১১ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ২:৪৬

যানজটে রাজধানীবাসী নাকাল

ম্যারাথনে হাতিরঝিল বন্ধ

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে এমনিতেই রাজধানীর রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তাই হাতে একটু বেশি সময় নিয়েই সকাল ৯টায় এলিফ্যান্ট রোডের অফিসের উদ্দেশে রওনা হন বনশ্রী বাসিন্দা আকবর হোসেন। সাধারণত সিএনজি কিংবা উবারে হাতিরঝিল হয়ে যাতায়াত করেন তিনি। গতকাল হাতিরঝিল দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি বিকল্প রাস্তা ব্যবহারে বাধ্য হন। কিন্তু সব রাস্তায়ও লেগে ছিল তীব্র যানজট। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তার গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তীব্র যানজটের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে রাজধানীর সব মানুষকে। যদিও হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ ছিল; কিন্তু তার ‘চেইন রি-অ্যাকশন’ (গুচ্ছ প্রতিক্রিয়া) ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর প্রায় সব প্রধান সড়কে।

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত থেকে বনানী পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজট। এদিকে খিলক্ষেত থেকে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ অপর দিকে মগবাজার মহাখালী, সাতরাস্তা, কারওয়ান বাজারের উভয় পাশের সড়কে রয়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে মিরপুর, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগের যানজট তো রয়েছেই। গতকালের যানজটের দুর্ভোগ থেকে বাদ পড়েনি নগরের বিভিন্ন সড়কে বা গলিতে আটকেপড়া মানুষও।

সকাল পার হয়ে দুপুর গড়ালেও প্রতিটি সড়কে কর্মমুখী মানুষের অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা গেছে। সেই সঙ্গে বেশকিছু সড়ক বন্ধ থাকায় সড়কে যানবাহনও অতিরিক্ত দেখা যায়। যানজটে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানবাহনগুলো আটকে থাকায় অনেককে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ট্রাফিক অ্যালার্ট নামক পেজে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ যানজটে দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তারা বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল নিয়ে তথ্য দিয়েছেন, যাতে অন্যরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে সাবধান হন। তবে বিকেল ৪টার পর থেকে রাজধানীর সড়কগুলোয় যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয় বলে ট্রাফিক পুলিশ জানায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সোমবার হাতিরঝিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য ভোর সাড়ে ৪টার থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাতিরঝিল এলাকায় যানবাহন প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। সে সঙ্গে ম্যারাথন দল রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে দৌড় শুরু করে তা রাজধানীর কাকলী বনানী হয়ে কামাল আতাতুর অ্যাভিনিউ দিয়ে গুলশান-২ ও ১ নম্বর হয়ে হাতিরঝিলে প্রবেশ করে। এতে ওইসব সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এতে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। তবে ডিএমপি সোমবার দুপুর পর্যন্ত সড়কে ডাইভারসন ব্যবস্থাও রেখেছিল।

উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় ফারহান সাদিক। তিনি গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সকালে এসেই এ সড়কে তীব্র যানজট দেখে একটি পাঠাও মোটরসাইকেলে চড়ি। কিন্তু বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে অনেক সময় চলে যায়। এরপর সেখান থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে অফিসের দিকে রওনা দেই। দুপুরের কিছু আগে অফিসে পৌঁছেছি। সিএনজি অটোরিকশা চালকদের অনেকেই গাড়ি বন্ধ রেখে বসে ছিলেন। তারা জানান, দুপুরের পর সড়কে যানজটের চাপ কিছুটা কমলে যাত্রী তুলেন তারা।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের মহাখালী জোনের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর মো. সালাউদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ঢাকা ম্যারাথন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয় আর্মি স্টেডিয়াম থেকে হাতিরঝিলে। এ কারণে অনেক সড়ক সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। যে কারণে যানজট কিছুটা বেড়েছে। সেইসঙ্গে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অনেক প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য সড়কর অনেক ভাঙা ও খানা-খন্দ থাকায় ও সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতেও যানজট লেগে থাকে। তবে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে জনমানুষদের চলাচলে যানজট নিরসনের। তিনটার পরপরই সড়কগুলো স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন। উত্তরা থেকে মহাখালী আমতলী পর্যন্ত আসা বৈশাখী পরিবহনের যাত্রী নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত আসতে তীব্র যানজট পেয়েছি। বেশিরভাগ পথই ধীরগতিতে আসতে হয়েছে। সাধারণ মানুষের খুব কষ্ট হয়েছে। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গুলিস্তান থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত বাসে আসতে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানান আশিক মাহমুদ। তিনি বলেন, সকালে হাতিরঝিল সড়ক বন্ধ থাকার কথা শুনে দুপুরে বের হয়েও তীব্র যানজটের মধ্যে পড়েছি। এমন যানজট যে হেঁটে যেতেও অনেককে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গুলিস্তান থেকে উত্তর বাড্ডার বাসায় পৌঁছাতে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টারও বেশি। এ ধরনের অনুষ্ঠান ঢাকার বাইরে করা হলে সাধারণ মানুষকে কষ্টে পড়তে হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রুহুল আমিন বলেন, রাজধানীর বনানী থেকে মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজার এলাকার সড়কগুলোতে ছিল তীব্র যানজট। প্রতিদিনই যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকে তেজগাঁও লিংক রোড, বেগুনবাড়িসহ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার ভেতরের সব গলিপথে। কিন্তু সোমবার ছিল অনেক বেশি। দীর্ঘসময় এসব এলাকায় যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়।

https://www.dailyinqilab.com/article/452110