২১ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৫:২৯

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছেই

অনেক আগে থেকেই বৃদ্ধি পেয়ে আছে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম। এখন দাম কমার পরিবর্তে আবার নতুন করে বাড়ছে। সব ধরনের সবজির দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সরু চালের দাম। একই সঙ্গে ব্রয়লার মুরগি বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা। ডিমের দাম বেড়েছে হালি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা। এছাড়াও বেড়েছে আদা, রসুন, ছোলা, মসুর ডাল, জিরা ও মসলাসহ কয়েকটি পণ্যের দাম। শীতকালেও শীতের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। অধিকাংশ পণ্যের দাম নতুন করে বৃদ্ধি পেয়ে বাজারে আবারো অস্থিরতা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, রমযানে যাতে করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে না হয় এ জন্য এখন থেকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

টিসিবির তথ্যে দেখা যায়, গত এক মাসে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর জিরার দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত বছরের এই সময়ে দেশি শুকনো মরিচের দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি। এখন সেই একই মরিচ কিনতে হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসেবে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৩২ শতাংশের বেশি। একইভাবে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। বর্তমানে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই রসুন। গত বছরের এই সময়ে ৪০ টাকায় এই রসুন পাওয়া যেতো।

সরকারি সংস্থা টিসিবি আরো জানিয়েছে, আদার দাম বেড়েছে ১১১ দশমিক ১১ শতাংশ। আদার কেজি এখন ২৮০ টাকা। একই পরিমাণ আদা গত বছরের এই সময়ে ৬০ টাকাতে পাওয়া যতো। এছাড়া গত এক বছরে অন্তত ৩৫ ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে ‘ডাবল ডিজিট’ হারে। এ ছাড়া শীতের ভরা মৌসুমে প্রায় সব ধরনের সবজির দামও চড়া।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, সরু চাল বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকা বাড়তি দামে। আমন মৌসুমেও বাজারে চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। শুধু মোটা চালের দাম সামান্য কমেছিল। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে সরু চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চাল ব্যবসায়ীরা জানান, আমন মৌসুমের চাল বেশিভাগই মোটা হয়। এজন্য এ সময়ে মোটা চালের দাম না বাড়লেও সরু চালের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। যদিও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর)। এর পরও বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজার ও মান ভেদে সরু মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা।
অন্যদিকে শীত মৌসুম শেষ না হলেও মৌসুমি সবজির দাম বাড়তির দিকে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতির কথা বললেও কোথাও সেরকম লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। তবে দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।

সবজির বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মুলা ও প্রতি পিস ফুলকপিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সিমের কেজি এখন ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, উচ্ছের কেজি ৮০ টাকা, তাল বেগুনের কেজি ৮০ টাকা। এছাড়া লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, বরবটির কেজি ১০০ টাকা, ভালো মানের প্রতি পিস লাউ ১০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতি পিস লাউ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপের কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। এছাড়া নতুন আলুর কেজি ৩০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। অন্যদিকে অব্যাহত রয়েছে আদা রসুনের মূল্য বৃদ্ধি। এ দুই পদের মসলা কিনতে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি দেড়শ থেকে ২০০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। পাঁচ দিন আগে কেনা যেত ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে জিরা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা এবং দারুচিনি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকার ছোট এলাচের কেজি দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা মসুর ডাল (বড় দানা) কিনতে লাগছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এই মানের ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দের। দেশি মসুর (ছোট দানার) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে। এছাড়া এক সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডালের দাম এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। পাশাপাশি ডিমের দামে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। কোনো কোনো এলাকায় প্রতি ডজন (১২ পিস) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। কোথাও আবার ১২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দোকানিরা সামাজিক ও বিভিন্ন উৎসবকে দায়ী করছেন। চাহিদা বাড়ার কারণে ডিম ও মুরগির দাম কিছুটা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফার্মের মুরগির হালি বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়। হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। টিসিবি তথ্য বলছে, এক মাস আগে ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ছিল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। ডজন ছিল ১০৫ টাকা। সেখান থেকে হালিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়ে ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে।

অবশ্য গরুর গোশত আগের মতোই ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে খাসির গোশত ৯০০ টাকা কেজি, এবং ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, শুক্রবার বাজারে কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, পাবদা ৪৫০ টাকা, মলা ৩৬০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ ২৬০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, টেংরা ছোটগুলো ৫০০ আর বড় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ এবং গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

https://dailysangram.com/post/514331