৮ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ১০:৩৬

পোশাক খাতে ওমিক্রনের ছায়া

করোনা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত। চলতি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় চিন্তিত পোশাক মালিকরা। ইউরোপের দেশগুলোতে সংক্রমণ বাড়ায় এরইমধ্যে থেমে গেছে পোশাকের ক্রয়াদেশ। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, ক্রেতারা নতুন করে রপ্তানি আদেশ না দিলে এবং করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পোশাক খাতে আবারো বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন মালিকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা বিপুল পরিমাণ পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে আবার অর্ডার ফিরেছে।

এখন নতুন করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিধিনিষেধ আরোপ হলে দেশের পোশাক খাত আবারো সংকটে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলছিলেন, ওমিক্রনের কারণে এখন পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাতিল না হলেও আমরা শঙ্কিত। কারণ দ্রুত করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে। এছাড়া ইউরেপের অন্য দেশেও দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এটা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি, কারণ আমাদের বেশিরভাগ ক্রেতাই ইউরোপের। তাদের যদি চাহিদা না থাকে তাহলে তো আমরা তাদেরকে জোর করে দিতে পারবো না। তবে এখন পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাতিল হয়নি, কিন্তু ক্রয়াদেশ আর হচ্ছে না। ক্রেতাদের আগের মতো তৎপরতা এখন নেই।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস আমাদের খুব ভালো গেল। এখন যদি ঝামেলা না হয় তাহলে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে সেটা আমরা ছাড়িয়ে যেতে পারবো। আর যদি করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয় তাহলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ আমাদের তো শুধু অর্ডার আসলেই চলবে না, সেটা এক্সপোর্ট করতে হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা বুঝতে পারছি না যে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে। আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। ক্রেতারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

বিজিএমই’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি আয় ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে ছিল ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। বিজিএমইএ’র বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাসিক রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর ডিসেম্বরে ৪০৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার সমমূল্যের নিট (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) ও ওভেন (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এতে ৬ মাসের সার্বিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৮.০২ শতাংশ। শুধু নিটে ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং ওভেনে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি উভয়ই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে। ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার। জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে নিট পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অন্যদিকে, একই সময়ে ওভেন পণ্যের রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৭৬৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। গতবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে শুধু ডিসেম্বর মাসে নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক মাসে ২১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নিটওয়্যার এবং ওভেন পোশাক ১৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=310385&cat=3