২ জানুয়ারি ২০২২, রবিবার, ১:২২

সংশোধিত ড্যাপে দেশের সব জমি মালিকই ক্ষতিগ্রস্ত হবে

সংশোধিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়ন হলে স্থাপনা নির্মাণ করবে দেশের এমন প্রতিটি জমির মালিকই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ সংশোধিত এই ড্যাপে কমে যাবে ফ্লোর স্পেস, কমবে উচ্চতা। ঘন বসতিপূর্ণ বাংলাদেশে এক সময় সবচেয়ে দামি হবে জমি। কারণ দিন দিন জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জমির পরিমাণ শুধুই কমছে। ফলে ভবিষ্যতে যার এক টুকরো জমি থাকবে তিনি ভাগ্যবান হিসেবে বিবেচিত হবে। ভবিষ্যতে জমির দাম প্রচণ্ড রকমভাবে বেড়ে যাবে। তাই এখনই সময়, বর্তমানে যে জমি আছে তা যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করার । এখনই সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া উচিত। এমন অভিমত জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীরা।
জমিতে স্থাপনা নির্মাণের জন্য ২০০৮ সালে জারি করা রাজউকের একটি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা রয়েছে। ওই বিধিমালার কারণে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া চারদিকে জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ হচ্ছিল। এতে একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য। ফার এরিয়া রেশিও (এফএআর বা ফার) বাস্তবায়নের কারণে ভবনকে উপরে তুলতে দেয়া হয়। এটা সবাই মেনে নিয়েই ভবন নির্মাণ করে আসছিলেন। কিন্তু সংশোধিত ড্যাপে পূর্বের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা কাটছাঁট করার অভিযোগ উঠেছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবও এতে আপত্তি জানিয়েছে।
ইতোমধ্যে সংশোধিত ড্যাপ মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়ে চলে গেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে তা সংসদীয় কমিটিতে যেতে পারে আরো অধিকতর বিশ্লেষণের জন্য। সেখানে না গেলে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে যে অবস্থায় ড্যাপ জমা দেয়া হয়েছে তাতে জমির মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব ইতোমধ্যেই আপত্তি জানিয়েছে। রিহ্যাবের আপত্তির জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছিলেন, রিহ্যাবের সাথে কথা বলেই সংশোধিত ড্যাপ চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু রিহ্যাবের নেতৃবৃন্দ বলছেন, মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত ড্যাপে কি আছে তারা তা জানেন না। এ ব্যাপারে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত ড্যাপে কি আছে আমি বলতে পারব না। আমাদের জানানো হয়েছে আমরা যে দাবিটি করেছিলাম তা কনসিডার করা হবে। তবে কতটুকু কনসিডার করা হয়েছে তা জানি না।
রিহ্যাবের আপত্তির ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম গত ৩০ ডিসেম্বর বলেছেন, সংশোধিত ড্যাপের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরে সংশোধন করা হবে। কোনো পক্ষের ক্ষতি করার জন্য ড্যাপ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে রিহ্যাবের সভাপতি বলেন, সংশোধিত ড্যাপ গেজেট করে প্রকাশ হলে আবাসন ব্যবসায়ীরা যত না ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জমির মালিকরা। তিনি বলেন, ৫ কাঠা জমিতে আগে ১২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোর স্পেস পাওয়া যেত। কিন্তু সংশোধিত ড্যাপ অনুমোদিত হলে একই জমিতে পাওয়া যাবে মাত্র ৯ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর স্পেস। আগে গুলশানে এক বিঘা জমিতে ৮৪ হাজার বর্গফুটের ফ্লোস স্পেস পাওয়া যেত। সংশোধিত ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ৩১ হাজার বর্গফুট হ্রাস পেয়ে ৫৩ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর স্পেস পাওয়া যাবে। তবে ডেভেলাপাররা এক বিঘাকে দুই ভাগ করে ভবন উঠালে এক লাখ বর্গফুটের স্পেসই পাবেন কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবে জমির মালিক। শামসুল আলামিন বলেন, প্রকৃতপক্ষে সংশোধিত ড্যাপের বিধানটি বাস্তবসম্মত হবে না।
রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, নতুন করে ড্যাপে সংশোধন করা হলে তা যৌক্তিক হবে না। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। চিঠি দেয়া হয়েছে সকল সংসদ সদস্যকে। এমনকি দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার মেয়রকেও চিঠি দেয়া হয়েছে যেন তারা ব্যাপারটি বুঝতে পারেন। যার বেশি জমি আছে তিনি এতে খুব বেশি অসুবিধা ভোগ করবেন না। কিন্তু যার সামান্য জমি আছে অথবা কিনেছেন বাড়ি করার জন্য তিনি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/633696