১৮ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ৩:২৮

বইপাড়ায় বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

বাংলা একাডেমির বইমেলা পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে বইপাড়ায় বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি ঘনিয়ে আসায় একদিন আগেও বইপাড়া খ্যাত বাংলাবাজার ছিল সরগম। কিন্তু গতকাল সোমবার দেশের সবচেয়ে বড় এই বই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় কোনো প্রাণ চাঞ্চল্য নেই। সবই যেন থেমে আছে। কিছু কিছু ছাপাখানায় কাজ চললেও অনেকই বন্ধ।

ছাপাখানার কর্মচারীরা জানান, বইমেলা উপলক্ষে গত এক মাস থেকে তারা রাত দিন কাজ করছেন। কিন্তু মেলা পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে অনেক প্রকাশক এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন। ফলে লোকসানের ভয়ে আপাতত তারা আর কাজ করাতে চান না।
কয়েকজন প্রকাশক জানান, এ বছর মেলা ভালো হবে এ আশায় তারা প্রচুর বইয়ের কাজ হাতে নিয়েছিলেন। আশা ছিল এবার হয়তো করোনার ধাক্কা থাকবে না। ফলে ব্যবসা ভালো হলে বিগত বছরের লোকসান কাটানো সম্ভব হবে। কিন্তু এবারো মেলা পিছিয়ে যাওয়ায় তারা আর ভরসা পাচ্ছেন না। কিভাবে ব্যবসায় টিকে থাকবেন সে চিন্তায় এখন তাদের ঘুম হারাম। তাই আপাতত ছাপার কাজ বন্ধ রেখেছেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ বিষয়ে উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বিলম্বের বইমেলা অনেকটা অকার্যকরই বলা যায়। ভাষার মাসের প্রথমে মেলা শুরু হলে মানুষ যে চেতনা নিয়ে মেলায় আসে পরে তা আর থাকে না। আর ফেব্রুয়ারির পর আবহাওয়াও একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাতে মেলায় প্রাণ থাকে না। ফলে লোকসান গুনতে হয় পেশাদার প্রকাশকদের। এরকম হতে থাকলে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এ ব্যবসা আর টিকিয়ে রাখা যাবে না।

তিনি বলেন, বইমেলা জাতীয় উৎসব। এটি হবে প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বাসময়, আনন্দপূর্ণ। এখানে দেশ বিদেশের লেখক-পাঠকরা আসেন। সবার অংশগ্রহণেই একটি সফল বইমেলা হয়। গত বছর মেলার বিন্যাস ছিল স্মরণকালের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। করোনা পরিস্থিতি মেলার ধারাগতি সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছে। মাস শেষের আগেই মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাতে প্রকাশকদের বিস্তর ক্ষতি হয়েছে। এ বছরও মনে হয় সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে অনেক প্রকাশনী বন্ধ হয়ে যাবে। অপর দিকে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নতুন সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতি গোটা বিশে^। আমরাও তার বাইরে না। এবার করোনামুক্ত মেলার প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু হলো না। তবে আমরা আশা করি দুই সপ্তাহ পেছানো হলেও ফেব্রুয়ারিতেই মেলা হবে। তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শেষ পর্যন্ত কী হয় এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে লোকসান এবারো যে টানতে হবে তা আলামত বলে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/637380