৫ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার, ৬:২৭

সংক্রমণ বাড়ছে, ওমিক্রন শনাক্তে কি ব্যবস্থা?

দেশে ফের দ্রুতই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। দৈনিক শনাক্ত এখন প্রায় ৪ শতাংশের ঘরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭৫ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। একইভাবে মৃত্যুও বাড়ছে। এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি। এমন অবস্থায় করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ওমিক্রন ধরন চিহ্নিত করতে কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তবে এই ধরন চিহ্নিত করতে জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রয়োজন।

খরচ বেশি হওয়ায় ল্যাবগুলো নমুনার সিকোয়েন্সিং করতে আগ্রহী কম। নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়।

দেশে ওমিক্রন শনাক্তে কী ব্যবস্থা আছে জানতে চাইলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রন শনাক্ত করতে হয়।

বাংলাদেশে শুধু ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং চট্টগ্রামে ভেটেনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। এর কিট দেশে এখনো আসেনি। এই জনস্বাস্থ্যবিদ দেশের প্রতিটি বিভাগে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, টিকায় তেমন অগ্রগতি নেই। তাই এক্ষেত্রে অগ্রগতি বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু নির্দেশনা দিলেই হবে না। কার্যকর করতে হবে।

কীভাবে ওমিক্রন শনাক্ত হয় জানতে চাইলে আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ওমিক্রন জিনোম সিকোয়েন্সিং ছাড়া জানা সম্ভব নয়। বাংলাদেশেও জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। তবে এতে খরচ বেশি। তাই ল্যাবগুলো নমুনার সিকোয়েন্সিং করতে আগ্রহী কম। নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। তিনি জানান, বৃটেনে মোট নমুনার ২০ শতাংশ সিকোয়েন্সিং করা হয়। সাউথ আফ্রিকায় অনেক নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে। ফলে তাদের ওখানে বেশি ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বাংলাদেশের ঢাকায় ওমিক্রন ক্লাস্টার ভিত্তিক সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তা দিন দিন বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। তবে দেশে এখন যে সংক্রমণ হচ্ছে তাতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নতুন শনাক্ত ৭৭৫ জন, ৬ জনের মৃত্যু: দেশে ফের দ্রুতই প্রতিদিনই দৈনিক করোনার শনাক্ত বাড়ছেই। বাড়ছে মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ৮৭ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৭৭৫ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৬৭৪ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৫ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে ৮৫২টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৭৪০টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৯ হাজার ৮৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৬ জনের মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৭ হাজার ৯৬৪ জন এবং নারী ১০ হাজার ১২৩ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৬ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন বাসিন্দা রয়েছেন। মারা যাওয়া ৬ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৩ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩ জন মারা গেছেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=309924&cat=2