়াদে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন। বিভিন্ন অনিয়মের খবরে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে সুষ্ঠু ও অবাধ বলে বিবেচিত হয়নি।

মার্কিন এই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, গত নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, এ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কারও সন্দেহ নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সত্য কথাই উঠে এসেছে। তাঁর মতে, আগামী নির্বাচনও ভালো হওয়ার পরিবেশ এখনো দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। সে জন্য গত নির্বাচন নিয়ে এসব কথা এখন জোরালোভাবে সামনে আসছে।

অন্যদিকে নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। গত রাতে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের অভিযোগকে যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে তাহলে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তাঁর মতে, গত নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, এটি প্রমাণিত। কিন্তু বিএনপি গত নির্বাচনে প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। দলটির ভেতরের দ্বন্দ্ব ও হতাশা থেকে এই কাজ করেছে।

গত নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, এ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কারও সন্দেহ নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সত্য কথাই উঠে এসেছে
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

এদিকে মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে বহু নির্যাতনের ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতন ও দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেওয়ার অনেক খবর রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করা, ঘটনার তদন্ত করা, তাঁদের বিচার ও সাজা প্রদানে হাতে গোনা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/lzjpyzl2dt