৫ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:১২

বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বাড়ছে : নীতিমালা শিথিল

বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট মেটাতে সরবরাহ বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণের অংশ স্থানীয় শিল্পেও ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ সুযোগের মেয়াদ গতকাল আরো ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রায় দায়দেনা কমাতে আগে এ ধরনের অনুমোদন দেয়া হতো না। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় শুধু দায়ই বাড়ছে না, বরং সামনে ঋণ পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ আরো বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে স্বল্প মেয়াদি অর্থাৎ এক বছরের কম সময়ের ঋণই রয়েছে ১৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বেসরকারি খাতের ঋণের প্রায় ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহের (ওবিইউ) সীমা রয়েছে ৮.০৯ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। এরই মধ্যে এ চাপ সামলাতে পণ্য আমদানির জন্য কড়াকড়ি করা হয়েছে। অত্যবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার চাপ যখন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চলমান সংকট মেটানোর জন্য নীতিমালা শিথিলের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। আগে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যাংকগুলো বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করত তা শুধু ইপিজেডের মধ্যে অবস্থিত শিল্প কারখানার জন্য ঋণ দিতে পারত ব্যাংকগুলো। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় এলসি খোলার অনুমোদন দিতে পারছে না। এ কারণে গত ১৪ জুলাই এক সার্কুলারের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তহবিল ইপিজেডের বাইরের শিল্প কারখানায় ব্যবহারের জন্য ঋণ দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। বলা হয়েছিল এ সুবিধা কেবল ৩০ ডিসেম্বের পর্যন্ত বহাল থাকবে। কিন্তু ডলারের সঙ্কট না কেটে বরং আরো বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালার শিথিলতা আরো ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। গতকাল এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওবিইউ এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর সংগ্রহ করা বৈদেশিক মুদ্রা স্থানীয় শিল্প কারখানার জন্যও (ডিবিইউ) ব্যবহার করার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমনিতেই বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার দায় বেড়ে গেছে, এ জন্য চাপ বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। এর ওপর স্থানীয় শিল্প কারখানায় বৈদেশী ঋণ দেয়ার সুযোগ বাড়ানোর ফলে এ চাপ আরো বেড়ে যাবে। এমনিতেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছেন না। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। এমনি পরিস্থিতিতে ঢালাও ভাবে বিদেশী ঋণ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ায় হিতে বিপরীত হতে পারে। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ না বাড়িয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর বেশি নজর দিলে আরো বেশি সুবিধা হতো। একই সাথে অভার ইনভয়েজিংয়ের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার ঠেকানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিলে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে যেত। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ জাতির ঘাড়ে কম চাপতো বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/718129