খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে মামলা ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপন করা যাবে। এতে ব্যাংকের মন্দ মানের খেলাপি ঋণ কাগজে কলমে কমে যাবে; অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে আড়াল হয়ে যাবে আদায় অযোগ্য এ মন্দ মানের খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল ব্যাংকগুলোর জন্য এ-সংক্রান্ত নতুন এক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, বিদ্যমান নীতিমালায় দুই লাখ টাকা পর্যন্ত মামলা না করেই মন্দ ঋণ অবলোপন করা যেত। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে কৃষি এবং অতি ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পসহ ছোট অঙ্কের ঋণের মামলার খরচ যদি ঋণের অঙ্কের চেয়ে বেশি হয়; তা হলে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপন করতে মামলা করতে হবে না। আর ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোও তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন এ নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় না করেও তাদের খেলাপি ঋণের হার কমানোর সুযোগ পাবে। এতে কমে যাবে সামগ্রিক খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা; যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত জুনে খেলাপির পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। তবে গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনা করলে খেলাপি ঋণ ৩৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বেড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
