১২ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার, ৩:১০

বিমানবন্দরে ছয় ল্যাবে এত পরীক্ষা কীভাবে সম্ভব

শফিকুল ইসলাম। মঙ্গলবার রাতে একটি ফ্লাইটে তার কাতার যাওয়ার কথা। তিনি একদিন আগে থেকেই হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসেছেন। তার সঙ্গে এসেছেন তার স্ত্রী, ৬ বছরের সন্তান ও এক স্বজন। শীতের মধ্যে রাত কাটিয়েছেন গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানের খোলা জায়গায়। করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় টার্মিনালের দুই তলার এক নম্বর গেটে লাইন ধরার আগে তিনি দেখেন লাইনটি ৬ নম্বর গেট পর্যন্ত চলে গেছে। ৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি করোনা পরীক্ষার টোকেন পান। এরপর আরও ২ ঘণ্টা পর তার করোনা পরীক্ষার ডাক আসে।

পরীক্ষা দেয়ার ৭ ঘণ্টা পর তার রিপোর্টটি হাতে পান। এই ১২ ঘণ্টা শুধু করোনা পরীক্ষার জন্য তাকে ব্যয় করতে হয়েছে। আর বিমানবন্দরের আনুষঙ্গিক কাজ যেমন বোর্ডিং পাস সংগ্রহ, ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ানোসহ অন্যান্য কাজ তো আছেই। শুধু শফিকুল নন এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হযরত শাহজালালে আসা শত শত যাত্রী। শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে প্রত্যেকদিন প্রায় ৯ হাজার যাত্রী দেশে এবং বিদেশে আসা-যাওয়া করেন। সব যাত্রীর করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার কারণে সবাইকে লাইনে দাঁড়িয়ে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে হয়। এক অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। যাত্রীদের অভিযোগ, বিমানবন্দরে এত যাত্রী আসা-যাওয়া করা সত্ত্বেও করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ৬টি ল্যাব আছে। মেশিন আছে প্রতি ল্যাবে ২টি করে মোট ১২টি। এত যাত্রীর ভার ৬টি ল্যাব বহন করতে পারছে না।

কর্তৃপক্ষ বলছেন, রাতে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দিনে বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। প্রত্যেক দিন গড়ে ৩ হাজার যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত সোমবার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২ হাজার ৮২৪ জনের। তারা ৩ ঘণ্টার মধ্যে করোনার প্রতিবেদন দিচ্ছেন। বুধবার আরও ১টি ল্যাব বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে। আরব আমিরাত বাদে যারা অন্যান্য দেশে যাচ্ছেন তাদের করোনা পরীক্ষার ফি ১৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। আর দুবাইগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার টাকা দিচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা অব্যাহত আছে। বুধবার আরও একটি ল্যাব বাড়ানো হচ্ছে। বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ জানান, ‘করোনা পরীক্ষায় লম্বা লাইন হচ্ছে। যাতে সবাই শৃঙ্খলা মেনে ভেতরে প্রবেশ করে তার জন্য আমরা কাজ করছি।’

গতকাল সকালে বিমানবন্দরের বহির্গমনের দ্বিতীয় তলার দ্বিতল গাড়ি পার্কিংয়ে গিয়ে দেখা যায় যে, সেখানে যাত্রীদের লম্বা লাইন। বিদেশ থেকে আসা এবং বহির্গমন লাউঞ্জগুলো যাত্রীতে ঠাসা। কেউ কেউ বসার স্থান না পেয়ে নিচে পেপার পেতে বসে আছেন। করোনা পরীক্ষার লাইনে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। অনেকেই লাইন ধরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ছেন। কেউ কেউ লাইন না ধরেই ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়াও কিছু এপিবিএন’র সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো যাত্রীকে টাকার বিনিময়ে ভেতরে দ্রুত ঢুকে পরীক্ষা করিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এপিবিএন’র পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের নাগরপুরের বাসিন্দা আকবর হোসেন জানান, একদিন আগেই এসেছি বিমানবন্দরে। ৩ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তার করোনা পরীক্ষা হয়নি।

কাতারগামী যাত্রী সবুজ জানান, দুইদিন আগে তিনি তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া থেকে বিমানবন্দরে এসেছেন। যেদিন তিনি বিমানের টিকিট কাটতে যান সেদিন এয়ারলাইন্সের লোকজন বলেছিল যে, করোনা পরীক্ষার জন্য আগে আগেই বিমানবন্দরে যেতে হবে। নইলে ফ্লাইট ধরতে পারবো না। সেই ভয় থেকে তিনি আগেই বিমানবন্দরে চলে এসেছেন। এখানে যাত্রীদের অধিক চাপ।

মানিকগঞ্জের বাসিন্দা কুয়েতগামী যাত্রী সৌরভ হোসেন জানান, তার করোনা পরীক্ষা করতে প্রায় ১৪ ঘণ্টা লেগেছে। প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে ভোগান্তি। ল্যাবের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এই ভোগান্তি হচ্ছে। যারা পরীক্ষা করছেন তারা কোনো কোনো যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=311004&cat=2