৩ জানুয়ারি ২০২২, সোমবার, ৪:৫৪

নষ্ট ইঞ্জিনে চলছিল অভিযান-১০

জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি বিআইডব্লিউটিএ

ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই চলত ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ এমভি অভিযান-১০। বিষয়টি বরগুনার বিআইডব্লিউটিএর নৌবন্দর কর্মকর্তা জানলেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এর আগেও দুর্ঘটনা কবলিত হয় লঞ্চটি। সে যাত্রায় অর্ধ সহস্রাধিক যাত্রী প্রাণে রক্ষা পেলেও যাত্রীদের অভিযোগ আমলেই নেয়া হয়নি।

দুর্ঘটনার আগে প্রায় প্রতিদিন বরগুনার উদ্দেশে ঢাকার সদরঘাট ত্যাগ করে দু’টি লঞ্চ। যার একটি ছাড়ে বিকেল সাড়ে ৫টায় আর অপরটি সন্ধ্যা ৬টায়। বরগুনা থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে বরগুনা কে আগে পৌঁছতে পারে তা নিয়ে লঞ্চের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা।

জানা যায়, গত ১২ আগস্ট ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে এমনই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা অংশ নেয় এমভি অভিযান-১০। পরে ঝালকাঠির বিষখালী নদীর একটি চরে উঠে কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় লঞ্চটির। সে যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পান লঞ্চের অর্ধ সহস্রাধিক যাত্রী। গত ২৩ ডিসেম্বরও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই স্বভাবিক থেকে অনেক বেশি গতিতে চলছিল লঞ্চটি। এর ফলে ইঞ্চিন বিস্ফোরিত হয়ে ঘটে নৌ পথে দেশের ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

২৩ তারিখ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা আশিক, সাদিক, সাব্বিরসহ কয়েকজন যাত্রী জানান, বুড়িগঙ্গা নদী পারি দেয়ার পর পরই অস্বাভিকভাবে গতি বেড়ে যায় লঞ্চটির। এতে লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ফ্লোট গরম হয়ে যায় এবং ইঞ্জিনে বিকট শব্দ হতে থাকে। বিষয়টি চালক ও অন্যান্য স্টাফদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়াও মাঝ নদীতে গতি বাড়ি পাল্লায় লিপ্ত হয় এই রুটের লঞ্চগুলো।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস আগে মাঝ নদীতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গতিতে চলায় ঝালকাঠির একটি চরে উঠে কাত হয়ে যায় এমভি অভিযান ১০। এতে কোনো হতাহত না হলেও কয়েক শ’ যাত্রী পড়ে ভোগান্তিতে। লঞ্চের এমন বেহাপনা চলতে থাকলে ভবিষ্যতেও দুর্ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটির কথা আগেই জানতেন বরগুনার নৌবন্দর কর্মকর্তা। এ ছাড়াও লঞ্চটির অসুস্থ প্রতিযোগিতার অভিযোগও আমলে নেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বরগুনা নৌবন্দর কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, লঞ্চটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। তবে এসব দেখার দায়িত্ব হচ্ছে নৌপরিবহন অধিদফতরের। তাদের ছাড়পত্র ছাড়া নদীতে নৌযান নামানো যায় না। ত্রুটিযুক্ত ইঞ্জিন তারা কিভাবে পারমিশন দিল সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে।
কর্তৃপক্ষের অবহেলা, গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্যই এমন দুর্ঘটনার অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই এর দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না বলেও দাবি তাদের।

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য তারিক বিন আনসারী সুমন বলেন, এই দুর্ঘটনার দায় কোনোভাবেই কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারবে না। তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় এবং গাফেলতিতে এসব দুর্ঘটনা হচ্ছে। তাদের যদি এখনো টনক না নড়ে তাহলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। আমরা এসব খামখেয়ালিপনা বন্ধের দাবি জানাই। যাত্রীদের অভিযোগ অগ্রাহ্য করা গুরুতর অন্যায়। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস স্থানীয় সংসদ সদস্যের।

এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফেলতিতে এসব প্রাণহানি ঘটেছে। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করব। শিগগিরই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা-বরগুনা নৌরুটের বরগুনাগামী ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, এদের মধ্যে ৩৭ জনই বরগুনার। এ ছাড়াও আহত রয়েছেন শতাধিক যাত্রী, এখনো নিখোঁজ আছে অনেকে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/633927