১১ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ২:১৯

তালগোল অবস্থা ডিসি নিয়োগে!

ডিসি নিয়োগে তালগোল পাকিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি ১১ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয় সরকার। নিয়োগের আগে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তাদের ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মতাদর্শ এমনকি পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই-বাছাই করা হয়। তার পরেও নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পর একজন কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যোগদান করতে পারছেন না। এর আগে মেহেরপুর জেলার ডিসি নিয়োগ নিয়েও এমন ঘটনা ঘটে।

এ দিকে এবারের প্রজ্ঞাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচজন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়। এতে বঞ্চিত হয়েছেন অন্য মন্ত্রণালয়ের যোগ্য কর্মকর্তারা। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের অভিযোগÑ ডিসি নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কুক্ষিগত করে ফেলেছে। ফলে মাঠ প্রশাসনে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখলেও তারা ডিসি হতে পারছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিএস ২৪ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যারা মাঠ প্রশাসনে কাজ করেছি তাদের জন্য জেলা প্রশাসকের পদটি অবশ্যই কাক্সিক্ষত। দীর্ঘ দিন ধরে ফিটলিস্টে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খবর নিচ্ছিল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছিল সবগুলো সংস্থা থেকে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যাদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে তাদেরই কেবল ডিসি নিয়োগ দেয়া হবে। নিরপেক্ষ অফিসাররা নিজেদের অবস্থান বদলাতে সময় নেন না। তাই তাদের ওপর ভরসা করতে চায় না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু নিয়োগের পর একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠল; তাহলে কেমন যাচাই-বাছাই করলেন নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা মাঠ প্রশাসনে দেশের বিভিন্ন জেলায় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি; কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই দক্ষতার মূল্যায়ন করছে না। ১১ জন ডিসির মধ্যে পাঁচজন একটি মন্ত্রণালয় থেকেই দেয়া হয়েছে। অথচ অন্য মন্ত্রণালয়গুলোতে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা মাঠ প্রশাসনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এই নিয়োগে যোগ্যতার বিচার না করে সিনিয়র অফিসাররা নিজস্ব ফোরামকেই বিবেচনা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বুধবার ১৩ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর মধ্যে ১১ জেলায় নতুন ডিসি ও বর্তমান দু’জন ডিসির জেলা পরিবর্তন করা হয়েছে। ডিসি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রীদের পর্যায় থেকে নাফিসা আরেফীন সম্পর্কে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শামসুন্নাহার হল ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনু বিভাগের উপসচিব নাফিসা আরেফীনকে নীলফামারীর ডিসি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি হয়; কিন্তু তার বিরুদ্ধে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের জন্য আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ডাকা হয়নি। এ ছাড়া গতকাল সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পাওয়া পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে চারজনকে মন্ত্রণালয় থেকে অবমুক্ত করা হলেও নাফিসা আরেফীনকে অবমুক্ত করা হয়নি। ফলে তিনি যোগদান করতে পারছেন না এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এর আগে গত ২৫ জুন ঢাকাসহ ৯ জেলায় ডিসি পদে রদবদল করা হয়। এ সময় মেহেরপুরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো: শহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। এর এক সপ্তাহ পর কৃষিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানকে মেহেরপুরের নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করে। একই সাথে ডিসি হিসেবে শহিদুল ইসলামের বদলির আদেশও বাতিল করা হয়।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ) মো: আনিসুর রহমান মিয়া বলেন, এ বিষয়ে সচিব স্যার ও মিডিয়া সেল কথা বলবে। আমার জায়গা থেকে বলার এখতিয়ার নেই। কেন তার নিয়োগ বাতিল হচ্ছে আমি জানি না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না একজন কর্মকর্তাকে পদায়নের প্রজ্ঞাপনের পর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তা বাতিল করা হয়েছে। অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। যদি রাজনৈতিক কারণেই পদায়ন বাতিল করা হয় তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। ডিসি পদে নিয়োগের আগে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার পর মৌখিক অভিযোগে কারো পদায়ন বাতিল করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এটা প্রশাসনে মন্দ নজির সৃষ্টি করবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/635712