২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৩০

দ্বিতীয় দিনে সড়ক অবরোধ, চালক হেলপার গ্রেফতার

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাসের ধাক্কায় নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করেছে। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এদিকে ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে চালক লিটন (৩৮) ও হেলপার আবুল খায়েরকে (২২) গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ।

পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জানান, বাসচাপায় নাদিয়া নিহতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিন গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর সড়কের কাওলা ব্রিজের নিচে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে খিলক্ষেত থেকে উত্তরাগামী রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মকর্তারা ছুটে এসে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। পরে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়ে সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়লে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আশরাফুল বলেন, আমাদের ৪ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আমরা পুলিশকে বলেছি ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আমরা আবারো রাস্তায় নামব। আরো একটি কথা আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, যদি রাস্তায় ভিক্টর ক্লাসিকের কোনো বাস চলাচল করে তাহলে আমরা সাথে সাথে রাস্তায় নামব।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ (ডিসি) কমিশনার মো: মোর্শেদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি দাবি ছিল বাসচালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করা। তাদের সোমবার সকালেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন ভিক্টর ক্লাসিকের রুট পারমিট বাতিল ও এই পরিবহন বাস যেন রাস্তায় না চলে। ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাস যেন রাস্তায় না চলে সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া রুট পারমিট বাতিলের বিষয়টিতে একটু সময় লাগবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আরো দাবি জানিয়েছে নাদিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও কাওলা এলাকায় তার নামে একটি বাস স্টপেজ করার।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পরিবারের সাথে আমরা কথা বলব। এ ছাড়া ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের কর্তৃপক্ষের সাথেও এ বিষয়ে কথা বলব। আর স্টপেজ নির্মাণের বিষয়টি সিটি করপোরেশন দেখবে।

আটক বাসচালক লিটন ভোলা সদরের ইলিশার মো: কালু মিয়ার ছেলে ও হেলপার আবুল খায়ের একই জেলার সদরের বিদুরিয়া গ্রামের হাসেম ঘরামীর ছেলে। দুজনই বাড্ডার আনন্দনগরের সার্জেন্ট টাওয়ারের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আ: আহাদ বলেন, ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি বুঝে বাস রেখে পালিয়ে যান তারা। পরে মিরপুরের শাহ আলী থানাধীন প্রিয়াংকা হাউজিং থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রাতেই আত্মগোপনের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে ভোলা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।

ভাটারা থানা পুলিশ কর্তৃক ঘাতক ভিক্টর বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারের ঘটনায় গতকাল দুপুরে বনানীর ডিসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আ: আহাদ বলেন, রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাদিয়া মোটরসাইকেলে উত্তরা থেকে আসছিলেন।

মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো-ল-৬০-২৬৮২) চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান। প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩১৯০) বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে আরোহী নাদিয়া রাস্তায় পড়ে যায়। মাথার ওপর দিয়ে বাসের চাকা যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই নাদিয়ার মৃত্যু হয়। ভাটারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘাতক বাসটি আটক করে। নাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে নাদিয়ার বাবার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
নিহত নাদিয়া পটুয়াখালী গলাচিপার পূর্ব নেটার জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে। রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর, রোড নম্বর-৯/১ বাসায় থাকতেন নাদিয়া।

ডিসি আহাদ বলেন, নাদিয়ার মৃত্যুর পর ভাটারা থানায় মামলা করেন তার বাবা জাহাঙ্গীর। অন্যদিকে নাদিয়ার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেয়। ঘাতক চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারে ভাটারা থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান শুরু করে। রাতেই সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেলপারকে শনাক্ত করা হয়। তিনি বলেন, রাজধানীর সড়কে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক হিসেবে বাসই বেশি দেখা যায়। ভিক্টর পরিবহনের বাসচাপায় এর আগেও শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় বাসে বাসে রেষারেষি বন্ধ হয়েছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিসি আহাদ বলেন, গুলশান ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগসহ ডিএমপি সড়ক পরিবহন আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যারা সাধারণ যাত্রী ও পথচারী, সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে আইন নিয়মকানুন মানতে হবে, জানতে হবে। তদন্তে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/722655