২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ১১:২৬

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন নিয়ে তুলকালাম

নির্বাচন একতরফা হয়নি : বার সভাপতি


হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হট্টগোল, ভাঙচুর, ধস্তাধস্তি, ধাক্কাধাক্কি, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ ও স্লোগান-পাল্টা স্লোগানের মধ্যে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একতরফা নির্বাচন শুধু আইনজীবী সমাজেই নয়, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক বলে দাবি করেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। তারা অবিলম্বে সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। গতকাল সমিতির দক্ষিণ হলে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।

অপর দিকে সমিতির নির্বাচন একতরফা হয়নি উল্লেখ করে আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো: মোমতাজ উদ্দিন ফকির। রোববার সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের প্রার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচনকে ঘিরে আইনজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক আগ্রহ ছিল; কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ করেছি যে, দেশের অন্য সব নির্বাচনের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনেও একই ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে। এ নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু অতি উৎসাহী আইনজীবী ও পুলিশের নারকীয় তাণ্ডব আইনজীবী হিসেবে সমাজের কাছে আমাদের হেয় করেছে। এটা শুধু আইনজীবী সমাজেরই নয়, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক।

সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও সাবেক সম্পাদক মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী সাবেক সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল, সমিতির সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, নির্বাচনে সহসভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী রেজাউল করিম, সহ-সম্পাদক প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো: আব্দুল করিম, আইনজীবী মো: আক্তারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বারের বিদায়ী কমিটির ট্রেজারার মো: কামাল হোসেন, সহ-সম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মো: মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী একাধিকবার প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সাথে সাক্ষাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া পুলিশের তাণ্ডবে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করেন। এরপরও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়নি। পুলিশি তাণ্ডবের কোনো দৃশ্যমান প্রতিকার হয়নি। আমাদের দুঃখ, আইনজীবীদের একটি সমিতির নির্বাচনেও পুলিশকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়! এটা বড় লজ্জার বিষয়।

এই নির্বাচনের আইনগত কোনো বৈধতা নেই দাবি করে সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত-বিচার না হবে এবং পুনরায় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ আইনজীবীদের নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

আজ আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভ : আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ, সুপ্রিম কোর্ট বারে পুনঃনির্বাচন, সাংবাদিক ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত নির্যাতন এবং আইনজীবী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপু ১২টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
আইনজীবী-সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট : প্রধান বিচারপতির অনুমতি ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এবং দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। রোববার বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের ১৪ জন প্রার্থীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করা হয়।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, বিচারপতি মো: খসরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে তিনিসহ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী এ রিট আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন। আজ সোমবার এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য তালিকায় আসবে।

রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, পুলিশের আইজি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ডিবি প্রধান ও শাহবাগ থানার ওসিকে বিবাদি করা হয়েছে।

ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে পুলিশের বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট আবেদন দায়ের করেছি। রিটে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাসহ রুল জারির আর্জি জানিয়েছি।

সাংবাদিক-আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় ল ইয়ার্স কাউন্সিলের নিন্দা : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন ন্যাশনাল ল ইয়ার্স কাউন্সিল (এনএলসির) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু। রোববার এনএলসির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই ঘটনা রাষ্ট্র কর্তৃক পুলিশকে ‘অপব্যবহারের নির্মম দৃষ্টান্ত’। তিনি হামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

একই সাথে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অসংখ্য আইনজীবীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও অনতিবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং ওই মামলায় গ্রেফতার আইনজীবীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে সংগঠনটি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/735553