২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ৪:৩৪

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭৮% শিশু

রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ১৬ জন রোগীর ১৩ জনই শিশু। তাদের একজন ইশতিয়াক ফারহাদ। শিশুটির বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ইশতিয়াক জলবসন্ত থেকে সেরে ওঠার আগেই আক্রান্ত হয় মাম্পসে।
কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মঞ্জুরুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হঠাৎ জ্বর, এরপর গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। জলবসন্ত বুঝে প্রথমে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু তিন দিন পর থেকে পেট ব্যথা, সঙ্গে বমি শুরু হয়। ছেলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অবস্থার অবনতি দেখে স্থানীয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যালে নিয়ে যাই। সেখান তিন দিন চিকিৎসা শেষে পাঠানো হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালে। শিশু হাসপাতালে গেলে তারা ভর্তি নেয়নি। বলা হয় এই হাসপাতালের কথা। এরপর এখানে ভর্তি করাই।

গত শনিবার দুপুরে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ষষ্ঠ তলার ৮ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ শিশুকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। কারো কারো নিউমোনিয়া হওয়ায় নাকে নেবুলাইজার দিয়ে রাখা হয়েছে। কারো কারো মুখে ও গায়ে থাকা ফুসকুড়িতে সাদা পাউডারজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি এসব শিশু জলবসন্তের সঙ্গে কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, কারো আবার মাম্পস, মেনিনজাইটিস সমস্যা, মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস সমস্যা।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান জানান, জলবসন্তের মৌসুম হলো জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এই সময়ে প্রতিবছর ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি হয়। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৮৩ জন জলবসন্ত নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ জনই শিশু। মারা গেছে ছয়জন।

হাসপাতালে ভর্তি আরেক শিশু মিথিলা। শিশুটির নাকে নেবুলাইজার দিয়ে রাখা হয়েছে। পাশেই বসে আছেন শিশুর মা হাসি বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে ভর্তি। জলবসন্ত হয়েছিল, কয়েক দিন পরই নিউমোনিয়া হয়ে যায়। দম নিতে পারে না। হাঁ করে দম নেয়। বলতে বলতে চোখের পানি মুছতে থাকেন হাসি।

ডা. মিজানুর রাহমান বলেন, জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হলো সংক্রামক রোগ, যা ভেরিসেলা জোস্টার নামক একটি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে। আক্রান্ত যেকোনো বয়সেরই হতে পারে। তবে এ রোগে বেশির ভাগ শিশু আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসনালি ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে জীবনহানির কারণ হতে পারে। ত্বকে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে গর্তের সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘জলবসন্ত জীবনহানিকর কোনো রোগ নয়। দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় পর এই রোগ এমনিতেই সেরে যায়। তবে জলবসন্তের সঙ্গে অন্যান্য রোগ যুক্ত হলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, গ্রামের মানুষ এখনো এ রোগে ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুর জলবসন্ত হলে ঝাড়ফুঁক নয়, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এই রোগে বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা নেওয়া যায়।’

চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। শরীরে প্রথমে ঘামাচির মতো গুটি উঠতে থাকে, যা ফুসকুড়িতে পরিণত হয়। ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার দুই থেকে তিন দিন আগে থেকেই শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়, জ্বর দেখা দেয়, পেট ব্যথা হতে পারে। লালচে ফুসকুড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। ফুসকুড়িতে পানি জমে, যা পরবর্তী সময়ে শুকিয়ে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়। কাশি ও পাতলা পায়খানাও হতে পারে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, শুকিয়ে যাওয়া ফুসকুড়ির খোসা থেকেও অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি ও ফুসকুড়ির খোসা বায়ুবাহিত হয়েও এই রোগ ছড়াতে পারে।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত একবার আক্রান্ত হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা খুব বেশি থাকে না। তবে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম; বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের সতর্কতা জরুরি। এ ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া ভালো।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/03/20/1262871