৮ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ৯:৪০

শীতে বেড়েছে দগ্ধ, সিট খালি না থাকায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি বন্ধ

প্রচণ্ড শীতে উষ্ণতা পেতে চুলায় আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয় ১২ বছরের ঝুমা আক্তার, এখন সারা শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বেডে কাতরাচ্ছে সে।

ঝুমার মা হ্যাপি বেগম জানান, গত শুক্রবার দুপুরে চুলায় আগুন পোহাতে গেলে মেয়ের জামায় আগুন ধরে যায়। এরপর পিঠসহ শরীরের অনেকাংশ দগ্ধ হলে ঝুমাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।

দু’দিন ধরে এ ইনস্টিটিউটেরই অবজারভেশন ওয়ার্ডে শঙ্কা নিয়ে সময় পার করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের তালগড়া গ্রামের এই শিশুর পরিবার। বিডিনিউজ।
ঝুমার মতো এ রকম আগুনে পোড়া কিংবা গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া রোগীদের উপচে ভিড় তৈরি হয়েছে বার্ন ইনস্টিটিউটে; জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় সেখানে রোগী ভর্তি করা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক এস এম আইউব হোসেন।

৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে শনিবার কোনো বেড খালি ছিল না। চিকিৎসা নিতে আসা দগ্ধ রোগীদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে রেফার করছেন চিকিৎসকেরা। তবে সেখানেও প্রচুর ভিড়; ওয়ার্ডের মেঝে বা বারান্দাও রোগীতে পূর্ণ।

ডা: আইউব বলেন, শীতের সময়ে রোগীর চাপ বেশি থাকে, বর্তমানে রোগীর চাপ আগের তুলনায় অনেক বেশি। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে এখন ভর্তি রয়েছে ৫২০ জন রোগী।
অবজারভেশন ওয়ার্ডের শয্যাগুলোও রোগীতে পরিপূর্ণ জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, “বর্তমানে কোনো সিট না থাকায় আমরা কোনো রোগী ভর্তি নিতে পারছি না। তবে পুরাতন রোগীদের জন্য আউটডোর খোলা আছে।

‘বর্তমানে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারছি। পরে রেফার করে দিচ্ছি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।’
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের রেজিস্টার হিসাব অনুযায়ী, শনিবার ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে সেখানে।
সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে দিন পার করছেন রাজধানীর শনিরআখড়ার জোসনা বেগম। গরম পানির হাঁড়ির উপর পড়ে গিয়ে বাম হাত কনুইয়ের ওপর পর্যন্ত ঝলসে গেছে তার মেয়ের।

জোসনা বলেন, ‘শীতের কারণে পানি গরম করে রান্নাঘরে রেখেছিলাম। মাইয়া খেলতে খেলতে গিয়া পড়ছে গরম পানির হাঁড়ির উপর।’
১৪ বছরের স্মৃতিকে নিয়ে ইনস্টিটিউটে শঙ্কায় সময় পার করছেন তার বাবা বাকী মিয়া। তিনি বলেন, শুক্রবার গ্যাসের চুলা থেকে স্মৃতির জামায় আগুন লেগে যায়। এখন অর্ধেক শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে তার মেয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের অবজারভেশন ওয়ার্ডে কাতরাচ্ছে।

কামরাঙ্গীচর রনি মার্কেট এলাকার বাসিন্দা ইকবালের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা সুরমা আক্তার রান্না করতে গিয়ে জামায় আগুন লেগে দগ্ধ হন। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে।
চিকিৎসকদের বরাতে ইকবাল জানান, অনাগত শিশু ও আর মা দুইজনেরই জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। অসাবধানতাবশত তার স্ত্রীর জামায় আগুন ধরে গিয়েছিল।

হাসপাতালে ভর্তি একাধিক রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে, গরম পানি পড়ে, রান্নার সময় চুলার আগুনে, বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়েছেন বেশি। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই এসব রোগীদের পাঠানো হচ্ছে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অনেকে দগ্ধ হচ্ছেন। অনেকেই চুলা জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখা বা কাপড় শুকাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছেন।
অন্য দিকে শীতে গরম পানির ব্যবহার বাড়ে। যে কারণে গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া রোগীদের সংখ্যাটাও কম নয়। ফলে শীতে আগুন পোহানো কিংবা গরম পানির ব্যবহার নিয়ে সাবধানতা অবলম্বনের উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/718828