১৩ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৩:৩০

অফিসগামীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ইবরাহীম খলিল : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক আরোপিত বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় বিধিনিষেধ কার্যকর হলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায় ব্যাপকহারে। বিশেষ করে মধ্য এবং নিম্নবিত্ত মানুষের আয়ের পথ সংকোচিত হয় আর খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় অফিসগামী মানুষগুলোর। তারা ‘না পারে কিছু কইতে, না পারে সইতে’ অবস্থার মধ্যে পড়ে। তাদের কপালে রীতিমত চিন্তার ভাঁজ।

এবারও বিধিনিষেধ শুরু হওয়ায় অফিসগামী মানুষগুলোর মধ্যে চিন্তার শেষ নাই। বিশেষ করে গণপরিবহনের কথা আসলে অনেকের মধ্যে ভোগান্তির কথা মনে পড়ে। অতিরিক্ত পরিশ্রম, অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয় প্রতিদিন। আর গণপরিবহনে সিট থাকে না। বাধ্য হয়ে রিকশা, বেশি দূর হলে রাইড শেয়ারিং মোটর সাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। আর ব্যক্তিটি যদি নারী হন তাহলে তো কথাই নেই। কয়েক গুণ বেশি ভাড়াতেও মন গলে না গাড়ির ড্রাইভারের। আর এই সময়টায় কসাই সাজেন রিকশা-সিএনজি চালকরা। তারা এটা মনেই করে বসেন ‘এইবার পাইছি চান্দু’, ‘যা পারি লইয়া লই।

চাকরিজীবীরা বলেছেন, অফিস থেকে বিধিনিষেধের ব্যাপারে কোনরকম নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। গাড়িতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহণের বিষয়টি কিন্তু অফিস মানবে না।

গতকাল বুধবার অনেককেই বিধিনিষেধ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলতে শোনা যায়। সুমাইয়া আক্তার নামের একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানালেন আগের বারের লকডাউনের অভিজ্ঞতার কথা। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে যাবেন আগারগাঁও। দীর্ঘ এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে কোনো পরিবহন না পেয়ে রিকশায় যাত্রা শুরু করেন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, সীমিত পরিসরে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছিল। অফিস খোলা ছিল। অফিসে তো যেতেই হবে। চাকরি বাঁচাতে হবে। চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়ে যাব। যত কষ্ট পোহাতে হয় আমাদের মত সাধারণ মানুষের। ৮০ টাকার ভাড়া রিকশা চালক নিলো ১৫০ টাকা। আবার তো বিধি নিষেধ এলো। আমার মতো অফিসগামী মানুষের কপাল পুড়লো। তার প্রশ্ন বিধি নিষেধ দিয়েছে ঠিক আছে, তবে কে দেখবে এইসব অসংগতি আর সমস্যা?

আলমগীর নামের সরকারী চাকরিজীবী বলেন, বিধি-নিষেধ মানেই মানুষের ভোগান্তি। পকেটের টাকা অনেক বেশি খরচ হয়ে যাওয়া। আমার চোখে এখনও লকডাউনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে চলাচলের দৃশ্য চোখে ভাসছে। আবার বিধি নিষেধের কথা ভাবতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সব কিছুর ব্যবস্থা না করে কেন যে খামখেয়ালি করে বিধি নিষেধ দেয় বুঝতে পারি না। পাশে থাকা আমির হোসেন বলেন, বিধি নিষেধ মানেই রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে অফিসগামী সাধারণ মানুষ। গন্তব্যে যেতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ ভাড়া। সবই আমাদের কপাল।

বিজয় সরণীতে কথা হয় পোশাক কারখানায় কাজ করা সালেহা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার গার্মেন্টস আগারগাঁওয়ে। গতবার সরকার কইছিলো আমাগো নেয়ার জন্য গাড়ি দিবো। কিন্তু আমাগো মালিক দেয় নাই। হেঁটে হেঁটে অফিসে গেছি। আবারো বিধি নিষেধ। আর ভাল লাগে না।

অফিসগামীরা বলছেন, করোনায় আমাদের জীবনের ঝুঁকিও আছে, তারপরেও বাধ্য হয়েই অফিসে যেতে হবে। চাকরি গেলে করোনার মধ্যে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়ে যাব। ২০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিয়ে হলেও যেতে হবে।

কামরুজ্জামান বিপুল নামের আরেক চাকরিজীবী বলেন, লকডাউন হোক, আর হরতাল সব থেকে বেশি কষ্ট আমাদের মত মধ্যবিত্তদের। যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে, তাদের জন্য বিধি নিষেধ নাই। প্রাইভেট কারে ওঠলেতো কোন সমস্যা হয় না। তাদের কোথাও যেতেও বাধা নাই। কিন্তু আমার মত যারা বাসে যাতায়াত করি, তারা কিভাবে অফিসে যাব, এটা কেও ভাবেনা।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ অফিসগামী মানুষের দুর্দশার চিত্র একইরকম। হেঁটে কিংবা বেশি ভাড়া দিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। তাদের দাবি অফিস খোলা রাখলে যেন পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রসঙ্গত, সরকার মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১১টি বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে গত সোমবার। আজ বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ ১১ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। কিন্তু নানা কারণে সরকার ঘোষিত বিধি-নিষেধ প্রতিপালন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বিধি নিষেধের প্রথম শর্তে বলা হয়েছে, দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

যদিও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে দেশের করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আর বাণিজ্য মেলার মতো জায়গায় কখনোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব নয়। তারা বলছেন, বাণিজ্য মেলা চলছে, পিঠা উৎসব চলছে, রাজনৈতিক সমাবেশ চলছে, নির্বাচন চলছে- এটা স্পষ্টতই ১১ দফার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

https://dailysangram.info/post/477331