৬ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ৪:০০

পরিবহণে ব্যাপক চাঁদাবাজি, জিম্মি চালক-মালিক

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে পরিবহণ সেক্টরে চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। দূরপাল্লার বেনামি পরিবহণেও হচ্ছে ব্যাপক চাঁদাবাজি।

এদিকে সিটি টোলের নামে ওইসব পরিবহণ থেকেও যাত্রাবাড়ী, ডেমরার কোনাপাড়া ও স্টাফ কোয়ার্টার থেকে আলাদা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, এসব চাঁদাবাজিতে পরিবহণ চালক ও মালিকরা বর্তমানে জিম্মি দশায় রয়েছেন।
বর্তমানে কৌশল বদলে পুলিশের নাকের ডগায় টার্গেটভিত্তিক চাঁদা আদায়ে জড়িত হচ্ছে কিশোর গ্যাং। তারা প্রতিদিন স্পট পরিবর্তন করে কাজ করে। আর এসব পরিবহণ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি ও অপহরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা মিলছে না। বরং চাঁদা না দিলে ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে চাঁদাবাজরা মামলা দেওয়ার ভয় দেখায়।এ চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ পরিবহণ মালিক-চালকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পরিবহণ সেক্টর সূত্রে জানা গেছে, ৩ বছর ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী, ডেমরার কোনাপাড়া ও স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সিটি টোল হিসাবে রসিদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ছোট পিকআপ ৩০ টাকা, যাত্রীবাহী বাস ও বড় গাড়ি ৬০ টাকা, সিএনজি ১০ টাকা হারে আদায় করে চাঁদাবাজরা।

একই সঙ্গে রাত ও দিনে বড় পণ্যবাহী ট্যাংক লরি ও যানবাহন থেকে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা আদায় করছে, যা একেবারেই নিষিদ্ধ। এ সড়ক দিয়ে দিগন্ত ও মডার্ন নামে সিলেট ও হবিগঞ্জগামী পরিবহণ থেকে সিটি টোলসহ রূপগঞ্জের বিশ্বররোড ও গাউসিয়া থেকেও মোট ১৬০ টাকা আদায় করে পরিবহন চাঁদাবাজরা।

এছাড়া রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা মদনপুর, সোনারগাঁও, দূরপাল্লার হোমনা, দাউদকান্দি, কুমিল্লা, গৌরীপুর, লাকসাম ও চাঁদপুরসহ অন্তত ১৫ রুটে চলা প্রায় ২শ যানবাহন থেকে চিটাগাং রোডে চাঁদা আদায় করছে কতিপয় চাঁদাবাজরা।

এক্ষেত্রে বোরাক, শ্রাবণ, হিমালয়, মেঘলা ও বাঁধনসহ আড়াই শতাধিক বাস থেকে ৮০ টাকা নিচ্ছে চাঁদাবাজরা। আন্তঃজেলা ডাকাত নামে খ্যাত রাজুর নেতৃত্বে চিহ্নিত চাঁদাবাজ ইয়াসিন, ইসমাইল, সেন্টু, ভুট্টু, আলমগীর ওরফে আলীসহ কয়েকজন চাঁদাবাজি করছে পুলিশের সামনেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওইসব চাঁদাবাজ চক্রের মাধ্যমে গাড়ি ছিনতাই ও চুরি, গাড়ির চাকা খুলে ফেলা, চাঁদা না দিলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও মোবাইল নিয়ে চালক-মালিকদের জিম্মি করা, রাতে বাসে ডাকাতি, মাদক বিক্রিসহ ও নানা অপরাধ করে। তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও র‌্যাব-১১ এর কাছে একাধিক অভিযোগসহ মামলা রয়েছে। তবে প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করলেও দ্রুত ছাড়া পেয়ে একই কাজে লিপ্ত হয় তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, ভৈরব, নরসিংদীসহ কয়েকটি রুটগামী বাস কাঁচপুর এলেই কিশোর গ্যাংয়ের চাঁদাবাজরা লাঠিসোঁটা নিয়ে গতিরোধ করে। এ সময় পরিবহণপ্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের বিনা স্বাক্ষরকৃত রসিদের মাধ্যমে শ্রমিক পরিচালনা ব্যয় ৩০ টাকা ও রোড পরিচালনা ব্যয় ২০ টাকা হারে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, কাঁচপুর এলাকার সাবেক নারী সদস্য জহুরা আক্তার শান্তার নেতৃত্বে তার স্বামী বাচ্চু মিয়া, ভাই জিয়া ও বাবা রব মিয়ার নিয়ন্ত্রণে কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা এভাবে চাঁদা আদায় করছে। এখানেই আবার সিলেট, হবিগঞ্জ, ভৈরব ও নরসিংদী চলাচল করা পরিবহণগুলো থেকেও একইভাবে চাঁদা আদায় করছে তারা।

এ রুট দিয়ে চলা রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুরের অন্তত ২৫ পরিবহণ থেকেও প্রতিদিন ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহণ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, চাঁদা আদায়ের বিষয়টি ভুক্তভোগীরা সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ সবচেয়ে বেশি জরুরি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা হাইওয়ে পুলিশের কাঁচপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক) আবুল কাশেম বলেন, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আজও দুজনকে গ্রেফতার করে সোনারগাঁ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আর কিশোর গ্যাং চাঁদাবাজদের বিষয়েও তদন্ত করে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, সড়ক-মহাসড়কে সিটি টোলের নামে অনুমোদন ছাড়া চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সড়কে যে কোনো চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে র‌্যাব তদারকি বা ছায়াতদন্ত করছে। দোষীদের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/631975